• টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১
  • " />

     

    নামিবিয়াকে উড়িয়েই আসগরকে 'গার্ড অব অনার' দিল আফগানিস্তান

    নামিবিয়াকে উড়িয়েই আসগরকে 'গার্ড অব অনার' দিল আফগানিস্তান    

    সুপার ১২, আবুধাবি (টস- আফগানিস্তান/ ব্যাটিং)

    আফগানিস্তান ১৬০/৫, ২০ ওভার (শেহজাদ ৪৫, নাবি ৩২, আসগর ৩১, লফটি-ইটন ২/২১

    নামিবিয়া ৯৮/৯ (উইসা ২৬, হামিদ ৩/৯, নাবিন ৩/২৬)

    ফলাফলঃ আফগানিস্তান ৬২ রানে জয়ী


    স্বল্প সম্পদে বড় অর্জনের উদাহরণ দেখিয়ে এসেছে আফগানিস্তান। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে এসে টানা তিন জয়ে স্বপ্নের সময় পার করা নামিবিয়ার অনুপ্রেরণাও তাই হতে পারে আফগানিস্তান! সেই আফগানিস্তান এখন কেন সেমিফাইনালে চোখ রাখতে পারে সেটিই দেখিয়ে দিল নামিবিয়াকে ৬২ রানে হারিয়ে। আফগানিস্তানের সেমিফাইনালের পথে নামিবিয়ার বিপক্ষে অবশ্য জয় ছাড়া অন্য কোন ফলাফলের জায়গা ছিল না! আফগানিস্তান ক্রিকেটের কিংবদন্তি আসগর আফগানের অবসরের ঘোষণা এ ম্যাচে আফগানদের জয়টাকে আরও গুরুত্ববহ করে তুলেছে। ষোলো বছর ধরে আফগানিস্তান ক্রিকেটের সেবা করে যাওয়া আফগানকে রশিদ-নাবিরা জয় দিয়েই বিদায় দিতে পেরেছেন। শেহজাদ-জাজাইয়ের ভালো শুরুর পর আসগর-নাবির ব্যাটে শেষটাও ভালো করলে আফগানিস্তান নামিবিয়াকে ১৬১ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল। আগের তিন জয়েই লক্ষ্যতাড়া করতে পারলেও এ ম্যাচে নামিবিয়া পারেনি। স্পিনের জন্য জেনে যাওয়া আফগানিস্তানের পেসারদের কাছেই তারা আটকে গেছে। আফগান পেসাররা মিলে ৮ উইকেট নিয়েছেন এ ম্যাচে, আফগানিস্তানের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট পেসাররা এত বেশি উইকেট নিলেন এই প্রথম। 

    নামিবিয়ার জয়ের জন্য পাওয়ারপ্লেতে ভালো শুরুর বিকল্প ছিল না। ‘আনফিট’ মুজিব এ ম্যাচে না খেললেও পরে রশিদের স্পিন তাদের জন্য হুমকি ছিল। আফগান স্পিনত্রয়ীর আরেক সদস্য নাবিকে যদিও ভালোই সামলেছেন নামিবিয়ার ব্যাটাররা। তবে নাবিন তার দুই ওভারে দুজনকে আউট করে নামিবিয়ার ১৬১ রান লক্ষ্যতাড়ার কঠিন কাজকে দুঃসাধ্যই বানিয়ে তুলেছেন! উইলিয়ামস খাড়া ক্যাচ তুলে দিয়ে ১ রানে ফেরার পর লিঙ্গেনও নাবিনের স্লোয়ারে ধোঁকা খেয়ে ফিরে যান সাজঘরে। বল হাতে ২১ রানে ২ উইকেট নেওয়া লফটি-ইটন ব্যাট হাতে তিনে নেমে বাকিদের তুলনায় স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন, তবে তিনিও গুলবাদিনের স্লোয়ারে বোল্ড হয়ে গেলে নামিবিয়া ষষ্ট ওভারেই ২৯ রানে হারিয়ে ফেলে তিন উইকেট। 

    রশিদ এসে প্যাডল সুইপ খেলতে যাওয়া গ্রিনকে বোল্ড করে দিয়ে ৩৬ রানে ৪ উইকেট ফেলে দিয়ে নামিবিয়াকে ম্যাচ থেকে ছিটকেই দেন। তখনও নামিবিয়ার অন্যতম তিন ভরসা যদিও বাকি। একপ্রান্তে রশিদকে উইকেট না দিলেও অন্যপ্রান্তে গতির ঝড় তুলছিলেন হামিদ হাসান। এক ওভারেই ফিরিয়ে দিয়েছেন এরাসমাস ও স্মিটকে, সে ওভারে প্রথম পাঁচ বলই ইয়র্কার করেছিলেন। একশো চল্লিশের বেশি গতির সেসব ইয়র্কারের মধ্যে একটি এরাসমাসকে ফেলে দিয়ে ভেঙ্গে দেয় তার স্টাম্প। শেষ বলটায় হামিদের বাউন্সার ছাড়তে গিয়ে স্মিটের গ্লাভসে লেগে ক্যাচ চলে যায় কিপারের হাতে। 

    নামিবিয়ার আরেক ভরসা উইসা তখনও ছিলেন ক্রিজে। রশিদ ১৩ রানেই তার বোলিং কোটা পূর্ণ করে আর কোন উইকেট পাননি। টি-টোয়েন্টিতে তাই রশিদের চারশ উইকেটের অপেক্ষাটা আরও বাড়লো! উইসা থেকেছেন ১৭তম ওভার পর্যন্ত, ৩০ বলে ২৬ রান করে হামিদের বলে বোল্ড হয়ে ফেরার সময় নামিবিয়ার সংগ্রহ মোটে ৮০ রান। শেষমেশ তারা বিশ ওভার খেলে ৯৮ রানেই থামলে আফগানিস্তান ম্যাচটা জিতে নিয়েছে ৬২ রানে। 

    তার আগে আফগান ওপেনাররা আক্রমণাত্মক মনোভাবে খেলে গেছেন এ ম্যাচেও, তবে সতর্কতার সাথে। নামিবিয়ার বাঁহাতি পেসারদের দেখভাল করার দায়িত্বটা শেহজাদ জাজাইয়ের কাধেই দিয়ে দিয়েছিলেন। প্রথম পাঁচ ওভারের চারটিই খেলেছেন জাজাই। ফুল লেংথে, বাইরে পেলেই বলকে সীমানা ছাড়া করতে ভুল করেননি তিনি। ট্র্যাম্পেলম্যান স্কটল্যান্ডকে গুড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রথম ওভারেই, এ ম্যাচে তিনি বিবর্ণ থেকেছেন জাজাইয়ের কাছে। দুই ওভারে জাজাইয়ের হাতে চার বাউন্ডারি খেয়ে মোট দিয়েছেন ২০ রান। ১১ রানের প্রথম ওভার শেষে স্মিট ও উইসা মিলে দিয়েছেন মাত্র ৬ রান। ট্র্যাম্পেলমানের ওভার থেকে ৯ রানের পর ফ্রাইলিংকের ওভার থেকে জাজাইয়ের অবদানে আফগানিস্তান পায় ১১ রান। 

    এতক্ষণ জাজাইকে স্ট্রাইক দেওয়ার কাজে মনোনিবেশ করা শেহজাদ পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে উইসাকে চারের পর মারেন ছয়। আফগানিস্তান পাওয়ারপ্লেতেই তুলে নেয় ৫০ রান। সেই সাথে হারায়নি কোন উইকেটও, এই বিশ্বকাপে আবুধাবিতে যা প্রথম। অবশ্য বেশিক্ষণ উইকেটবিহীন থাকতে পারেনি তারা, সপ্তম ওভারে স্মিটের বলে স্কোয়ার লেগে ধরা খেয়ে জাজাই ফিরে যান ২৬ বলে ৩৩ রানে। লেগ স্পিনার লফটি-ইটন এসে এরপর টার্নে চুপ রেখেছেন আফগানদের। গুরবাজ এসে সময় নিয়েছেন, কিন্ত ৭ বলে ৪ রান থাকা অবস্থায় ইটনের বলে সুইপ খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে তাকে ফিরতে হয়েছে প্যাভিলিয়নে। যার ফলে প্যাভিলিয়ন থেকে বাইজ গজের পথ ধরেছেন আসগর আফগান। আফগানিস্তানের জার্সি গায়ে শেষবারের মতো! ‘গার্ড অব অনার’ পেরিয়ে ঢুকলেন ব্যাট হাতে। ১৯তম ওভারে আরেকটি ‘গার্ড অব অনার’ পেরিয়ে যখন ফিরছেন প্যাভিলিয়নে, তখন তার জীবনের শেষ ইনিংস লেখা হয়ে গেছে, ২৩ বলে ৩১। এরাসমাস, ট্রাম্পেলমানদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিচ্ছিলেন আফগান, সীমানার ধারে গুলবাদিন দুই হাত প্রসারিত করে আলিঙ্গনের জন্য অপেক্ষারত। বাকি সদস্যরা ব্যাট উঁচিয়ে ধরে ‘ধন্যবাদ’ জানানোর জন্যই যেন প্রস্তত! ষোলো বছর ধরে আফগান ক্রিকেটকে সেবা দিয়ে যাওয়া আসগরকে একটা জয় দিয়েই বিদায় দেওয়াটাই মানায়!

    নাবি তার দীর্ঘদিনের মাঠের সহযোদ্ধাকে তার শেষ ইনিংসে বিদায় জানিয়ে ছিলেন ক্রিজে, তখনও যে তার কাজ বাকি। উইসার ওভারে দুই চার মারলেন, সে ওভারে এলো ১২ রান। ৪৫ রানে স্কুপ করতে গিয়ে শেহজাদের ফেরার পর নাজিবও ৭ রানেই ফিরে গেলে নাবি আর আসগর ইনিংস এগিয়ে নিয়ে গেছেন। ১৬ ওভার শেষেও আফগানিস্তানের স্কোর ছিল ১১৪। আসগরের ব্যাটের পর নাবির ১৭ বলে ৩২ রানের ইনিংসে শেষমেশ তারা শেষ চার ওভারে ৪৬ রান এনে ১৬০ রানের পুঁজি গড়ে। নাবিন তার ক্যারিয়ার শুরু করেছেন আসগরের নেতৃত্বেই, ম্যান অব দ্য ম্যাচ পেয়ে আসগরকেই উৎসর্গ করেছেন সেটি। এবং তার অবদানের জন্য জানিয়েছেন, ধন্যবাদ!