• টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১
  • " />

     

    কোহলিদের বিদায়ঘণ্টা প্রায় বাজিয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন উইলিয়ামসনরা

    কোহলিদের বিদায়ঘণ্টা প্রায় বাজিয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন উইলিয়ামসনরা    

    সুপার ১২, দুবাই (টস- নিউজিল্যান্ড/ বোলিং)

    ভারত ১১০/৭, ২০ ওভার (জাদেজা ২৬*, হার্দিক ২৩, রাহুল ১৮, বোল্ট ৩/২০, সোধি ২/১৭, সাউদি ১/২৬)

    নিউজিল্যান্ড ১১১/২, ১৪.৩ ওভার (মিচেল ৪৯, উইলিয়ামসন ৩৩*, গাপটিল ২০, বুমরাহ ২/১৯)

    ফলাফল: নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী


    ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে “ভার্চুয়াল কোয়ার্টার ফাইনাল” জিতল নিউজিল্যান্ড, অক্ষুণ্ণ রাখল ভারতের বিপক্ষে যেকোনো আইসিসি টুর্নামেন্টে নিজেদের ১৮ বছর ধরে অপরাজিত থাকার রেকর্ড। প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং পারফর্ম্যান্সে ভারতকে বাক্সবন্দি করে ১১০ রানে আটকে ফেলে নিউজিল্যান্ড। ড্যারিল মিচেলের ৪৯ রানে অনায়াসে সেই লক্ষ্য তাড়া করে ৮ উইকেটের জয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপে ঘুরে দাঁড়াল কেন উইলিয়ামসনের দল। 

    আগের দিন অস্ট্রেলিয়ার সামান্য পুঁজি যেভাবে বেধড়ক পিটুনিতে টপকিয়ে গিয়েছিলো ইংল্যান্ড সেরকম চিন্তা বোধহয় নিউজিল্যান্ডের ছিল না। ড্যারিল মিচেল-মার্টিন গাপটিল জুটি ভালো বলকে যোগ্য সম্মান দেওয়ার মানসিকতা নিয়েই শুরু করেছিলেন। তবে চক্রবর্তীর করা ৩য় ওভার থেকেই দ্রুত রান তোলার ইঙ্গিত দেন গাপটিল। তারই সুযোগ নিয়ে দারুণ এক ওভার করে স্লোয়ারে বিভ্রান্ত করে জাসপ্রিত বুমরাহ ২০ রানে ফেরান গাপটিলকে। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে রবীন্দ্র জাদেজা আক্রমণে এলে গাপটিলের পদাঙ্ক অনুসরণ করে দুই চার এক ছয়ে ১৪ রান নেন মিচেল। পাওয়ারপ্লে শেষে নিউজিল্যান্ড তোলে ৪৪ রান।

    পাওয়ারপ্লের পরেও কেন উইলিয়ামসন ধীরেসুস্থে খেললেও মিচেল যেন দ্রুত ম্যাচ শেষ করার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। বাউন্ডারির পসরা সাজিয়ে টী-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফিফটির পথেই ছুটছিলেন। রান রেট বাড়াতে দ্রুত ম্যাচ শেষ করার তাড়না থেকেই বুমরাহকে মাঠছাড়া করতে গেলে অবশ্য তিনি থামেন ৩৫ বলে ৪৯ রান করেই। মিচেল ফিরলেও ৩১ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত থেকে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসন; সেই সাথে কোহলির দলের সেমিফাইনালের স্বপ্নও যেন আরও ধুসর হয়ে গেল টানা দুটি নিদারুণ পরাজয়ে।  

    এর আগে টসে হেরে শুরুটা মোটেও আশাব্যাঞ্জক হয়নি। ট্রেন্ট বোল্ট-রোহিত শর্মা দ্বৈরথটা বহুল প্রতীক্ষিত হলেও রোহিতের বাঁহাতি পেসারের বিপক্ষে দুর্বলতার কথা ভেবেই হয়ত এদিন ভারত ওপেন করায় ইশান কিষানকে দিয়ে। সেই বোল্টের কাছেই ৩য় ওভারে কিষান ফিরলে পরের বলেই উইকেট এসে ফিরতে পারতেন রোহিত। লং লেগে অ্যাডাম মিলনেকে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ তৈরি করে দিয়েও বোল্টের শিকার হওয়া থেকে বেঁচে যান রোহিত। ৫ম ওভারে ১৫ রান তুলে লোকেশ রাহুল যখনই লাগামছাড়া হতে যাচ্ছিলেন তখনই সাউদির শিকার হয়ে ১৮ রান করে থামেন তিনি। পাওয়ারপ্লেতে ঐ দুই উইকেট হারিয়ে ভারত তোলে ৩৫ রান।

    পাওয়ারপ্লের পরে ভারত দুই স্পিনারের চাপে একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়ে। এক প্রান্তে মিচেল স্যান্টনার কিপটে বোলিং করলে আরেক প্রান্তে লেগ স্পিন-গুগলির পসরা সাজিয়ে ভারতকে কোণঠাসা করে ফেলেন টি-টোয়েন্টিতে ভারতের যম ইশ সোধি। সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে না পেরে সোধির আঘাতে রোহিত ফেরার পরে সোধির বিপক্ষে প্রতি আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়ে থামতে হয় ভিরাট কোহলিকেও। উইকেটে এসে ধুঁকতে থাকা ঋশাভ পান্টও কিছুক্ষন পর ফেরেন অ্যাডাম মিলনের গোলায় স্টাম্প খুইয়ে। টুর্নামেন্টে প্রথম বারের মত মাঝের ওভারগুলোতে (৭-১৫) কোনও দল কোনও বাউন্ডারি বের করতে ব্যর্থ হয়। ৭০ বল পর ১৭তম ওভারে শেষমেশ হার্দিক পান্ডিয়ার ব্যাট থেকে আসে বাউন্ডারি! 

    তবে শেষদিকে বাউন্ডারির খোঁজ করতে গিয়ে বোল্টের বলে লং অফে ক্যাচ দিয়ে ২৪ বলে ২৩ রানে থামেন হার্দিক। উইকেটে এসেই ঐ ওভারেি ফেরেন শার্দুল ঠাকুরও। শেষ ওভারে গিয়ে ১০০ স্পর্শ করার পর রবীন্দ্র জাদেজা সাধ্যমত চেষ্টা করে যান, মারেন ছয়ও। শেষ বলে সোধির হাতে সোজা ক্যাচ তুলে দিয়ে বেঁচে গেলে ১৯ বলে ২৬* রানে অপরাজিত থাকেন তিনি, ভারতকে নিয়ে যান ১১০ পর্যন্ত। দিনশেষে সেই লক্ষ্যকে ছেলেখেলা বানিয়ে ৩৩ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় কিউইরা। সেই ২০০৩ বিশ্বকাপে শেষ ভারতের বিপক্ষে কোনও আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতের কাছে হেরেছিল নিউজিল্যান্ড; এরপর থেকেই জয়ের সেই ধারায় ছেদ পড়ল না এবারও।