গাপটিল-ঝড়ের পর লড়াই করেই কিউইদের কাছে হারল স্কটল্যান্ড
সুপার ১২, দুবাই (টস-স্কটল্যান্ড/ বোলিং)
নিউজিল্যান্ড ১৭২/৫, ২০ ওভার (গাপটিল ৯৩, ফিলিপস ৩৩, শরিফ ২/২৮, ওয়াট ১/১৩)
স্কটল্যান্ড (লিস্ক ৪২, ক্রস ২৭, বোল্ট ২/২৯)
ফলাফলঃ নিউজিল্যান্ড ১৬ রানে জয়ী
গ্রিভস তখন বল করছিলেন, উইকেটের পেছন থেকে ম্যাথিউ ক্রস বলছিলেন, ‘পুরো ভারত তোমার সাথে আছে’। ক্রসেরও অজানা নয়, ভারতীয় দর্শকদের যে এখন স্কটল্যান্ডের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে! কিন্ত শেষমেশ কোন অঘটন ঘটেনি, ম্যাচটা নিউজিল্যান্ডই জিতে নিয়েছে ১৬ রানে। স্কটল্যান্ড বোলিংয়ে শুরু আর শেষটা করেছিলো ভালোই, কিন্ত মাঝের কয়েকটি খরুচে ওভার তাদের কাজটা কঠিন করে দিয়েছে। ১৭৩ রানের লক্ষ্যতাড়ায় নেমে তারা থেমেছে ১৬ রান বাকি থাকতেই। আর দ্রুত উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ডকে গাপটিল বাঁচিয়েছেন ৯৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে।
অবশ্য লক্ষ্যতাড়ায় নেমে সাউদি-বোল্টের সুইং ভালোই সামলেছেন কোয়েটজার। কিন্ত বোল্টের নাকল বলে ধোঁকা খেয়ে খাড়া ক্যাচ তুললে তার ইনিংসটা ১৭ রানের বড় হতে পারেনি। অপর প্রান্তে থেকে কোয়েটজারের চারটি চারের মার দেখা মানসি এরপর মারেন দৃষ্টিনন্দন এক ড্রাইভ। ক্রস এসে মিলনের পেসে পরাস্ত হয়ে পুরো ওভারই দিয়ে দেন ডট। মিলনে যখন এরপর তার দ্বিতীয় ওভার করতে আসেন, ক্রস তাকে পরপর পাঁচ বলে মারেন পাঁচ চার। সোধির প্রথম ওভারেই মানসি এরপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন, টানা দুই বল স্লগ সুইপে সীমানা ছাড়াও করতে সমর্থ হন, কিন্ত এরপর আবার সেটি করতে গিয়ে ফুলটসে লং অনে সাউথির অসাধারণ ক্যাচের শিকার হয়ে ফিরে যান ২২ রানে। স্যান্টনার এক প্রান্তে রান আটকানোর কাজ করে গেছেন, দুই ওভারে তিনি ৭ রান দিলে পাওয়ারপ্লেতে ৪৮ রান আনা স্কটল্যান্ডের স্কোর দশ ওভার শেষে ৭৬ পাড়ি দেয়নি।
সাউদি ১১তম ওভারে এসে ফিরিয়ে দেন ক্রসকে। সাউদির সে বলটা পিচ করে ভেতরে ঢুকে ক্রসের স্টাম্প যেই ভেঙ্গে দিয়েছে, স্টাম্প মাইকে শোনা গেছে ক্রসের আওয়াজ, ‘ও মাই গড’! স্যান্টনার ১৪তম ওভারে এসে ১৩ রান দিয়ে ২৩ রানে তার চার ওভারের স্পেল শেষ করেন। সে ওভারেই একশো পূর্ণ করা স্কটল্যান্ডের জয়ের জন্য তখন সমীকরণ হয়ে যায় বেশ কঠিন- ৬ ওভারে ৭৩। পরের ওভারে বোল্ট তিন রান দিয়ে ম্যাকলাউডকে বোল্ড করে ফেরালে কাজটা অসাধ্যই হয়ে পড়ে। তবে লিস্ক এসে ২০ বলে ৪২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে স্কটল্যান্ডকে ১৫৬ রান পর্যন্ত নিয়ে গেলে তারা হারে ১৬ রানেই।
তার আগে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড স্কটল্যান্ডের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বলপ্রতি রানেই এগুচ্ছিলো। ৪ ওভার শেষে কিছু অতিরিক্তের সহায়তায় স্কোরবোর্ডে তাদের রান হয় ৩৫। নিজের প্রথম ওভারে ১ রান দেয়া শরিফ আসেন এরপর বল করতে। এসেই দুই কিউই ব্যাটারকে ফিরিয়ে দেন প্যাভিলিয়নে, যার একজনের নাম কেন উইলিয়ামসন। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক শরিফের সে ওভারের প্রথম বলে মিচেল এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যাওয়ার পর আসেন, এরপর ডাউন দ্য লেগের এক বল তার ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় কিপারের হাতে। ৩৫/০ থেকে পাঁচ বলের ব্যবধানে নিউজিল্যান্ডের স্কোর হয়ে যায় ৩৫/২। শরিফ তার দুই ওভারে দুই রান দিলেও ইভান্স ও হুইল তাদের দুই ওভারে ২৪ ও ২৫ করে রান দিলে পাওয়ারপ্লেতে নিউজিল্যান্ড তুলে ফেলে ৫২ রান।
কিন্ত কনওয়ে এসে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে শূন্য রানে ফিরে গেলে কিছুটা চাপে পড়ে যায় কিউইরা। এরপর ওয়াট-গ্রিভসের বলে স্কটিশরা কিছুক্ষণ সেই চাপ ধরে রাখতে সক্ষম হয়। পাওয়ারপ্লের পরের চার ওভারে দুই কিউই ব্যাটার মিলে আনতে পারেন মাত্র ১৮ রান। পাওয়ারপ্লের পর বাউন্ডারির দেখা মিলে ২২ বল পর। ১০ ওভারে নিউজিল্যান্ড মারতে পারে মাত্র একটি ছক্কা, সেই ছক্কায়ই গাপটিল আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে তিন হাজার রান ছাড়িয়ে যান। ইনিংসের প্রথম অর্ধের পর গাপটিল গিয়ার বদলানোর সিদ্ধান্ত নেন। ৩৫ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন, পরের ২০ বলে আনেন ৩৯ রান। প্রথম দশ ওভারে একটি ছক্কা হাঁকানো নিউজিল্যান্ড পরের দশ ওভারে মারে সাত ছয়। যার মধ্যে ছয়টিই গাপটিলের। কিন্ত ইনিংসের শেষের দিকে গাপটিলকে মধ্যপ্রাচ্যের গরমে বেশ ভুগতে দেখা গেছে, সেঞ্চুরি থেকে সাত রান দূরে থেমেছেন লং অনে ক্যাচ দিয়ে।
তবে সর্বোচ্চ স্কোরার গাপটিলকেও ব্যাট হাতে শান্তই থাকতে হয়েছে ওয়াটের কাছে, কিউইরা পুরো ইনিংসে ১৬টি ছয়-চার মারলেও ওয়াটের বলে আসেনি একটিও। বাউন্ডারিবিহীন তেমনই একটা ওভার করেন তিনি ১৮তম ওভারে বোলিংয়ে এসে, সেখানে দারুণ ইয়র্কারে পাঁচ রানে ওভার শেষ করে তার স্পেল শেষ করেন মাত্র ১৩ রানে। ওয়াটের পর হুইল-শরিফের দুর্দান্ত বোলিংয়ে শেষ তিন ওভারে নিউজিল্যান্ড মারতে পারে মাত্র এক চার। সেই ১৮ বলে ২২ রান আনলে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ১৭২ এর উপরে যায়নি। স্কটিশ টপ অর্ডারের ছোট্ট ইনিংস কয়েকটি আশা জুগালেও শেষ পর্যন্ত এই রানই যথেষ্ট প্রমাণিত হয়েছে কিউইদের জয় নিশ্চিতের জন্য।