উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন মাহমুদউল্লাহ, সরে যাচ্ছেন না এখনই
বাইরে এরকম হরহামেশাই করা হয়। তবে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপারটা সচরারচর হয় না। সেজন্যই বোধ হয় সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলো কিছু মনে করবেন কি না। মাহমুদউল্লাহ অবশ্য কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালেন না। শুধু বললেন, টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব বা খেলা থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনো ভাবনা ভাবছেন না। একটা সময় পর্যন্ত নিজের আবেগটা ধরেই রেখেছিলেন। তবে পরে আবারও আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন কিছুটা। বললেন, বায়ো বাবলের চাপের কথা। বললেন, আসলে দল কেন পারছে না নিজেও সেটা বুঝতে পারছেন না।
বাংলাদেশ দলের এবারের বিশ্বকাপের যে ব্যর্থতা, সেটা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে এর মধ্যেই। তার মধ্যে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আজ তিনটি প্রশ্নই হলো। কেন দল পারেনি বা কেন এভাবে হেরেছে সেই প্রশ্নের উত্তরে মাহমুদউল্লাহ একটু অসহায়ের মতোই বললেন, ‘আমি নিজেও এই উত্তর খুঁজছি কী মিসিং হচ্ছে। কী করতে হবে। একসাথে বসেছি, চেষ্টা করেছি কী কারণে পারফুম্যান্স হচ্ছে না খোঁজার চেষ্টা করার। শ্রীলংকা-ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচ ছাড়া পুরো টুর্নামেন্টে আমরা একদমই বাজে খেলিনি। আমি নিজেও এখনো প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজছি। হয়তো দেশে গিয়ে আবার বসব।’
এরপর প্রশ্ন উঠল কোচিং স্টাফদের নিয়ে। বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট কি আসলে যোগ্য? বা বাংলাদেশের জন্য হাথুরুর মতো কোচিং স্টাফই কি ঠিক ছিল? মাহমুদউল্লাহ অবশ্য বললেন, একেক কোচের দর্শন একেক রকম। সবাই নিজের মতো কাজ করে। কোচিং স্টাফকে নিয়ে অবশ্য খুব বেশি কিছু বললেন না।
তবে মাঠের খেলার সঙ্গে মাঠের বাইরের বক্তব্য নিয়ে আর বেশি সমালোচনা হয়েছে এবার। বিশেষ করে অধিনায়কের ‘পেইনকিলার’ বা মুশফিকের ‘আয়না দেখার’ বলার পর। মাহমুদউল্লাহ স্বীকার করে নিলেন,’ ঐ সময় আমি হয়তো একটু ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম। সেজন্য হয়তো আমি একটু বেশি রিঅ্যাক্ট করে ফেলেছিলাম।’
পরে অবশ্য এই উত্তরটা আরেকটু খোলাখুলি দিলেন, ‘দেখেন, আমরা বিগত চার-পাঁচ মাস ধরে টানা ক্রিকেট খেলছি। আপনারা জানেন, বায়ো বাবলের একটা ফ্যাটিগ আছে। আর অনুশীলনের কিছু ইস্যু নিয়ে কথা হলো। ব্রেকটা ইন্ডিভিজুয়ালি একজন খেলোয়াড় বলতে পারবে যে কখন নিতে হবে। কার প্যাকটিসের প্রয়োজন বা ব্রেকের প্রয়োজন। কার বডির কী অবস্থা সেটাও প্রয়োজন। এগুলো অজুহাত দেওয়ার জন্য বলছি না। এটা সহজ বিষয় না। আমি প্রিমিয়ার লিগ খেললাম টানা ২৬ দিন। এরপর দুই দিনের মধ্যে আমরা বায়ো বাবলে ঢুকলাম অস্ট্রেলিয়ার সাথে। এরপর এক সপ্তাহের মধ্যে আবার বায়ো বাবলে ঢুকলাম নিউজিল্যান্ডের সাথে। ইংল্যান্ডের সাথে সিরিজটা থাকলে হয়তো আমরা ব্রেক পেতাম না। ওদের জন্য এটা অনেক সময় অনেক কঠিন, অনেক কিছু মানিয়ে নেওয়া। এই বায়ো বাবলের কারণে অনেক সময় অনেকে স্ট্রাগল করে। সেখানেও আপনি প্র্যাকটিসের কথা বললে ফ্যাটিগের ব্যাপারটা চলে আসে। একারণে অনেক সময় আমরা হতো চিন্তা করি একটা ব্রেক নিলে ভালো হবে।’
এরপরও পারফর্ম করতে পারেননি, সেই দায় নিয়েছেন, ‘তারপরও মাঠে পারফর্ম করতে হবে এটাই আসল ব্যাপার। সমালোচনা মাঠে হবে, কখনোই বলিনি সেটা হবে না। যখন আপনি দেশের জন্য, দলের জন্য পারফর্ম করতে পারবেন না তখন সমালোচনা হবেই। কিন্তু সবকিছু একটা সার্টেন পয়েন্ট থাকে। অনেক ব্যাপার আমরা বুঝি, কিন্তু ইগ্নোরও করি। হতো ওমানের ম্যাচে আমার ভেতর একটু বেশি ইমোশন কাজ করছিল, সেজন্য ওই কথাগুলো বলে ফেলেছিলাম।
তবে অধিনায়কের দাবি, মাঠের বাইরের এসব সমালোচনার জন্য ফল এমন হয়নি, ‘আমার মনে হয় না মাঠের পারফরম্যান্স প্রভাব ফেলেছে। এগুলা মেনে নিয়েই ক্রিকেট খেলতে হবে। যে কাজের জন্য আপনি পরিশ্রম করেন, সেটা আপনাকে আদায় করতে হবে। মাঠের বাইরের কিছু নিয়ে মাথা ঘামাইনি, আমরা শুধু নিজেদের পারফরম্যান্সের কথা ভেবেছি।’
সব শেষে নিজে অধিনায়কত্ব চালিয়ে যাবেন কি না সেই প্রশ্নের উত্তরে বল বোর্ডের কোর্টেই ঠেলে দিলেন, ‘এটা ডিপেন্ড করে। এটা আমার হাতে নাই। সিদ্ধান্ত ক্রিকেটবোর্ড। হয়তো আমার অধিনায়কত্বে সমস্যা ছিল, আমি সেটা আদায় করে নিতে পারিনি। এখন বাকিটা বোর্ড যেটা ভালো মনে করে সেটাই করবে।’