ছন্নছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বপ্ন শেষ করে মাথা উঁচু করে বিদায় শ্রীলংকার
সুপার ১২, আবুধাবি (টস- ওয়েস্ট ইন্ডিজ/ বোলিং)
শ্রীলংকা ১৮৯/৩, ২০ ওভার (আসালাঙ্কা ৬৮, নিসাঙ্কা ৫১, রাসেল ২/৩৩)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬৯/৮, ২০ ওভার (হেটমায়ার ৮১, পুরান ৪৬, হাসারাঙ্গা ২/১৯, বিনুরা ২/২৪)
ফলাফলঃ শ্রীলংকা ২০ রানে জয়ী
বাঁচতে হলে জিততে হবে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ম্যাচটা ছিল এমন। শ্রীলংকার সেমিফাইনাল আশার মৃত্যু ঘটে গেছে আগেই। তাদের জয় মানে 'হাম তো ডুবে হ্যায় সানাম, তুমকো লেকার ডুবেঙ্গে'! শেষ পর্যন্ত তারা বাড়ি ফিরল সেমিফাইনালের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করেই। ভাল শুরুর উপর ভিত্তি করে আসালাঙ্কা ও নিসাঙ্কার ফিফটির পর শানাকার ক্যামিওতে শ্রীলংকা ১৯০ রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছিল। লংকান বোলারদের সাথে ফিল্ডিংয়েও তারা ছিল দুর্দান্ত। হেটমায়ার ৮১ ও পুরান ৪৬ রানের ইনিংস খেললেও সেটি যথেষ্ট হয়নি তাই বাকিদের ব্যর্থতায়।
'ইউনিভার্স বস' ক্রিস গেইলের ব্যাট কথা বললে ১৯০ রানের লক্ষ্যতাড়াও সহজেই পরিণত হত। কিন্ত গেইল ব্যর্থ হলেন আরও একবার। ব্যাটের আগায় লাগা তার শট মিডঅনে থাকা হাসারাঙ্গাকে পাড়ি দিয়ে যেতে না পারলে তাকে ১ রানেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরতে হয়। তার সঙ্গী লুইস দুই চার মেরে বড় কিছুর ইঙ্গিত দিলেও ইনসাইড এজে ৮ রানে ফিরে যান তিনিও। বাহাতি পেসার ফার্নান্দোর এক ওভারেই দুই উইকেট খুইয়ে ফেলার পরেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে লক্ষ্যতাড়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে যান পুরান। তবে তাকেও প্যাভিলিয়নে ফিরতে হতো ১০ রানেই, শর্ট ফাইন লেগে থিকশানা পারেন না বল মুঠোয় বন্দী করতে। পরের বলেই পুরান ছয় মেরে থিকশানার জ্বালা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। পুরান যতক্ষণ ক্রিজে থাকবেন, ততক্ষণ সে জ্বালা মিটবার নয়! কিন্ত পুরানকে তার সঙ্গী হারাতে হলো মিড উইকেটে রাজাপাকসার অসাধারণ এক ক্যাচে। ৯ রানে চেজের ফেরার পর আসেন হেটমায়ার।
দুই তরুণের উপর দায়িত্ব পড়ে ইনিংস গড়ার। কিন্ত শ্রীলংকার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রানের চাকা ত্বরান্বিত করতে পারছিলেন না তারা। পাওয়ারপ্লেতে ৫২ রান আনা ওয়েস্ট ইন্ডিজ পরের চার ওভারে আনতে পারে মাত্র ২০ রান। থিকশানা সুপার টুয়েলভে আর উইকেটের দেখাই পেলেন না, তবে ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে উইন্ডিজদের চাপে রেখেছেন। ১০ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান যখন ৭২, হেটমায়ার ১২ বলে ৭ রানে ভুগছেন। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হাসারাঙ্গার সব ওভারই তখন বাকি!
সেই হাসারাঙ্গাই ডুবালেন ক্যারিবিয়ানদের! চার ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে নিলেন দুটি উইকেট। চামিরার কাটারে লং অফে বদলি ফিল্ডার ধানাঞ্জায়ার দারুণ ক্যাচের শিকার হয়ে ৪৬ রানে পুরানের ফেরার পর আসেন রাসেল। কিন্ত করুনারত্নের বাউন্সারে খাড়া ক্যাচ তুলে তিনিও ফিরে যান ৯ রানে। হাসারাঙ্গা এক প্রান্তে রান আটকে রাখলেও অপর প্রান্তে চড়াও হয়ে কয়েকটা ছয়-চার মারেন হেটমায়ার। শেষ ছয় ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের লাগত ৮৭ রান। হাসারাঙ্গার গুগলিতে বোল্ড হয়ে শূন্য রানে পোলার্ড ফিরে যাওয়ার পর ব্রাভোকেও হাসারাঙ্গা ফিরিয়ে দিলে কাজটা অসাধ্যই হয়ে পড়ে। শেষমেশ ৮১ রানে হেটমায়ার অপরাজিত থাকলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ হেরে গেছে ২০ রানে।
লংকান অধিনায়ক শানাকা আজও টসের সময় বলেছিলেন, ব্যাটিংটাই তাদের ভুগিয়েছে। এই বিশ্বকাপে সামনের পথ বন্ধ হয়ে গেলেও লংকানরা এ ম্যাচে শুরুটা করলো বেশ ভালোই। দুই ওপেনার দেখে শুনেই খেলেছেন। পেরেরা সুযোগেই বাউন্ডারিও খুঁজে নিয়েছেন। পাচঁ ওভারেই ৪২ রান তুলে ফেললো শ্রীলংকা। কিন্ত সেট হয়ে যাওয়া পেরেরাকে পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে ২১ বলে ২৯ রানে ফিরে যেতে হলো। রাসেলের স্লোয়ারে লেগ সাইডে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টায় ব্যাটের কানায় লেগে বল কিছুক্ষণ শূন্যে ভেসেছিল, রাসেল সেটি মাটিতে পড়বার আগেই লাফ দিয়ে লুফে নিলেন। রাসেলের রিয়্যাকশন টাইম ছিল ০.৮১ সেকেন্ড!
নিসাঙ্কা একপাশ আগলে এরপর সিঙ্গেল-ডাবলসে খেলে গেছেন। আসালাঙ্কা তার সাথে যোগ দিয়ে ব্যস্ত রেখেছেন ক্যারিবিয়ান ফিল্ডারদের। ৭ম ওভারে দুটি বাউন্ডারি মেরেছিলেন দুজনে। আকিলের বল কিপার ধরেই ফেলবেন, এমন মুহুর্তে লেটকাটে বল পাঠিয়ে দিয়েছেন সীমানায়। পরের তিন ওভারে আর কোন বাউন্ডারি না এলেও দুজনের দুর্দান্ত রানিং বিট্যুইন দ্য উইকেটে শ্রীলংকার স্কোর দশ ওভারে ৮২ হয়ে যায়। আসালাঙ্কা-নিসাঙ্কা জুটিতে আসালঙ্কা দ্রুতগতিতে রান তুলার দায়িত্বটা সামলেছেন। পেছনে এসেও একসময় নিসাঙ্কাকে ছুঁয়ে ফেলেন আসালঙ্কা। তবে শেষে নিসাঙ্কাও আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। যদিও বেশিকিছু করতে পারেননি, আকিলকে সুইচ হিটে মেরেছিলেন একটা ছয়। কিন্ত ৪০ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করার পরেই ব্রাভোর বল সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ধরা খেয়ে যান।
আসালাঙ্কাও এভাবেই ব্যর্থ হন বল সীমানার বাইরে পাঠাতে। কিন্ত যা করার তা করা সারা তখন, ফিরছেন যখন, স্কোরবোর্ডে শ্রীলংকার রান হয়ে গেছে ১৭৯। ৩৩ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছিলেন আসালঙ্কা, এরপর অল্প সময়ের জন্য হলেও চালিয়েছেন তান্ডব। ফিফটির পরের ৭ বলেই এনেছেন ১৮ রান। রাসেলের বলে নিসাঙ্কার সমান ৪১ বল খেলে ৬৮ রানে আউট হয়েছেন ১৯তম ওভারে গিয়ে। অধিনায়ক সানাকা দুই চারের সাথে এক ছয়ে ১৪ বলে ২৫ রানেই অপরাজিতই থেকেছেন। শেষ ছয় ওভারে লংকান ব্যাটসম্যানেরা তুলে ফেলেন ৬৯ রান। শেষ ওভারে কোন বাউন্ডারি না এলেও তাই আগের ঝড়ে শ্রীলংকা ১৮৯ এ পৌছে যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তারা আটকে দিতেও সক্ষম হয় এ রানে। সেমিফাইনালের আগেই তবু তাদের ফিরে যেতে হলেও লংকানরা এ বিশ্বকাপের পারফর্ম্যান্সে সামনের বিশ্বকাপে ভালো কিছুর ইঙ্গিতটাই দিয়ে গেলো! ২০ রানের এই জয়ে লংকানরা জানিয়ে রাখলো, সঠিক পথেই আছে লংকান ক্রিকেট।