গেইল-ব্রাভোদের বিদায়ী ম্যাচে বাংলাদেশকে সুসংবাদ শোনাল অস্ট্রেলিয়া
সুপার ১২, আবুধাবি (টস- অস্ট্রেলিয়া/ বোলিং)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৫৭/৭, ২০ ওভার (পোলার্ড ৪৪, লুইস ২৯, হেজলউড ৪/৩৯)
অস্ট্রেলিয়া ১৬১/২, ১৬.২ ওভার (ওয়ার্নার ৮৫,মার্শ ৫৩, আকিল ১/২৯)
ফলাফলঃ অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী
সেমিফাইনালের পথ বন্ধ হয়ে গেলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য এ ম্যাচটার গুরুত্ব কমার চেয়ে কয়েকটা কারণে বরং বেড়েই গিয়েছিল। ক্যারিবিয়ানদের বহু জয় উপহার দেওয়া ব্রাভো ও গেইলের বিদায়টা জয় দিয়ে রাঙিয়ে দেওয়া তো ছিলই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের জন্যও এ ম্যাচটার তাৎপর্য কম ছিল না, এই ম্যাচে হেরে গেলে র্যাংকিংয়ে নয় নাম্বারে চলে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। যেটি বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ। আর এ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় মানে সেমিফাইনালের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার হারের আশায় বসে থাকতে হতো অস্ট্রেলিয়ানদের। কিন্ত হেজলউডের শুরুর আঘাতে পোলার্ড-রাসেলের শেষের ঝড়ের পরেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৫৭ রানেই আটকে দিয়েছিল অজিরা। ওয়ার্নার ও মার্শের ফিফটিতে যা অস্ট্রেলিয়া পেরিয়ে গেছে ২২ বল হাতে রেখেই। দক্ষিণ আফ্রিকার হারলে কোন হিসেব নেই, জিতলেও আছে রান রেটের হিসাব। যে হিসাবে অস্ট্রেলিয়া বেশ এগিয়ে থাকায় বলা যায় সেমিফাইনালে এক পা দিয়েই রাখল অস্ট্রেলিয়া।
এই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হার মানে তারা ১৫ নভেম্বরের মধ্যে র্যাংকিংয়ের আটের ভেতর থাকতে পারছে না। ফলে সামনের বছর অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের জন্য তাদের গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে আসতে হবে। অন্যদিকে ভগ্নাংশের ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বাংলাদেশের থাকার কথা আটের মধ্যে। যার মানে বাংলাদেশ পরের বছর বিশ্বকাপে খেলবে সরাসরি। আইসিসির র্যাঙ্কিং অফিসিয়ালি প্রকাশিত হলে এটি নিশ্চিত হবে।
আজ ডেভিড ওয়ার্নাওই ছিলেন মূল নায়ক। ওয়েস্ট ইন্ডিজ শর্ট লেগ, স্লিপ রেখে আকিল হোসেনকে দিয়ে শুরু করিয়েছিল আক্রমণাত্মক মনোভাবেই। আকিল তাঁর প্রথম দুই ওভারে ৭ রান দিয়ে ফিঞ্চকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ৯ রানে আর্ম বলে ইনসাইড এজে বোল্ড করে। তবে ওয়ার্নারের ব্যাটে অস্ট্রেলিয়া পাওয়ারপ্লেতে ৫৩ রান তুলে ফেলে। যার মধ্যে ২২ বলে ৪০ রানই ছিল ওয়ার্নারের। ওয়ার্নার এরপর কিছুটা সময় নিয়ে ২৯ বলে পূর্ণ করে ফেলেন তাঁর ফিফটি। অন্য প্রান্তে মার্শ আস্কিং রেট কমানোর দায়িত্বটা সামলেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এলোমেলো বোলিংয়েরও তাতে কিছুটা সহায়তা থাকলেও দশ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ৯৮। বলপ্রতি রানেই তখন হতো অস্ট্রেলিয়ার। কিন্ত খেলা যে এখন রান রেটের! অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জিতে নিয়েছে ১৬.২ ওভারেই। ব্রাভো উইকেট শূন্য থাকলেও গেইল তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শেষ বলটায় উইকেট নিয়েই শেষ করেছেন। ৮৫ রানে অপরাজিত ওয়ার্নারের উইকেটটাও পেতে পারতেন, পুরান স্টাম্পিং মিস করলে তা হয়নি।
ব্যাট হাতে গেইল স্বরুপে ফেরা মানে বোলারদের দুঃস্বপ্ন। কিন্ত ৪২ বছর বয়সী গেইলই যে ব্যাট হাতে দুঃসময়ের বৃত্তে ঘোরপাক খাচ্ছেন! এ ম্যাচের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সিতে শেষ দশ ম্যাচে তাঁর সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ২১ রানের। অজিদের বিপক্ষে এ ম্যাচে অবশ্য হেজলউডকে পুল করে ছয় মারার পর কামিন্সের স্লোয়ারে ‘গেইল পাওয়ারে’ লং অনের মাথার উপর দিয়ে ছয় মেরেছেন, যা দেখে হয়তো কেউ ভেবেছেন, এই বুঝি দেখা মিললো পুরোনো ‘ইউনিভার্স বস’! কিন্ত কামিন্সের বলে ইনসাইড এজে স্টাম্পে বল ডেকে আনলে ১৫ রানেই তিনি ফিরে যান প্যাভিলিয়নে।
ফেরার পথে দর্শকদের উদ্দেশ্য ব্যাট উঁচিয়ে ধরেছেন, ব্রাভো, রাসেল, পোলার্ডরা এসে তাকে জড়িয়ে ধরেছেন। আর এসব দৃশ্যেই একটা জিনিষ ধ্রুব ছিল, গেইলের হাসিমুখ! ব্রাভো আগেই এ ম্যাচটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সিতে তাঁর শেষ ম্যাচ জানিয়ে দিলেও গেইল তা জানানি, তবে তাঁর ফেরার পথে কার্যকলাপ, আর এরপর অটোগ্রাফ দিয়ে দর্শকদের গ্লাভস বিলিয়ে দেয়া জানিয়ে দেয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজদের জার্সিতে গেইলেরও এটিই শেষ ম্যাচ।
গেইল ঝিলিকের আগে লুইস হেজলউডের উপর চড়াও হয়ে টানা তিন চার মেরেছিলেন। এরপর ষষ্ট ওভারে যখন তিনি আরেকটি চারের দেখা পেলেন, তার আগেই তাকে ছেড়ে গেইলের পর চলে গেছেন আরও দুজন। নিজের প্রথম ওভারে ১৯ রান দেওয়া হেজলউড দ্বিতীয় ওভারে এসে এক ওভারেই ফিরিয়ে দেন দুজনকে। পুরান লেংথ বলে মারতে গিয়ে ইনফিল্ডে ধরা খেয়ে ৪ রানে, আর ব্যাট প্যাডের ফাঁক দিয়ে বল ভেতরে ঢুকে স্টাম্প ভেঙ্গে দিলে চেজ শূন্য রানে ফিরে যান। ৩৫ রানে তিন উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ধাক্কা সামলে উঠার চেষ্টা করে লুইস ও হেটমায়ারের ব্যাটে। ৫০ রানে পাওয়ারপ্লে শেষ করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ এরপর দশম ওভারে লুইসের উইকেট হারালে ভাঙ্গে তাদের ৩৫ রানের জুটি। জ্যাম্পার গুগলিতে খাড়া ক্যাচ তুলে ২৯ রানে লুইস ফেরার পর এক প্রান্ত আগলে রাখেন হেটমায়ার। কিন্ত তিনিও গিয়ার পাল্টানোর আগেই ২৮ বলে ২৭ রানে হেজলউডের বলে কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলে শেষবারের মতো ম্যারুন জার্সিতে ব্যাট করতে আসেন ব্রাভো।
স্টার্কের বলে কাভারের উপর দিয়ে তাঁর ‘ট্রেডমার্ক’ ছয়ও হাঁকান একটি, কিন্ত তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক ইনিংসটা ১০ রানের বেশি হয়নি। তবে তখনও ক্রিজে ছিলেন পোলার্ড, তিন রানে জ্যাম্পা দ্রুতগতির ফিরতি বেশ কঠিন একটা ক্যাচ মিস দিয়েছিলেন, এরপর পোলার্ড ৪৪ রানে থেমেছেন। রাসেল এসে এই বিশ্বকাপে তাঁর প্রথম যে ছয় মারেন, সেটি গিয়ে পড়ে ১১১ মিটার দূরে! শেষ দুই বলে তাঁর দুই ছয়ের সাথে সবমিলিয়ে উইন্ডিজরা শেষ পাঁচ ওভারে চারটি ছয়ের সাথে হাঁকায় চারটি চার। যার ফলে ৯১ বলে ১০০ পূর্ণ করা ক্যারিবিয়ানরা বাকি ২৯ বলে ৫৭ রান এনে ১৫৭ রানের পুঁজি গড়তে সমর্থ হয়। যাতে অজিদের রুখতে পারেনি তারা।
ম্যাচ শেষে ব্রাভো ও গেইল বিদায় নিয়েছেন, হাসিমুখে! যদিও গেইল পরে বলেছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেননি এখনো। স্রেফ মজা করার জন্য করেছেন। তবে যেমনই হোক, তারা হাসিয়ে এসেছেন অগণিত ক্রিকেটপ্রেমীদের! ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাই তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছে, পুরো ক্রিকেটবিশ্বেরই তো ধন্যবাদ প্রাপ্য তারা!