• টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১
  • " />

     

    'আমিরাতে স্পোর্টিং উইকেট হলে আমাদের এখানে হয় না কেন?'

    'আমিরাতে স্পোর্টিং উইকেট হলে আমাদের এখানে হয় না কেন?'    

    দুঃস্বপ্নের একটা বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশ দল। সামনে পাকিস্তান সিরিজ, তার আগে দীর্ঘমেয়াদি কিছু সমস্যা সমাধানের জন্য তাগিদ দিলেন ইমরুল কায়েস

    ক্রিকেটারদের একটা ব্রেক দরকার

    কঠিন একটা সময় গেল ক্রিকেটারদের। আমার মনে হয় সামনে সবাইকে একটা নির্ভেজাল বিশ্রাম দিতে হবে। সেটা এক সপ্তাহ হোক বা যে কয়দিনের জন্য হোক। বিশ্রাম মানে বিশ্রাম। ক্রিকেটাররা অনেক সময় মিরপুরে এসে অনুশীলন করে, এরকম কিছু নয়। এটার মানে পুরোপুরি ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হবে। এই সময় ক্রিকেট বোর্ড বা ম্যানেজমেন্টের বসা উচিত। কী করণীয় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। ক্রিকেটারদের সঙ্গে বসতে হবে, কী কী ভুল হয়েছে সেগুলো বিশ্লেষণ করতে হবে।

    ভালো উইকেটের বিকল্প নেই

    আমি একটা ব্যাপার সবসময় বিশ্বাস করি, আমাদের আরও ভালো উইকেটে খেলতে হবে। হ্যাঁ, অস্ট্রেলিয়ার সাথে আমরা আমাদের মতো উইকেট বানিয়ে জিতেছি। ইংল্যান্ডের সঙ্গেও জিতেছি। তাতে সমস্যা নেই। তবে যখন আমরা একটা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে যাব তার আগে আমাদের সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। অনেকেই বলেছে ওখানে গিয়ে তো আমরা তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি। কিন্তু আমার মতে এটা যথেষ্ট নয়। আপনি যদি টানা দশটা ম্যাচে রান না পান এরপর আপনার টেনিস বলে রান করাটাও কঠিন। আপনার মাথায় থাকবে শেষ সিরিজে রান করিনি। ওখানে গিয়ে ভালো উইকেটে ব্যাটিং না করলে সেটা আরও কঠিন। এখানে ভালো উইকেট পেলে ওখানে গিয়ে আমাদের ব্যাটের সুইং, ফুটওয়ার্ক এগুলো আরও ভালো হতো। আমি আবারও বলছি, যাওয়ার আগে আমাদের যেটা হয়েছে সেটা ফলস প্রিপারেশন। আমাদের ফলটা অবশ্যই দরকার ছিল। এমন নয়, আমরা স্পোর্টিং উইকেটে আগে জিতিনি। নিউজিল্যান্ডকে আমরা ভালো উইকেটেই হারিয়েছি কার্ডিফে। আমরা ভারতকে হারিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকাকেও ঘরে ভালো উইকেটে হারিয়েছি। আমাদের দেশে এই উইকেটের কনসেপ্ট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নইলে ব্যাটসম্যান –বোলার বা দলের সবার জন্যই কাজ অনেক কঠিন হয়ে যাবে।

    ভারত দেখেন আইপিএল খেলেছে। এরপরও কিন্তু একই মাঠে তারা ১২০ পর্যন্ত করেছে। এত ক্রিকেট খেলার পরও তারা অ্যাডজাস্ট করতে পারিনি। আমরা কীভাবে বিশ্বাস করব তিন-চার মাস আগে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার পর আরেক জায়গায় গিয়ে অভ্যস্ত হব? আমাদের বিপিএলের সূচির কোনো ঠিকঠিকানা নেই। সবারই কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের একটা ক্যালেন্ডার আছে, আমাদেরই সেটা নেই। আবার যখন হয় তখন উইকেট ভালো থাকে না। বিগ হিটিং করতে গেলে কিনু ভালো উইকেট লাগে। মিরপুর থেকে চিটাগং গেলেই কিন্তু ২২০ রান চেজ হয়ে যাচ্ছে। ব্যাটসম্যান কিন্তু একই। আমিরাতের মতো ক্রিকেট কিন্তু বাংলাদেশের কোনো স্টেডিয়ামে খেলা হয় না। আমিরাতে প্রোপার ব্যাটিং উইকেট বানাতে পারলে আমরা পারছি না কেন?  কারণ আমাদের এখানে ফিক্সড থাকে যে এটা টেস্টের উইকেট বা ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টির উইকেট। বাকি কাউকে কোনো ইভেন্টেই ওই উইকেটগুলো ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। যার জন্য আমাদের ভালো উইকেটের সংখ্যা কমে যায়। আমাদের ডমেস্টিকের প্রায়োরিটি আগে দিতে হবে। মাথায় রাখতে হবে, ভালো উইকেট থেকে ভালো ব্যাটস্যান বের হবে। নইলে শুধু তিন চারটা উইকেট মিরপুর, চিটাগং বা সিলেটে পড়ে থাকে বছরের পর বছর পড়ে থাকে, কারও কোনো লাভ হয় না প্লেয়ারদের দোষ দেওয়া সহজ। কিন্তু প্রপার স্কিলের জন্য আপনাকে মাঠেই অনুশীলন করতে হব। এই অনুশীলনটাই আমাদের হয় না। মিরপুরে দুই দিন প্র্যাকটিস করলে তিন নাম্বার দিন উইকেটে বল আসে না। কিউরেটরকে বলে আমরা লাভ পাই না। কিন্তু আবু ধাবি, দুবাইতে হলে এখানে হয় না কেন? আমার মনে হয় এই ব্যাপারগুলা যদি ঠিক করতে না পারি তাহলে হবে না। এখানে পরিকল্পনার ব্যাপার আছে। এরপর আমরা হয়তো এক দুইটা ম্যাচে জিতব, আবার কিন্তু সবাই সবকিছু ভুলে যাব। এই জিনিসগুলো নিয়ে প্রপার প্ল্যান করা উচিত। নইলে কিউরেটর একরকম বলবে, অফিসিয়াল একরকম বলবে, বোর্ড আরেকরকম- এভাবে আসলে এগিয়ে যাওয়া কঠিন।

    সূচি ঠিক করতে হবে

    বাইরের টুর্নামেন্টে খেলার সময় আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় প্লেয়াররা পুরোপুরি অ্যাভেইলেবল আছে কি না। তারা প্লেয়ারকে জিজ্ঞেস করে কাউন্টি বা বিগ ব্যাশ বা সিপিএল/আইপিএলে থাকে কি না। আমাদের ক্যালেন্ডার হয়ে যায় হুটহাট। সেজন্য বাইরের লিগগুলো থেকে যখন আমাদের ডাক আসে তখন সময় মেলে না। তাদের ওই সময় দেখা যায় জাতীয় দলে ব্যস্ত। সেজন্য আমাদের প্লেয়ারদের ডিমান্ডও কমে যায়। ব্যতিক্রম যেমন সাকিব বা মোস্তাফিজ। কিন্তু রিয়াদ ভাই, তামিম, মুশফিক বাইরের দেশে খেলার জন্য সক্ষম। কিন্তু ক্যালেন্ডার না মেলার কারণে আমরা পারি না।

    পুল নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্ল্যান দরকার

    ২০১০ এ জেমি সিডন্সের অধীনে যখন খেলতাম তখন সিডন্সের একটা প্ল্যান ছিল এই ২৩-২৪ জনকে আমি পরের তিন চার বছর ধরে খেলাব। এর বাইরে যতই ভালো করুক, আমি কাউকে নেব না। যখন এরকম ২৩-২৪ জন প্লেয়ার পুলে থাকবে তখন ওরা জানে ভালো করলে ন্যাশনালে ঢুকব। কিন্তু এখন যেটা হয়, হুট করে কেউ ডমেস্টিকে ভালো করল এরপর আন্তর্জাতিকে  নেমে যায়। যেটা অনেক কঠিন পারফর্ম করার জন্য। এখন শামীম পাটোয়ারি যেমন ঘরোয়াতে ভালো করে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে গেল। ও কিন্তু এ দলেও খেলে নাই। জাতীয় দল হচ্ছে একটা  পরিবারের মতো। কিন্তু আজকে একজন আসবে, কালকে আরেকজন, এভাবে তো পরিবার হবে না। আপনাকে চিন্তা করতে হবে এই পরিবারে এই কজনই আছে, তাহলে প্লেয়ারদের মধ্যে একটা ট্রাস্ট তৈরি হবে। এখন প্লেয়াররা অনেক বেশি সংশয়ে থাকে, কে কখন সুযোগ পাবে কেউ জানে না। কিন্তু আমরা যদি একটা পুল করে একটা পরিবার তৈরি করতাম তাহলে সেটা দলের জন্য ভালো হতো।

    চেষ্টা করব জাতীয় দলে ফেরার

    আমার একটা নিউজ দেখে ভালো লেগেছে, পাকিস্তানের মিসবাহ ভাই আমাকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন। আমি দেখি, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস দেখি কথা বলছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুশি যে তারা আমার নাম বলেছেন, আমি যে একজন বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলেছি সেটা মনে রেখেছেন। তারা যদি এই চিন্তাটা করতে পারে তাহলে আমাদের দেশে যারা আছে তাদের আরও বেটার চিন্তা করা উচিত। আমি বিশ্বকাপে নেই এটা নিয়ে ভাবি না। কিন্তু জাতীয় দলে আবার সুযোগ পেলে আমি ভালো কিছুর চেষ্টা করব। আমার যে অভিজ্ঞতা, সেটা কাজে লাগানোর জন্য করব। বাকিটা ওপরওয়ালার ইচ্ছা।