• টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১
  • " />

     

    স্কটল্যান্ডকে উড়িয়ে ইতিহাসের হাতছানি পাকিস্তানের

    স্কটল্যান্ডকে উড়িয়ে ইতিহাসের হাতছানি পাকিস্তানের    

    সুপার ১২, শারজা (টস-পাকিস্তান/ ব্যাটিং)

    পাকিস্তান ১৮৯/৪, ২০ ওভার (বাবর ৬৬, শোয়েব ৫৪, গ্রিভস ২/৪৩)

    স্কটল্যান্ড ১১৭/৬, ২০ ওভার (বেরিংটন ৫৪, শাদাব ২/১৪)

    ফলাফলঃ পাকিস্তান ৭২ রানে জয়ী


    কিউইদের সাথে জয়ের বেশ কাছেই গিয়েছিল স্কটল্যান্ড। পাকিস্তানকেও বেঁধে রেখেছিল অনেকক্ষণ। প্রথম অর্ধে ৬০ রান আনা পাকিস্তান ছুটেছে এরপর পাগলা ঘোড়ার মতো। ১৯০ রানের যে লক্ষ্য দিয়েছিল স্কটিশদের, তার থেকে ৭২ রান দূরেই থেমে গেছে। সেমিফাইনাল সবার আগে নিশ্চিত হলেও সেখানে পাকিস্তান কাদের বিপক্ষে খেলবে, নিউজিল্যান্ড রান রেটে এগিয়ে থাকায় সেটি নির্ভর করছিল এ ম্যাচের উপর। শেষ পর্যন্ত এ ম্যাচটা জিতে নেওয়ায় গ্রুপের শীর্ষে থেকেই সেমিতে পাকিস্তান মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়ার। একমাত্র দল হিসেবেই অপরাজিত থেকে সেমিফাইনালের ঘরে পা রেখেছে পাকিস্তান। তাই পাকিস্তানকে চ্যাম্পিয়ন হতে হলে এখন ইতিহাসই গড়তে হবে। এর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন কোন দলই যে অপরাজিত থাকার স্বাদটা পায়নি!

    স্কটল্যান্ডের জন্য এই রান তাড়া করা অসাধ্যই বটে! মানসি-কোটজার শুরুতে মারার চেষ্টা চালিয়ে গেলেও পাকিস্তানের দুর্দান্ত বোলিং লাইনআপ তাদের জন্য দুর্বোধ্যই হয়ে পড়েছিলো। কোটজার স্লোয়ারে বোকা বনেছেন বারবার, শেষমেশ হাসানের এক স্লোয়ারে বোল্ড হয়ে তাঁর ভোগান্তির সমাপ্তি ঘটেছে। ১৬ বলে ৯ রানে কোটজার ফেরার পর মানসিও ভুগেছেন বেশ। এদিকে আস্কিং রেট বাড়ছিলো তরতর করে। ৭ ওভারে স্কটল্যান্ডের যখন ৩০ রান, আস্কিং রেট তখনই চলে গেছে ১২ এর উপরে। 

    এরপর শাদাব-ইমাদের স্পিনে হিমশিম খেয়েছেন মানসি। ৩১ বলে ১৭ রানে অবশেষে যে ওভারে ফিরে গেছেন, সে ওভারে ২ রান দিয়ে শাদাব আরেকজনকে ফিরিয়ে দিলে স্কটল্যান্ড ৪১ রানে হারিয়ে ফেলে চতুর্থ উইকেট। ততক্ষণে পেরিয়ে গেছে ১১ ওভার। স্কটল্যান্ডের ৯ ওভারে ১৪৭ রান প্রয়োজন হলে ফলাফল সেসময়ই জানা হয়ে গেছে। বাকি ছিল আনুষ্টানিকতার। ৩৭ বলে ৫৪ রান করে বেরিংটন অবশ্য স্কটল্যান্ডকে টেনে নিয়ে গেছেন ১১৭ রান পর্যন্ত। 

     

    ৭২ রানে হার পাওয়া স্কটল্যান্ড তাদের শেষ ম্যাচে হামজা তাহিরকে দিয়েছিল বিশ্বমঞ্চে প্রথম সুযোগ। টসে হেরে বোলিংয়ে নেমে ১ রানে হামজা ওভার শেষ করার পরে উইল ও শরিফও টাইট লাইন-লেংথে বল করে পাকিস্তানকে সহজে রান করার সুযোগ দেননি। বাবরের ব্যাটে পাকিস্তান প্রথম বাউন্ডারির দেখা পায় ১৭তম বলে এসে। পুরো টুর্নামেন্টেই দারুণ বোলিং করে আসা ওয়াট এসে চতুর্থ ওভারে চার রান দিলে চার ওভারে পাকিস্তানের রান হয় ১৮। পরের ওভারে বাবর মিডঅনের উপর দিয়ে মারতে গেলে ক্যাচ উঠে, যদিও পেছনে ছুটে গিয়ে বলের নাগাল পাননি শরিফ। পরের বলেই বাবর চার মারার পরে সে ওভারেই রিজওয়ান ইনিংসের প্রথম ছয় মারেন। উইকেটশূন্য থেকে পাওয়ারপ্লেতে পাকিস্তান তুলতে পারে ৩৫ রান।

    পাওয়ারপ্লের পরের বলেই হামজাকে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে রিজওয়ান ১৫ রানে আউট হয়ে যাওয়ার পর বাবর ধীরেসুস্থে খেলে এক প্রান্ত আগলে রাখার দায়িত্ব সামলেছেন। তবে হাফিজ ছিলেন অন্য মুডেই! ফখর জামান গ্রিভসের বাইরের বল টেনে লেগ সাইডে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ধরা খেয়ে ১৩ বলে ৮ রানে ফিরলে আসেন হাফিজ। পাওয়ারপ্লের পরের চার ওভারে মাত্র ২৫ রান আনতে পেরেছিল পাকিস্তান, রিজওয়ানের সেই ছয়ের ২০ বল পর পেয়েছিল আরেক বাউন্ডারির দেখা। 

    দশ ওভারে ৬০ রান আনা সেই পাকিস্তানের স্কোর ১৫ ওভারে গিয়ে হয় ১১২। চারটি চার ও একটি ছয়ে ১৯ বলে হাফিজের ৩১ রানের আছে তাতে অবদান। সেই সাথে বাবরের তিন চারে সে পাঁচ ওভারে মোট আসে ৫২ রান। হাফিজ শরিফের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরলে শোয়েব মালিকও এসে বুড়ো হাড়ের ভেল্কি দেখানো শুরু করেন! এদিকে অপর প্রান্তে থেকে বাবর ৪০ বলে দেখা পেয়ে যান এই বিশ্বকাপে তাঁর চতুর্থ ফিফটির, এর আগে একই বিশ্বকাপে চারটি ফিফটি করার রেকর্ড আছে শধুমাত্রই কোহলি ও হেইডেনের। 

    ফিফটির পরের ছয় বলে দুই ছয়ে ১৬ রান এনে ৬৬ রানে বাবর ফিরে গেলে শুরু হয় ৪২ বছর বয়সী শোয়েবের ‘বুড়ো হলেও দমিয়ে যাইনি’ শো! বুড়ো হাড়ের পাওয়ার দেখিয়ে গেছেন তিনি, স্কটিশ বোলাররা লেংথে একটু হেরফের করেছেন তো দেখেছেন বল গেছে সীমানা ছাড়িয়ে! ছয়টি ছক্কা ও এক চারে ১৮ বলে শোয়েব যৌথভাবে এই বিশ্বকাপের দ্রুততম ফিফটি পূর্ণ করেছেন। শেষ পাঁচ ওভারে পাকিস্তান আনে ৭৭ রান! প্রথম ১০ ওভারে ৬০ রান আনা পাকিস্তান পরের দশ ওভারে ১২৯ রান এনে গড়ে ১৮৯ রানের পুঁজি। সে রানে স্কটল্যান্ডকে একপেশেভাবে হারিয়ে বাবর-রিজওয়ানরা এখন ইতিহাসের পথেই!