• লা লিগা
  • " />

     

    ভাঙ্গা গলা আর চোখের জলে আগুয়েরোর বিদায়

    ভাঙ্গা গলা আর চোখের জলে আগুয়েরোর বিদায়    

    বিদায়টা এমন নাও হতে পারত। গোল করার উদযাপনে মাঠভর্তি দর্শকের সামনে গিয়ে তুমুল করতালিতে সিক্ত হতে পারতেন বিদায়ের আবেগে। সে করতালি পড়েছে স্টেডিয়ামের ছোট এক কোণে; আগুয়েরোকে ঘিরে ছিলেন তার বর্তমান-সাবেক সতীর্থ, ম্যানেজার ও বার্সেলোনা বোর্ড সভাপতি ও সদস্যরা। বিদায়টা হলো চোখের জলে, কাঁপা গলায় জানালেন, আর ফুটবল খেলতে পারবেন না তিনি। হৃদপিণ্ডের অনিয়মিত স্পন্দনের কারণে ফুটবল বুটজোড়া তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন সার্জিও ‘কুন’ আগুয়েরো। আর সবার জন্য রেখে গেলেন তার ক্যারিয়ারের অজস্র স্মরণীয় স্মৃতি।

    ম্যানচেস্টার সিটি ছেড়ে বার্সেলোনায় এসেছিলেন বেশিদিন হয়নি। ব্লাউগ্রানাদের জার্সি গায়ে খেলেছেন সর্বসাকুল্যে মাত্র পাঁচ ম্যাচ। অক্টোবরে আলাভেসের বিপক্ষে এক ম্যাচে বুকে ব্যথা নিয়ে বসে পড়েছিলেন মাঠে; যেতে হয়েছিল হাসপাতালে। তখনই গুঞ্জন উঠেছিল, ৩৩ বছর বয়সেই হয়তো ক্যারিয়ারের ইতি টেনে দিতে হবে। গুঞ্জনের আশংকা শেষমেষ সত্যিই হলো, অবসরে যেতে হলো সার্জিও আগুয়েরোকে।

    ‘আমি জানাতে চাই যে আমি পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’- চোখের জল আর ভাঙ্গা কণ্ঠে মাইকে ঘোষণা করেন আগুয়েরো। ‘এটা খুবই কঠিন এক মুহূর্ত, তবে এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমি সন্তুষ্ট। আমার কাছে আমার সুস্বাস্থ্য সবার আগে। যে ডাক্তাররা আমাকে সুস্থ করার জন্য কাজ করেছেন তারা বলেছেন আমাকে অবসর নিয়ে নিতে’।

    ‘আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে ভীষণ গর্বিত, সন্তুষ্ট। আমি সবসময়ই ফুটবল খেলার স্বপ্ন দেখেছি। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ যারা আমার ক্যারিয়ারে কোন না কোনভাবে আমার পাশে থেকেছেন। যে ক্লাবেই আমি খেলেছি- সিটি, অ্যাটলেটিকো- আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ কেননা তারা আমাকে সম্মান দিয়েছেন। বার্সেলোনার সবাই আমাকে সমর্থন করেছে’,- আরও জানান আগুয়েরো।

    ম্যানচেস্টার সিটি’র এক অবিসংবাদিত ‘কিংবদন্তি’ হিসেবে বার্সেলোনায় এসেছিলেন সার্জিও আগুয়েরো। ২৬০ গোল, পাঁচটি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা, ছয়টি লিগ কাপ ও একটি এফএ কাপ জিতেছেন সিটি’র হয়ে; সবকিছু ছাপিয়ে তাকে ইতিহাস মনে রাখবে প্রিমিয়ার লিগ, এবং ফুটবলের ইতিহাসেরও এক স্মরণীয় মুহূর্তের নায়ক হয়ে থাকার জন্য। ৯৩:২০ মিনিটে কিউপিআরের বিপক্ষে আগুয়েরোর গোল বারবার স্মরণ করা হবে ফুটবলের লোকগাঁথায়। 

    আগুয়েরোর বিদায় বলার দিনে ক্যাম্প ন্যুতে ছিলেন তার সাবেক ক্লাবের সতীর্থ-সদস্যরাও। ম্যানচেস্টার থেকে চলে এসেছিলেন তার সাবেক ম্যানেজার পেপ গার্দিওলাও! যে পেপ গার্দিওলা চোখের জলে সিটি থেকে আগুয়েরোকে বিদায় দেওয়ার সময় বলেছিলেন’ ‘কুনের স্থান পূরণ হবার মত নয়’। ঠিক পাঁচ মাসের মাথায় ফুটবল জগতেই এক শূন্যস্থান রেখে যাচ্ছেন আগুয়েরো।

    প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের সেরা স্ট্রাইকারদের তালিকায় আছে আগুয়েরোর নাম। দশ বছরে ১৮৪ গোল করা আগুয়েরোর উপরে আছেন শুধু অ্যান্ডি কোল, ওয়েইন রুনি আর অ্যালান শিয়েরার। নন-ইংলিশ খেলোয়াড়দের মধ্যে গোলস্কোরারের তালিকায় থিয়েরি অঁরির পরই তার অবস্থান। অ্যালান শিয়েরারকেও তিনি ছাড়িয়েছেন হ্যাটট্রিকের দিক থেকে। ব্ল্যাকবার্ন ও নিউক্যাসলের এই ইংলিশ কিংবদন্তির এগারো হ্যাটট্রিকের রেকর্ড ভেঙ্গে প্রিমিয়ার লিগে আগুয়েরোর ছিল বারোটি হ্যাটট্রিক। শুধু এক ইউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ছাড়া ম্যান সিটির জন্য জিতেছেন প্রায় সবকিছুই। সিটিতে আসার আগে অ্যাটলেটিকোর হয়ে জিতে এসেছিলেন ইউরোপা লিগ (সেসময়ের ইউয়েফা কাপ)। আর এবছরই আর্জেন্টিনার হয়ে জিতেছেন কোপা আমেরিকা। 

    বার্সেলোনার হয়েও তার অর্জনের স্বপ্ন ছিল; কিন্তু তার করুণ পরিসমাপ্তি ঘটলো। কুন আগুয়েরো চোখের জলে বিদায় বললেন ফুটবলকে। শুধু দিয়ে গেলেন তাকে মনে রাখার জন্য অজস্র মুহূর্ত।