• আইপিএল ২০১৬
  • " />

     

    আইপিএলে 'ভাষা' খুঁজছেন মুস্তাফিজ

    আইপিএলে 'ভাষা' খুঁজছেন মুস্তাফিজ    

    ঘটনা এক। ম্যাচ খেলতে ব্যাঙ্গালুরু যাচ্ছে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ দল। বিমানবন্দরে সতীর্থ কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্টকে মুস্তাফিজ বাংলায় জিজ্ঞেস করলেন, “দাদা, কেমন আছো?” বোল্ট বেচারা ‘কেমন আছো’র সাথে ‘ক্যামেরা’ গুলিয়ে ফেললে সঙ্গী আরেকজন মুস্তাফিজের প্রশ্নটা ইংরেজীতে অনুবাদ করে দিলেন। এটি নিয়ে বোল্ট-ফিজের খুনসুটির ভিডিও ‘ভাইরাল’ হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

     

    ঘটনা দুই। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ আর কলকাতা নাইট রাইডার্সের খেলা চলছে। কলকাতার ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বল করছিলেন মুস্তাফিজ। তৃতীয় ডেলিভারিটায় অতিরিক্ত বাউন্সে ছোঁড়া অফ কাটারটা ব্যাটসম্যান রবিন উথাপ্পা কোনোরকমে এক হাতে ঠেকিয়েই গ্লাভস খুলে ফেললেন ব্যাথায় কোঁকাতে কোঁকাতে। তাঁর শুশ্রূষার সাময়িক বিরতিতে হায়দ্রাবাদের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারকে দেখা গেলো এগিয়ে এসে মুস্তাফিজকে কি যেন বলছেন। জবাবে মুস্তাফিজকেও কিছু একটা বলতে দেখা গেলো। খেলা চলাকালীন বোলার আর ক্যাপ্টেনের এমন আলাপচারিতা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু ওয়ার্নারের চোস্ত অস্ট্রেলিয়ান ইংরেজী মুস্তাফিজ কি করে বা কতোটা বুঝছেন সে কৌতূহল অবশ্য থেকেই গেলো।

     

     

    বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সামনেই খুব একটা কথা বলেন না মুস্তাফিজ। সেই মুস্তাফিজ অভিষেকের পর বছর না ঘুরতেই ডাক পেয়ে গেছেন একাধিক বিদেশী লিগে খেলার। এই প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে তাঁর সামর্থ্যের স্বীকৃতি হলেও ভাষাগত সীমাবদ্ধতা তাঁর জন্য বড় ভোগান্তির কারণই হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলতে বাংলাদেশের বিস্ময়বালক এখন ভারতে। কিন্তু যে ছেলের মুখ থেকে বাংলাটাই ঠিকমতো বের হয় না সেই তিনি বিভিন্ন দেশের সতীর্থ ক্রিকেটারদের সাথে কথোপকথন কিভাবে সারছেন সেটা ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে স্বাভাবিকভাবেই বিরাট এক কৌতূহলের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

     

    ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো লিখছে ভাষাগত সমস্যার কারণে টিম মিটিংগুলোতেও ঠিকভাবে অংশ নিতে পারছিলেন না মুস্তাফিজ। অথচ ট্রেন্ট বোল্টের মতো দুঁদে বাঁহাতি পেসারকে বসিয়ে তাঁকে নিয়মিত খেলিয়ে যাওয়াতেই পরিষ্কার, মুস্তাফিজের উপর কতোটা ভরসা করছে তাঁর দল। সে আস্থার প্রতিদানও একটু একটু করে দিচ্ছেন ‘ফিজ’। কিন্তু দলের রণকৌশল নিয়ে যদি তাঁর সাথে আলোচনাই না করা যায়, তাহলে সে কৌশল বাস্তবায়ন হবে কিভাবে? সে সমস্যার সমাধানেই কর্তৃপক্ষ মুস্তাফিজের জন্য দোভাষী নিয়োগ দিয়েছে।

     

    তবে অনুবাদক নিয়োগের পরও মুস্তাফিজকে নিয়ে ডেভিড ওয়ার্নারের টুইট নতুন এক ধন্দেই ফেলে দিল। ‘অরেঞ্জ আর্মি’র সেনাপতি মজা করেই লিখেছেন, মুস্তাফিজের ভাষা বোঝার জন্য গুগল ট্রান্সলেটরের সাহায্য নিয়ে ‘একটু একটু’ বাংলা শেখার চেষ্টা করেছেন তিনি। ফলশ্রুতিতে মজাদার আরেক প্রশ্নও উঠে আসছে, তবে কি দোভাষীতেও কাজ হচ্ছে না মুস্তাফিজের?

     

    তাঁর ‘আসল’ কাজ যে ঠিকই হচ্ছে সে সনদ কিন্তু অকপটেই দিচ্ছেন সানরাইজার্সের ‘মেন্টর’ ভিভিএস লক্ষণ। দক্ষতার জায়গাটুকুর ঘষামাজায় মুস্তাফিজের অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা জানিয়ে ভারতের সাবেক এই ক্রিকেটার ভবিষ্যৎবাণী করছেন, এই ছেলে ক্রিকেট মাঠে লম্বা সময়ের জন্যই রাজত্ব করতে এসেছে। সঙ্গে এ-ও বলছেন, “আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যার বয়স এক বছরও হয় নি, বল হাতে তাঁর অমন মুন্সিয়ানা দেখাটা চোখের জন্য তৃপ্তিদায়ক।”

     

    বটে! চোখেই যাকে পড়ে মুগ্ধ হয়ে যাওয়া যায়, তাঁর আর মুখের ভাষার কি দরকার?