• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    টটেনহাম ২-২ লিভারপুল: মৌসুমের অন্যতম সেরা এক ম্যাচের দেখা মিলল যেসব কারণে

    টটেনহাম ২-২ লিভারপুল: মৌসুমের অন্যতম সেরা এক ম্যাচের দেখা মিলল যেসব কারণে    

    লিভারপুল-টটেনহাম। ক্লপের হেভি মেটাল বনাম কন্তের ডুম মেটাল। গেগেনপ্রেসিং বনাম কাউন্টার-কাউন্টার প্রেসিং ও কাউন্টার অ্যাটাক! কী ছিল না এই ৯০+ মিনিটের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে! ল্য গেজেত্তা দেল্লো স্পোর্তস এর বিখ্যাত ক্রীড়া সম্পাদক জিয়ান্নি ব্রেরা একবার বলেছিলেন, 'ফুটবলের 'পারফেক্ট' একটি ম্যাচের রেজাল্ট হবে ০-০'। সেই বিচারে টটেনহাম-লিভারপুলের ম্যাচ মোটেও 'পারফেক্ট' ছিল না; তবে ট্যাকটিকসের সংমিশ্রণ আর চোখ ধাঁধাঁনো অ্যাটাক-কাউন্টার অ্যাটাকের এই ম্যাচ ছিল দু'চোখ দিয়ে ফুটবল উপভোগের জন্য 'নিয়ার পারফেক্ট' এক ম্যাচ।

    সবকিছু মিলিয়ে ক্লপ-কন্তের লড়াইয়ে যে বিষয়গুলো আরও এই ম্যাচকে উপভোগ্য করেছে-

    ক্লপের হাই ব্যাকলাইন ও কেইনের চতুর মুভমেন্ট

    ক্লপের প্রেসিং স্টাইলই হলো- তিনি হাই ডিফেন্সিভ ব্যাকলাইন রেখে দলকে খেলান। সেই ব্যতিক্রম আজও হয়নি; কিন্তু সে ব্যাকলাইনকে রীতিমত নাকানি-চুবানি খাইয়েছেন সন-কেইন জুটি। এমনিতেই লিভারপুল দলে ছিলেন না ভার্জিল ভ্যান ডাইক, অন্যদিকে সন-কেইনকে সামলাতে গিয়ে রীতিমত দম আটকে যাওয়ার মত অবস্থা হয়েছে ইব্রাহিম কোনাতে ও জোয়েল মাতিপ জুটির, প্রথমার্ধে বিশেষ করে নিজের চতুর মুভমেন্ট এবং ডিপ থেকে লং বল পেয়ে ২বনা১ পরিস্থিতি তৈরি করছিলেন সন-কেইন জুটি, পাচ্ছিলেন একরের পর একর স্পেইস

    কেইন সময় সুযোগ বুঝে প্রায় পজিশন ছেড়ে নিচে নেমে লিংক আপ করছিলেন এনডম্বেলে কিংবা উইংকসের সঙ্গে। ঠিক একইভাবে স্পার্সের হাফ থেকে পাঠানো ডিপ লং বল গুলোতে নিজের চতুর মুভমেন্টে লিভারপুল ডিফেন্ডারদের পাশ কাটিয়ে স্পেইসে চলে যাচ্ছিলেন হ্যারি কেইন

    ওয়ান-টু টাচ, লং বল ও কাউন্টার

    ওয়াইট হার্ট লেনে প্রথমার্ধেই অন্তত ৪ গোলে এগিয়ে যেতে পারত টটেনহাম; যদি না সন আর ডেলে এমন সহজ সুযোগ হাতছাড়া না করতেন। হাই ব্যাকলাইনের সুযোগ নিয়ে একের পর এক কাউন্টারে যাচ্ছিলেন সন এবং কেইন; যা উপরের ছবিগুলো দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। বক্সে লিভারপুল ডিফেন্ডারদেরকে পজেশনে আসার সুযোগ না দিয়ে বক্সের পুরো স্পেইসের সুবিধা নিতে চেষ্টা করেছে স্পার্সের ফ্রন্টলাইন। লাইন ব্রেকিং পাস আর লং বল থেকে একের পর এক আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল ক্লপের ডিফেন্স; ঠিক সেরকম এক কাউন্টার-প্রেস থেকে করা কাউন্টারে এনডম্বেলের থ্রু বল থেকে কেইন করেন ম্যাচের প্রথম গোল। তেমনি বেন ডেভিসের চমৎকার এক লং বল থেকে পিছিয়ে পড়েও ম্যাচের শেষ গোলটি করেন সন

    জটা ও আলেকজান্দার আরনল্ডের পজিশনিং

    আক্রমণে যাবার সময় সেন্ট্রাল জোন থেকে স্পার্সের ফাইভ ম্যান ডিফেন্সিভ ইউনিটকে সবচেয়ে ভুগিয়েছেন ডিয়োগো জটা। বিল্ড আপের সময় নিচে নেমে এসে রবার্টসন আর মানেকে সামনে ওভারল্যাপ করে আক্রমণের জন্য তিনিই স্পেস বের করে দিচ্ছিলেন। আর দুজনের ক্রস বা থ্রু বল কাজে লাগানোর জন্য দৌড়ে বক্সে বিপজ্জনক জায়গায় অবস্থান নিচ্ছিলেন। জটার হেডেই ম্যাচে সমতা আনে লিভারপুল

    আর লিভারপুলের আক্রমণে সবচেয়ে বেশি কার্যকরি ছিলেন লিভারপুলের রাইট ব্যাক ট্রেন্ট আলেকজান্ডার আরনল্ড। স্পার্স ডিফেন্সের অবস্থান বুঝে কখনো রাইট হাফ স্পেইস, কখনো ওয়াইড চ্যানেল থেকে বল জোগান দিচ্ছিলেন। আর স্পার্স বক্সে ওভারলোড করার কাজটা তিনিই সবচেয়ে কার্যকরিভাবে করে আসছিলেন। রবার্টসনের গোলের অ্যাসিস্টটাও এসছে তার কাছ থেকে।

     

    স্পার্সের ডিপ ব্লক ও মানে-রবোর লেফট চ্যানেলের জুটি

    প্রথমার্ধের প্রথম আধ ঘণ্টার পুরোটা সময় বলের পজেশন তেমন নিজেদের কাছে না রেখেই খেলেছে স্পার্স। সেসময় লিভারপুলের ৭১% পজেশনের বিপক্ষে তাদের বল পজেশন ছিল মাত্র ২৯%। কিন্তু তাতেও তারা কার্যকরিভাবে খেলে গেছে লিভারপুলকে ঠিকমত স্পেইস না দিয়ে। লেফট সেন্টার ব্যাক বেন ডেভিসের কারণে পুরো ম্যাচ নিষ্ক্রিয় থাকতে হয়েছে মোহাম্মদ সালাহকে। সেজন্য লিভারপুলের সবচেয়ে বিপজ্জনক রাইট হাফ স্পেইস ও ওয়াইড চ্যানেল থেকে আক্রমণগুলো না এসে সেগুলো বেশিরভাগ সময়ই আসছিল রবার্টসন-মানের লেফট চ্যানেল থেকে। ৫-৩-২ ডিফেন্সিভ ব্লকে কাউন্টারের জন্যও ভালো স্পেইস পাচ্ছিলেন স্পার্সের সামনের দুই ফরোয়ার্ড কেইন ও সন

    তবে লেফট চ্যানেল থেকে আক্রমণেই অবশ্য ধীরে ধীরে ছন্দে এসেছে ক্লপের দল। মানে-রবো-জটার মিলিত চেষ্টাতেই আসে লিভারপুলের প্রথম গোল

    ভিএআর বিতর্ক ও লাল কার্ড

    ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ব্লকবাস্টার এক ম্যাচ আর ভিএআর বিতর্ক- একই সূত্রে গাঁথা। ব্যতিক্রম হয়নি এই ম্যাচেও। ম্যাচের ২০ মিনিটে রবার্টসনকে বিপজ্জনক লাঞ্জিং এক ফাউল করে শুধুমাত্র হলুদ কার্ড দেখে পার পেয়ে যান স্পার্স ফরোয়ার্ড হ্যারি কেইন। অথচ রিপ্লেতে ফাউলটিকে রেড কার্ড অফেন্স বলেই মনে হচ্ছিল। অন্যদিকে ম্যাচের ৭৭ মিনিটে এমারসনকে পেছন থেকে জোরে লাথি মেরে পল টিয়েরনির কাছ থেকে হলুদ কার্ড দেখেন অ্যান্ডি রবার্টসন। তবে তাতেও সন্তুষ্ট হননি রেফারি টিয়েরনি; ভিএআর মনিটরে গিয়ে দেখে তার মনে হয়েছে- যথেষ্ট বিপজ্জনকভাবেই ফাউল করেছেন রবার্টসন। ফলে হলুদ কার্ড পাল্টে তা হয়ে যায় লাল কার্ড। মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন লিভারপুলের দ্বিতীয় গোলস্কোরার; যেখানে ভিএআর চেক হলে লাল কার্ড দেখতে পারতেন হ্যারি কেইনও!

     

    সব মিলিয়ে প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম এক শ্বাসরুদ্ধকর, উপভোগ্য এক ফুটবল ম্যাচের দেখা মিলল আজ