• ক্রিকেট, অন্যান্য
  • " />

     

    ‘৮৩' রূপকথা যখন রূপালি পর্দায়

    ‘৮৩' রূপকথা যখন রূপালি পর্দায়    

    ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? মুম্বাইয়ের জমজমাট সেই সন্ধ্যা। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ফুল হাউজ শো। নুয়ান কুলাসেরাকার গুড লেন্থ ডেলিভারিটা, হেলিকপ্টার শটে লং অনের ওপারে পাঠাচ্ছেন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। যে ছক্কায় ২৮ বছর পর বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। 

    ছক্কা মারার পর ধোনির ফলো থ্রু, বলের গতিপথে চাউনি; যেন কোনো দক্ষ চিত্রশিল্পী মুগ্ধ নয়নে দেখছেন তারই শিল্পকর্ম। আজীবন ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো একটা ছবি। এমন আরো একটা ছবি ভারতীয় ক্রিকেটের ক্যানভাসে এঁকে দিয়েছিলেন কপিল দেব। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে। সেবার তারই নেতৃত্বে ভারত জিতেছিল তাদের প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা। 

    ২০১১ বিশ্বকাপ জেতার পর ট্রফি নিয়ে ধোনি ছবি তুলেছিলেন সপ্তাশ্চর্যের একটি; তাজমহলের সামনে দাঁড়িয়ে। আর ১৯৮৩ সালে, আরাধ্য শিরোপা নিয়ে  কপিল দেবের ‘আইকনিক’ ছবিটা ফ্রেমবন্দি হয়েছিল লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ব্যালকনিতে। আইকনিক সেই ছবি তোলা পর্যন্ত, কেমন ছিল ভারত ও কপিল দেবের সেই রোমাঞ্চকর সফরটা?

    ইউটিউবের বদৌলতে ৩৯ বছর পুরনো সেই জয়যাত্রার একটুখানি ঝলক আমরা দেখতে পাই অহরহ। কিন্তু সিনেমার বড় রুপালি পর্দায়, ঘূর্ণায়মান রিলের পরতে পরতে সেই ঐতিহাসিক গল্প গেঁথেছেন ভারতীয় পরিচালক কবির খান। ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের এই  ‘83’ নামের এই  ছায়াছবি মুক্তি পেয়েছে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর।  

    ‘৮৩ সালের সেই বিশ্বকাপ মিশনে সুনীল গাভাস্কার, মহিন্দর অমরনাথ, যশপাল শর্মা, কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তরা ছিলেন কপিল দেবের সহযোদ্ধা। আর সিনেমার পর্দায় তাদের চরিত্রায়ণে ছিলেন 

    রনভীর সিং, যতিন সর্না, সাকিব সালিমের মতো তারকারা। কেমন হয়েছে তাদের এই  চরিত্রায়ণ?   

    সিনেমার পর্দায় এই তারকারা, বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটারদের চরিত্রকে যেভাবে এঁকেছেন, তাতে হলপ করে বলা যায়, ডিসেম্বরের এই হাড় কাঁপানো শীতেও, ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীদের মনে স্মৃতির বৃষ্টি নামিয়েছে ‘83’।যারা সিনেমাটি দেখেছেন তারাও এই ব্যাপারে এক বিন্দুতে মিলবেন আশা করি।

     ‘83’ সিনেমার পোস্টার যেদিন মুক্তি পায়, সেদিনই শোরগোল ওঠে, ‘আসল কপিল দেব নন তো!’ 

    পোস্টারে কপিলের বিখ্যাত ‘নটরাজ শট’ তথা পুল শটের ‘কার্বন কপি’ হয়ে দেখা দিয়েছিলেন  রনভীর। সেই চাউনি, গোঁফ, ফলো থ্রু; সব যেন ‘পিকচার পারফেক্ট’। এ তো গেল পোস্টারের কথা। সিনেমার কথা বললে, পর্দায় বাস্তবের কপিলকে যথাযথভাবেই তুলে এনেছেন রনভীর। বোলিং স্টাইল, কথা বলার ধরণ, হাঁটাচলা, চোখের নাচন, হাসি কিংবা জোড়াতালি দেয়া ‘স্পোকেন ইংলিশেও যথেষ্ট ‘কপিল দেব’ হয়ে ওঠেন তিনি। 

    স্পটলাইট কেবল কপিল দেবের ওপরই স্থির রাখেননি পরিচালক। বাকি সব ক্রিকেটারকে যথেষ্ট স্ক্রিনটাইম দিয়েছেন কবির খান। তার নেতৃত্বে সুনীল গাভাস্কার, মহিন্দর অমরনাথ, সৈয়দ কিরমানি, রবি শাস্ত্রীসহ সকলকেই পর্দায় নিপুন হাতে পর্দায় দেখিয়েছেন অভিনেতারা। 

    উঠে এসেছে বিশ্বকাপের নেপথ্যের গল্পও। এই যেমন ভারতের সেই স্কোয়াডের কেউ বিশ্বাস করেননি, তারা বিশ্বকাপ জিততে পারেন। একমাত্র কপিলই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বিশ্বকাপ জেতার ব্যাপারে। ঘটনাটাও বেশ মজার। ফাইনাল নিশ্চিত করার পর, তৎকালীন ইংল্যান্ডস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের আমন্ত্রণে বিশেষ এক নৈশভোজে যায় ভারত দল। সেখানেই সবার সামনে মজার ছলে শ্রীকান্ত জানান, তাদের ক্যাপ্টেন বোধহয় পাগল হয়ে গেছেন। তা না হলে কি, ‘আন্ডারডগ’ ট্যাগ সাথে নিয়ে কেউ বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখে! শ্রীকান্তদের বিচারে পাগলামি হলেও, সেই রঙিন, বিলাসী স্বপ্নটা দেখেছিলেন কপিল। যা সত্যিও হয়েছিল।  

    স্বপ্নের পেছনে ধাওয়া করে ভারতকে নিয়ে কপিল হোঁচট খেয়েছেন বেশ ক’বার। প্রতিবারই ত্রাণকর্তা হয়ে এসেছেন কেউনা কেউ। তবে যে হার্ডলটা না পেরোলে ভারতের বিশ্বকাপ শিরোপাটা পেত না, সেটা অনায়াসে ডিঙিয়ে গেছেন কপিল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেমিফাইনালে বিখ্যাত সেই ১৭৫*। কী অদ্ভুত নিয়তি, সেই ম্যাচটা টেলিকাস্ট করেনি বিবিসি। কিন্তু ‘83’ এর রিলে সেই ইনিংসের একটু ঝলক দেখতে পাবেন সবাই। 

     ‘83’ তুলে এনেছে  চন্ডিগড়ের ছেলে কপিলের ’হরিয়ানা হ্যারিকেন’ হয়ে ওঠার গল্প। দেখিয়েছে লালা অমরনাথের ছেলে মহিন্দরের পিতা ভক্তি। উঠে এসেছে রজার বিনির মানসিক যুদ্ধ, রবি শাস্ত্রীর ছেলেমানুষি, শ্রীকান্তের ফুল গিয়ারের ব্যাটিং। নজর কাড়বে বলবিন্দর সান্ধুর ‘অফ কাটার’ মারার গল্পটাও।