দ্বিতীয় দল হিসেবে প্লেঅফে কুমিল্লা: জয়-মঈন জুটির পরে 'ফিনিশার' নারাইনে ম্লান ইনগ্রাম
সিলেট সানরাইজার্স-কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, সিলেট (টস-সিলেট/বোলিং)
সিলেট সানরাইজার্স- ১৬৯/৫, ২০ ওভার (ইনগ্রাম ৮৯, বিজয় ৪৬, সিমন্স ১৬, মোস্তাফিজ ৩/২৩, নারাইন ১/৩৪, তানভীর ১/৩৭)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স-১৭৩/৬, ১৯.৫ ওভার (জয় ৬৫, মঈন ৪৬, নারাইন ২৪*, আলাউদ্দিন ২/২৪, অপু ২/৩৬, স্বাধীন ১/২৯)
ফলাফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৪ উইকেটে জয়ী
সিলেটের দুঃসহ টুর্নামেন্টের কষ্ট আরও বাড়িয়ে কুমিল্লা তুলে নিয়েছে জয়; মাহমুদুল হাসান জয়ের ব্যাটে চড়ে। সাথে ভূমিকা ছিল মোস্তাফিজুর রহমান ও মঈন আলীর। তবে জয়ের মুখে জয়ের তৃপ্তি নিশ্চিত করেছেন সুনীল নারাইন, দারুণ এক ক্যামিও খেলে ম্যাচ শেষ করে এসে। ব্যাট হাতে ইনগ্রামের আরও একটি দারুণ ইনিংসকে নিষ্ফলা বানিয়ে কুমিল্লা তাই দ্বিতীয় দল হিসেবে নিশ্চিত করেছে প্লেঅফ।
আবারও উজ্জ্বল ইনগ্রাম-বিজয়
গত ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাট করা কলিন ইনগ্রামকে দ্রুত ফেরাতেই বোধহয় কুমিল্লা অধিনায়ক ইমরুল কায়েস পাওয়ারপ্লের প্রথম পাঁচ ওভারেই আক্রমণে আনলেন পাঁচ জন বোলারকে। সেই টোটকা কাজে তো দিলই না উল্টো তানভীর ইসলামের পঞ্চম ওভারে তিন চার ও এক ছয়ে তিনি নিলেন ১৯ রান। সাথে আনামুল হক বিজয়ও যোগ্য সঙ্গ দিয়ে দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন সিলেটকে। একশো স্ট্রাইক রেটের আশেপাশেই খেলতে থাকা বিজয় মঈন আলীর দশম ওভারে দুই ছয় মেরে হাত খোলেন। পরের ওভারেই ৩৫ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন ইনগ্রাম; ওপেনিং জুটিও পার করে শত রান। ফিফটির দ্বারপ্রান্তে এসেই মোস্তাফিজুর রহমানের অফ স্টাম্পের বাইরের বল মাঠছাড়া করতে গিয়ে আনামুল ফেরেন ৩৩ বলে ৪৬ রান করে। তবে থামেননি ইনগ্রাম। আক্ষেপের বিষয়, ১২তম ওভারেই দলীয় ১০০ রান পূর্ণ করে ১০৫ রানের ওপেনিং জুটির পরেও সিলেটের মিডল অর্ডার সেটা একেবারেই কাজে লাগাতে পারেননি। ইনগ্রাম একাই লড়ে গিয়েছেন; অন্য প্রান্তের ব্যর্থতায় মাঝে গিয়ার বদলাতেও পারেননি। মোস্তাফিজের দারুণ ডেথ বোলিংয়ে শেষ ওভারে ইনগ্রাম ফিরেছেন ৬৩ বলে ৮৯ রানে। শেষ ওভারে মোস্তাফিজ দুই উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। দারুণ শুরুর পরেও ১৬৯ রানে আটকে যাওয়াটা ইনগ্রামকে নিশ্চিতভাবেই আক্ষেপে পুড়িয়েছে।
জয়-মঈনের ঠান্ডা মাথার জুটি
ছয় মেরে দারুণ শুরু করলেও পরের ওভারেই ফিরে গিয়েছিলেন লিটন দাস। পরের ওভারে ফাফ ডু প্লেসিও ফিরে গেলে বিপদে পড়ে কুমিল্লা। সেখান থেকে মঈন আলীকে নিয়ে ধীরেসুস্থে এগিয়ে যান জয়। পাওয়ারপ্লেতে ৩৭ রান এলেও তেড়েফুঁড়ে আক্রমণে যাননি। দশ ওভারের মাথায় দুজনের ব্যাটিংয়ে গিয়ার পাল্টানোর কোনও লক্ষণ দেখা না যাওয়ায় অনেকেরই হয়ত কপালে ভাঁজ পড়েছিল। কিন্তু দুজনেই খুঁজছিলেন শিশিরের প্রভাব কাজে লাগিয়ে স্পিনারদের আক্রমণের সুযোগ। সোহাগ গাজির করা ১১তম ওভারে দুই চার ও এক ছয়ে ১৫ রান নিয়ে সেটাই করেন মঈন। ছন্দে ফেরা মঈন অবশ্য বোপারার নিরীহ এক বলে ফিরে গেলে আবারও জয়ের ওপরেই এসে ভর করে দায়িত্ব। তবে ইমরুল কায়েস এসে মারমুখী ব্যাটিং করায় জয় তুলে নেন আসরের দ্বিতীয় ফিফটি। উইকেটে থিতু জয় অবশ্য ম্যাচ জিতিয়ে আসতে পারেননি। এমনকি আলাউদ্দিন বাবুর কাছে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে যখন ফিরলেন তখন ঘুরে যেতে পারত ম্যাচের মোড়। বাবু যে টানা দুই বলে ফিরিয়েছিলেন জয় ও আরিফুল হককে। তবে জয়ের ওই ৫০ বলে ৬৫ রানের ইনিংসেই কুমিল্লা পেয়েছিল শেষদিকে আক্রমণের সুযোগ।
সুনীল ‘ফিনিশার’ নারাইন
সিলেটের মিডল অর্ডার যা করতে পারেনি সেটাই হাতে-কলমে করে দেখালেন নারাইন। উইকেটে যখন এলেন তার আগের ওভারেই জয়-ইমরুল মিলে তুলেছেন ২০ রান। উইকেটে এসেই বোলারদের ওপর চড়াও হওয়া সেই ইমরুলই যখন ফিরলেন তখন ম্যাচ নিজেদের দিকেই ঘুরিয়ে নিতে পারত সিলেট। সেই সুযোগও দিয়েছিলেন নারাইন; প্রথম বলেই অপুকে মাঠছাড়া করতে গিয়ে লং অনে তুলে দিয়েছিলেন ক্যাচ। সেই যে জীবন পেলেন এরপর আর পেছন ফিরে তাকাননি। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বোলার হিসাব করে খেলেছেন। এমনকি ১৮তম ওভারে বাবুর টানা দুই উইকেটে পেন্ডুলামের মত দোদুল্যমান ম্যাচের কাটা সিলেট যখন আবারও নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নিল তখনও তিনি সুস্থির। পরের ওভারেই স্বাধীনকে দুই চার মারার পরে শেষ বলে কব্জির মোচড়ে মারলেন দারুণ এক ছয়। ওই ওভারে ১৯ রান তুলে কার্যত সিলেটের কফিনে পেরেক ঠুকে দেন। শেষ ওভারে হ্যাটট্রিকের খোঁজে থাকা আলাউদ্দিন আবারও ম্যাচ জমিয়ে তুললেও কুমিল্লা তাই ঠিকই বের করে এনেছে জয়, নারাইনের ওই ১২ বলে ২৪* রানের ফিনিশিংয়ে।