স্নায়ুর লড়াইয়ে পাশার দান উলটে পাকিস্তানের রেকর্ড গড়া জয়
এশিয়া কাপ, সুপার ফোর, দুবাই(টস-পাকিস্তানবোলিং)
ভারত-১৮১/৭, ২০ ওভার (কোহলি ৬০, রোহিত ২৮, রাহুল ২৮, শাদাব ২/৩১, নাওয়াজ ১/২৫, হাসনাইন ১/৩৮)
পাকিস্তান- ১৮২/৫, ১৯.৫ ওভার (রিজওয়ান ৭১, নাওয়াজ ৪২, আসিফ ১৬, বিষ্ণোই ১/২৬, আরশদীপ ১/২৭, ভুবনেশ্বর ১/৪০)
ফলাফল: পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী
উত্তেজনায় ঠাসা এক ম্যাচে স্নায়ু ধরে রেখে শেষ হাসি হাসল পাকিস্তান। ভিরাট কোহলির টানা দ্বিতীয় ফিফটিতে ভারত বড় সংগ্রহ পাওয়ার পর মোহাম্মদ রিজওয়ানের টানা দ্বিতীয় ফিফটি ও মোহাম্মদ নাওয়াজের ৪২ রানের সময়োপযোগী এক ইনিংসের পরেও ম্যাচে দারুণভাবে ফিরে এসেছিল ভারত। দম ফেলার সুযোগ না থাকা ম্যাচে চাপে পড়ে এরপর তরুণ আরশদীপ শিং আসিফ আলীকে যেই সুযোগ দিলেন তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করলেন অভিজ্ঞ এই হার্ড হিটার। শেষ ওভারে গড়ানো ম্যাচে আরশদীপ শেষ চেষ্টা করলেও পাকিস্তান তাই সম্পন্ন করে ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বোচ্চ রান তাড়া।
অথচ বড় লক্ষ্যের চাপ, তার ওপর শেষের ভুল - দুইয়ে মিলে পাকিস্তান শিবিরে যেই চিন্তার আনাগোনা চলছিল সেটা যেন আরও জেঁকে বসেছিল নিজেদের ইনিংস শুরু হওয়ার পর। চতুর্থ ওভারে আক্রমণে এসেই রবি বিষ্ণোই ফেরান ১৪ রানে থাকা বাবর আজমকে। ফাখার জামানকে নিয়ে এরপর আর কোনও বিপদ ঘটতে না দিয়ে রিজওয়ান পাওয়ারপ্লেতে পাকিস্তানকে নিয়ে যান ৪৪ রানে।
পাওয়ারপ্লের পর শাপমুক্তির সুযোগ থাকলেও একেবারেই সময়ের অনুপযোগী এক ইনিংস খেলে যুঝবেন্দ্র চেহেলের শিকার হয়ে ফাখার ফেরেন ১৮ বলে ১৫ রান করে। তবে পাকিস্তান এরপর চারে মোহাম্মদ নাওয়াজকে নামানোর বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত নিলে ফাটকাটা খেলে যায় দারুণভাবে। দ্বিতীয় বলে চেহেলকে চার মেরে শুরু করা নাওয়াজের কাছে হার্দিকের বাউন্সার পরিকল্পনা মাঠে মারা যায়। অন্য প্রান্তে ৩৭ বলে রিজওয়ান নিজের ১৫তম ফিফটি তুলে নিয়ে দলকে নিয়ে যান শতরানে। হার্দিক-চেহেলের পরের দুই ওভার থেকে দুজন মিলে ২৮ রান নেওয়ার পর রানের চাকা সচল রাখতে গিয়েই ভুবনেশ্বর কুমারের স্লোয়ারে শেষ হয় নাওয়াজের ২০ বলে ৪২ রানের দারুণ প্রতি আক্রমণ।
তবে ভুবনেশ্বরের ওই ওভার থেকে মাত্র ৪ রান এলে সেটার চাপে পড়েই হয়ত পরের ওভারে ফেরেন রিজওয়ানও। হার্দিকের অফ স্টাম্পের বাইরের স্লোয়ার পড়েছিলেন ঠিকই; তবে সজোরে ব্যাট না চালানোতে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ৫১ বলে ৭১ রানের ইনিংস। ঠিক পরের ওভারটা যেন পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকা এই ম্যাচের উত্তেজনাতে আরও এক চিমটি মশলাই বাড়াল। আসিফ আলীর বিপক্ষে কট বিহাইন্ডের রিভিউ নিয়ে ভারত ব্যর্থ হওয়ার পরের বলেই তার মামুলি এক ক্যাচ ফেলে দেন আরশদীপ। শেষ দুই ওভারে পাকিস্তানের সমীকরণ ৬ উইকেট হাতে নিয়ে ২৬ রান হয়ে দাঁড়ালে ভুবনেশ্বরের পরের ওভারে সেই আসিফ আলীি মারেন একটি করে চার-ছয়, সাথে খুশদিলের এক চারে ওই ওভারে আসে ১৯ রান। তার ওপর শেষ ওভারে ভারতের মাথার ওপর নেমে আসে ইন-ম্যাচ পেনাল্টির খড়গ। সেই খড়গ তুলতে আরশদীপের ঘাড়েই দায়িত্ব সপে দেওয়া হলে আসিফ তার দ্বিতীয় বলেই মেরে বসেন চার। তবে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে তো নাটকের ভেতরেও থাকে নাটক। এক বল ডট দেওয়ার পর দারুণ এক ইয়র্কারে আরশদীপ ইতি টানেন আসিফের ৮ বলে ১৬ রানের ক্যামিওর। শেষ ২ বলে ২ রান লাগলে পরের বলে নেমেই ইফতিখার সেটা তুলে নিয়ে এরপর পাকিস্তানকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে।
এর আগে রোহিত শর্মা-লোকেশ রাহুল জুটি দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন ভারতকে। পেসারদের ওপর চড়াও হয়ে রোহিত আগ্রাসী হয়ে উঠলে পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে অবশ্য হারিস রউফের গতির কাছে হার মানতে হয় তাকে। ব্যাটের কানায় লেগে বল উঠে গেলে দুই ফিল্ডারের ভুল বুঝাবুঝিতে আরেকটু হলে অবশ্য সুযোগ পেয়ে যাচ্ছিলেন ভারত অধিনায়ক। তবে খুশদিল শাহ ক্যাচ লুফে নিলে ১৬ বলে ২৭ রানেই থামেন রোহিত; পাওয়ারপ্লেতে ভারত তোলে ৬২ রান।
পাওয়ারপ্লের পর আক্রমণে এসেই ওই ২৮ রানেই রাহুলকে ফেরান শাদাব খান। সূর্যকুমার যাদবকে নিয়ে নতুন করে শুরুর চেষ্টাটাও অবশ্য করতে পারেননি কোহলি। স্কয়্যার লেগে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ দিয়ে যে যাদব ফিরে যান ১৩ রানেই। নাওয়াজ-শাদাব জুটি এরপর আঁটসাঁট স্পেল করলে গেরো খুলতে গিয়ে শাদাবের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ঋষাভ পান্ট ১৪ রানে ফেরার পরের ওভারেই নাওয়াজের দুর্দান্ত ক্যাচে হাসনাইনের শিকার হয়ে রানের খাতা খোলার আগেই ফেরেন হার্দিক পান্ডিয়া। এক প্রান্ত আগলে রেখে লড়াইটা তাই একাই চালিয়ে যেতে হয় কোহলিকে।
১৮তম ওভারে এসে দীপক হুডাকে সঙ্গী করে ১৬ রান নেন কোহলি; ওই ওভারের শেষ বলেই দারুণ এক ফ্লিকে ছয় মেরে কোহলি ৩৬ বলে পূর্ণ করেন তার ৩২তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফিফটি, যা এই ফরম্যাটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ১৯তম ওভারে হুডাকে ১৬ রানে ফিরিয়ে নাসিম শাহ দারুণ এক ওভার করার পর শেষ ওভারে ৪৪ বলে ৬০ রান করে রান আউট হয়ে থামেন কোহলি। হারিসের শেষ ওভারটা যাচ্ছিল পাকিস্তানের মনমতই। কিন্তু উইকেটে এসেই রবি বিষ্ণোই পেয়ে যান টানা দুই চার, দুটোই ফাখারের ভুলে। প্রথমবার বলের গতিবিধি ঠাহর করে না উথতে পারা ফাখার শেষ বলে বিষ্ণোইয়ের ক্যাচ ছেড়ে সেটা বানিয়ে দিলেন চার। সেই ৮টি রান শেষে পাকিস্তানকে ভোগাতে পারত; উলটো ভারতকে ভুগিয়েছে আরশদীপের ফেলে দেওয়া ক্যাচ।