নেট সেশন: পাকিস্তানের তৃতীয় নাকি শ্রীলংকার ষষ্ঠ?
এশিয়া কাপ, ২০২২, ফাইনাল
পাকিস্তান-শ্রীলংকা
কবে, কখন
১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
রাত ৮.০০টা, বাংলাদেশ সময়
এশিয়া কাপে উড়ছে শ্রীলংকা। বাংলাদেশের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে সুপার ফোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ; যেভাবে খেলেছে লংকানরা, তা দেখে মনে হতেই পারে আফগানিস্তানের বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচের ফলাফলটা বোধহয় নেহাতই এক দুর্ঘটনা ছিল। ব্যাটে-বলে আত্মবিশ্বাসী, অনবদ্য এক শ্রীলংকা টিকেট কেটেছে এবারের এশিয়া কাপ ফাইনালের।
ওদিকে পাকিস্তান হেরেছে মাত্র এক ম্যাচ; চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে। এরপর গ্রুপ পর্বে হংককে উড়িয়ে সুপার ফোরে ভারত ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুটো শ্বাসঃরুদ্ধকর ম্যাচ জিতে সবার আগে ফাইনাল নিশ্চিত করেছেন বাবর আজমরা। আফগানদের বিপক্ষে সেই ম্যাচের নায়ক ছিলেন নাসিম শাহ। শেষ ওভারে এক উইকেট হাতে রেখে টানা দুই ছক্কায় দলকে তুলেছেন ফাইনালে। এর আগে ভারতের বিপক্ষেও ম্যাচটা পাকিস্তান জিতেছে নখ কামড়ানো উত্তেজনার আবহে।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আত্মবিশ্বাসে টুইটুইম্বুর শ্রীলংকা মাঠে নামবে ধারাবাহিক পাকিস্তানের বিপক্ষে। সব মিলিয়ে পাকিস্তান এখন পর্যন্ত দুইবারব ঘরে তুলেছে এশিয়া কাপের শিরোপা। লংকানরা এশিয়ান ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার জিতেছে পাঁচবার।
পাকিস্তান
এশিয়া কাপে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সর্বোচ্চ সাফল্য ২০১৪ সালের আসরে রানার আপ হওয়া। গত দুই আসরেও তেমন সুবিধা করতে পারেনি দলটি। সর্বশেষ এশিয়া কাপ জিতেছিল ২০১২ সালে।
এবার পাকিস্তানের আশার প্রদীপ দুই ওপেনার বাবার আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে দুজনের জুটি থেকে এসেছে ৩০০ রান। যদিও তাদের ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আছে বিস্তর; একইসাথে পাকিস্তানের শক্তি ও দুর্বলতা। শুরুটা দুর্দান্ত করলেও মাঝে গিয়ে খেই হারায় এই জুটি। স্ট্রাইকরেট যার অন্যতম কারণ।
এবারের টুর্নামেন্টে বাবরের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৩০। তার সঙ্গী রিজওয়ান ছন্দেই আছেন। আছে সত্তরোর্ধ্ব দুটি ইনিংস। যদিও শ্রীলংকার বিপক্ষে শেষ দেখায় ১৪ রানে আউট হয়েছিলেন। ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে দুজনই নিশ্চয়ই চাইবেন একসাথে জ্বলে উঠতে। টপ অর্ডারে ফখর জামান, ইফতিখার আহমাদ, খুশদিল শাহদের সাথে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেন শাদাব খানও। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দারুণ এক ইনিংসে ম্যাচের লাগাম নিজেদের দিকে টেনে ধরেছিলেন। সাথে দারুণ লেগ স্পিন তো আছেই। স্লগ ওভারের জন্য আলাদা নজরে থাকবেন আসিফ আলী। ভারতের বিপক্ষে সুপার ফোরের ম্যাচটা রিজওয়ানের গড়ে দেয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে একাই জিতিয়েছিলেন এই পাওয়ার হিটার।
ইনজুরির কারণে এশিয়া কাপে নেই শাহীন শাহ আফ্রিদি। পেস আক্রমণের দায়িত্ব নাসিম শাহ, হারিফ রউফদের সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন মোহাম্মদ হাসনাইন। দুই ম্যাচ খেলে ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে গিয়েছিলেন শাহনেওয়াজ দাহানিও। তবে সেই চোট থেকে সেরে উঠেছেন ডানহাতি এই পেসার। ফাইনালের মঞ্চে হাসনাইনের জায়গায় সেরা একাদশে দেখা যেতে পারে তাকে।
শ্রীলংকা
গৃহযুদ্ধ, রাজনৈতিক কারণে অনেকদিন ধরেই উত্তাল শ্রীলংকা। তবে সেখান থেকে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ভারত মহাসাগরের তীরের দেশটি। এশিয়া কাপেও লংকানদের শুরুটা ছিল নড়বড়ে। আফগানিস্তানের কাছে প্রথম ম্যাচে ১০৫ রানে গুটিয়ে গিয়ে আট উইকেটে হারের পর কে ভেবেছিল শ্রীলংকা ফাইনাল খেলবে? কিন্তু পাশার দান বদলে দিয়ে টানা চার ম্যাচ জিতে শ্রীলংকা নিশ্চিত করেছে ফাইনাল। মজার ব্যাপার হচ্ছে সেই চার ম্যাচের চারটিতে লংকানদের জয় এসেছে রান তাড়া করে। সুপার ফোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি ছাড়া বাকি তিন ম্যাচের সবগুলোই এসেছে শেষ ওভারে।
দুই ওপেনার পাথুম নিসাংকা, কুসাল মেন্ডিস। ঘুরেফিরে ওপেন করেছেন দানুশকা গুনাথিলাকাও। টপ অর্ডারে তার সাথে চারিথ আসালাংকা। মিডল আর লেট অর্ডারে অধিনায়ক দাসুন শানাকার সাথে ভানুকা রাজাপাক্ষে। সব মিলিয়ে দারুণ করেছে শ্রীলংকার ব্যাটিং অর্ডার। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরের ম্যাচের কথা।
লক্ষ্য ছিল ১৭৬ রানের। শ্রীলংকা সেটা টপকে যায় ৫ বল হাতে রেখেই। সেদিন লংকানদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন কুসাল মেন্ডিস। বাকিরাও বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলেছিলেন। রাজাপাক্ষের ব্যাট থেকে এসেছিল ১৪ বলে ৩১ রানের দারুণ এক ক্যামিও। মোদ্দাকথা এই শ্রীলংকা সাহসী, হিসেবী। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী হাত খুলে খেলা কিংবা এক প্রান্ত আগলে রেখে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার নজির তারা দেখিয়ে গেছে গোটা এশিয়া কাপেই।
পেস বোলিংয়ে শানাকার তিন ভরসা আসিথা ফার্নান্দো, দিলশান মাদুশংকা ও চামিকা করুনারত্নে। তাদের সাথে ব্রেক থ্রু এনে দেয়ার সাথে রানের চাকাও আটকে ধরতে পটু মাদুশংকা ও হাসারাঙ্গা। ফাইনালেও হয়তো এই পাঁচ স্পেশালিস্ট বোলারকেই দেখা যেতে পারে সেরা একাদশে। দুই-এক ওভারের কমতি থাকলে সেটা নিজেই পুষিয়ে দিতে পারবেন অধিনায়ক শানাকা।
রঙ্গমঞ্চ
এশিয়া কাপের এবারের ফাইনালে মঞ্চ দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। শেষ পাঁচ ম্যাচের চারটিতে জিতেছে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করা দল। তাই ফাইনালে টসও হয়ে উঠবে এক্স ফ্যাক্টর। এই মাঠেই ১৭০-এর বেশি রান করেও শ্রীলংকার কাছে হেরেছে ভারত ও আফগানিস্তান। পাকিস্তানও সুপার ফোরের ম্যাচে দুবাইতেই হারিয়েছিল ভারতকে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে তাপমাত্রা থাকবে ৩৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসের আশেপাশে। আদ্রতার মাত্রা ছুঁতে পারে ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত। ডিউ ফ্যাক্টরও হতে পারে ম্যাচের নিয়ামক।
সম্ভাব্য একাদশ
পাকিস্তান: বাবর আজম (অধিনায়ক), মোহাম্মদ রিজওয়ান, ফখর জামান, ইফতিখার আহমেদ, খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ নাওয়াজ, আসিফ আলী, শাদাব খান, নাসিম শাহ, হারিস রউফ, মোহাম্মদ হাসনাইন/শাহনেওয়াজ দাহানি।
শ্রীলংকা: পাথুম নিসাংকা, কুসাল মেন্ডিস, দানুশকা গুনাথিলাকা, ভানুকা রাজাপাক্ষে, দাসুন শানাকা (অধিনায়ক), ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, চামিকা করুনারত্নে, চারিথ আসালংকা, মাহিশ থিকশানা, দিলশান মাদুশংকা, আসিথা ফার্নান্দো।
সংখ্যার খেলা
১৬
এশিয়া কাপে দুই দলের মুখোমুখি দেখা হয়েছে ১৬ বার। এর মধ্যে পাকিস্তান জিতেছে ৫টি, বাকি ১১টি জিতেছে শ্রীলংকা।
৪
দুই দলে শেষ পাঁচ দেখায় ৪বার জিতেছে শ্রীলংকা
১
এর আগে এশিয়া কাপে পাকিস্তান-শ্রীলংকা ফাইনাল হয়েছে দুটি। সমান ১টি করে জিতেছে দুই দলই