ক্ষণে ক্ষণে রং বদলানোর ম্যাচে ফাইনালের টিকেট কাটল পাকিস্তান
এশিয়া কাপ, সুপার ফোর, শারজাহ (টস-পাকিস্তান/বোলিং)
আফগানিস্তান-১২৯/৬, ২০ ওভার (ইব্রাহিম ৩৫, জাযাই ২১, রশিদ ১৮*, হারিস ২/২৬, নাসিম ১/১৯, নাওয়াজ ১/২৩)
পাকিস্তান-১৩১/৯, ১৯.২ ওভার (শাদাব ৩৬, ইফতিখার ৩০, রিজওয়ান ২০, মালিক ৩/৩১, ফারুকী ৩/৩১, রশিদ ২/২৫)
ফলাফল: পাকিস্তান ১ উইকেটে জয়ী
পেন্ডুলামের মত দুলছে ম্যাচের কাঁটা। এই পাকিস্তান সহজ জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তো ১৮তম ও ১৯তম ওভারে এসে ফাজালহক ফারুকী ও ফরিদ আহমেদ মালিক ৪ উইকেট তুলে নিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে আফগানিস্তানকে জয়ের কাছে নিয়ে আসছেন। অথচ যেই ফারুকী হতে পারতেন নায়ক, তিনিই হয়ে গেলেন খলনায়ক। এগারো নম্বর ব্যাটার নাসিম শাহকে টানা দুটি ফুল টস দিলেন। তরুণ নাসিম মাথা ঠান্ডা রেখে লুফে নিলেন সেই সুযোগ; মারলেন টানা দুই ছয়। সেই সাথে রুদ্ধশ্বাস এক ম্যাচে জয় দিয়ে পাকিস্তান কেটে ফেলল ফাইনালের টিকেট; আর আফগানিস্তানের পাশাপাশি ভারতকেও ধরিয়ে দিল বাড়ি ফেরার টিকেট।
ম্যাচ যে এই পরিস্থিতে এসেছিল তার নেপথ্যে কিন্তু ছিলেন ফারুকীই। প্রথম ওভারেই বাবর আজমকে গোল্ডেন ডাকের স্বাদ দিয়েছিলেন। ৪র্থ ওভারে মুজিব-উর-রহমান এরপর ফাখার জামানকেও ফেরালে পাওয়ারপ্লেতে পাকিস্তান তুলতে পারে ৩৬ রান। তবে ৮ম ওভারে রশিদ যখন ২০ রানে এশিয়া কাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মোহাম্মদ রিজওয়ানকে ফেরালেন তখন আফগান শিবির প্রকৃতার্থেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।
স্বল্প পুঁজি নিয়ে দেখা সেই স্বপ্ন ভেস্তে দিতেই এরপর শাদাব খান-ইফতিখার আহমেদ গড়েন সময়োপযোগী জুটি। ইফতিখার সুবিধা না করতে পারলেও প্রান্ত বদল করছিলেন নিয়মিত; অন্য প্রান্তে শাদাব খেলছিলেন স্বাচ্ছন্দ্যে। ১৬তম ওভারে মালিকের শিকার হয়ে ৩৩ বলে ৩০ রানে ইফতিখার ফিরলেও পাকিস্তান তখনও অবিচল। পাকিস্তানের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে পরের ওভারে ২৬ বলে ৩৬ রানের ইনিংস শেষে রশিদের শিকার হয়ে শাদাব ফিরলে। এরপর তো ফারুকী-মালিকের দুই ওভারের ঝড়ে পাকিস্তান পরাজয়ের চিন্তায় ডুবে যায়। ১৮তম ওভারের প্রথম বলেই মোহাম্মদ নাওয়াজকে ফেরানোর পর শেষ বলে খুশদিল শাহকে ফিরিয়ে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন ফারুকী। পরের ওভারে হারিস রউফ ও আসিফ আলীকে ফিরিয়ে সেই পালে জোর হাওয়া লাগান মালিক। কিন্তু দিনটি যে আফগানিস্তানের নয়। নয়ত আনকোরা ব্যাটার নাসিমকে শেষ ওভারে অরকম ফুল টস দেন ফারুকী, যে কিনা স্বপ্নটা দেখাতে শুরু করেছিলেন!
এর আগে আফগানিস্তান অবশ্য টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ঝড়ো শুরু করেছিল। মোহাম্মদ হাসনাইনের করা দ্বিতীয় ওভারের শেষ দুই বলে টানা দুই ছয়ে আবারও জ্বলে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। ৪র্থ ওভারে হারিস রউফকে এরপর টানা দুই চারে স্বাগত জানানর পরের বলেই জীবন পান হযরতউল্লাহ জাযাই। তবে এক বল পরেই অন্য প্রান্ত থাকা গুরবাজের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন হারিস। পরের ওভারে হাসনাইনের বলে একই পরিণতি হয় জাযাইয়ের। পাওয়ারপ্লেতে আফগানিস্তান তুলতে পারে ৪২ রান।
পাওয়ারপ্লের পর থেকেই আফগান ব্যাটারদের চেপে ধরে পাকিস্তান। সেই চাপেরই পরিক্রমায় গেরো খুলতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ তুলে দিয়ে মোহাম্মদ নাওয়াজের শিকার হয়ে ১৫ রানে ফেরেন করিম জানাত। অন্য প্রান্ত আগলে থাকা ইব্রাহিম জাদরান এগুচ্ছিলেন একেবারেই শ্লথ গতিতে। শাদাবের করা ১৫তম ওভারে ছয় মেরে অন্য প্রান্তে ভাই নাজিবউল্লাহ আক্রমণের দায়িত্ব নিতে গিয়ে শেষ বলটাও মাঠছাড়া করতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ১০ রানে। পরের ওভারের প্রথম বলেই রানের খাতা খোলার আগে ফিরে যান আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবীও। অন্যদিকে ইব্রাহিমকে তখনও গিয়ার পাল্টাতে বেগ পেতে হয়, যার ফলশ্রুতিতে হারিসের গতির কাছে হার মেনে শেষ হয় তার ৩৭ বলে ৩৫ রানের ইনিংস। ইব্রাহিম ফেরায় ঘোর বিপদে পড়া আফগানিস্তানকে শেষ ওভারে রশিদ এক চার-ছয়ে নিয়ে যান ১২৯ রানে। রশিদের সেই ১৮ রানের ইনিংসের পর বল হাতেও চেষ্টাটা ছিল সর্বোচ্চ। তবে এক তরুণ পেসারের বিষাদের অশ্রুর বিনিময়ে হেসেছেন আরেক তরুণ পেসার; আর নাসিমের সেই গর্জনে পাকিস্তান তাদের মত করেই ফাইনালের পথ ধরেছে।