• ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২
  • " />

     

    বিশ্বকাপের জন্য কতটা প্রস্তুত কাতার?

    বিশ্বকাপের জন্য কতটা প্রস্তুত কাতার?    

    আর মাত্র দুই মাস বাকি কাতার বিশ্বকাপের। চলতি বছরের ২১ নভেম্বর সেখানে পর্দা উঠতে যাচ্ছে ফুটবলের এই মহোৎসবের। ফুটবলের সবচেয়ে বড় এই আসরকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতিই সেরে রাখছে কাতার কর্তৃপক্ষ। বানিয়েছে দৃষ্টিনন্দন সাতটি স্টেডিয়াম, চালু হয়েছে পাঁচ লেনের মহাসড়ক, বিশ্বের নানান প্রান্ত থেকে আসতে চলা ভক্ত-সমর্থকদের জন্য  ৩৬ বিলিয়ন ডলার খরচ করে বানানো হয়েছে মেট্রো রেল। সব মিলিয়ে চার সপ্তাহের এই ফুটবল উৎসবের জন্য কতটা প্রস্তুত কাতার? 

     

    কতটা প্রস্তুত কাতার?

    ৮০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন লুসাইল স্টেডিয়ামের উদ্বোধন হয়েছে মিশরের যামালেক ও সৌদি আরবের আল-আহলি ক্লাবের মধ্যকার প্রীতি ম্যাচ দিয়ে। এই মাঠেই ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের ফাইনাল। লুসাইলসহ মোট সাতটিই স্টেডিয়ামই প্রস্তুত বিশ্বকাপের জন্য। 

    আলাদা করে নজর কেড়েছে আল-বাইত ও আল জানুব স্টেডিয়াম। দুটি ভেন্যুই গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন মুক্তার আদলে। ভক্ত-সমর্থকদের জন্য এক ভেন্যু থেকে আরেক ভেন্যুতে যাওয়ার জন্য বানানো হয়েছে পাঁচ লেনের মহাসড়ক ও মেট্রো রেল। যার মাধ্যমে এক ঘণ্টার মধ্যে আল জানুব স্টেডিয়াম থেকে যাওয়া যাবে কাতারের সর্বদক্ষিণের আল-বাইত স্টেডিয়ামে। 

    যাতায়াতের ব্যবস্থা সুগম আপাতত। তবে বেশিরভাগ স্টেডিয়ামের চারপাশেই মরু ঘেরা। সেখানে চলছে নির্মান কাজ, কোনো কোনো জায়গা খালি পড়ে আছে পার্কিং স্পট হিসেবে। তাই শঙ্কা আছে বিদেশি ভক্ত-সমর্থকদের থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় সুবিধাদি পাওয়া নিয়ে। তবে আয়োজকরা জানিয়েছেন, বিশ্বকাপ আসতে আসতে স্টেডিয়াম পার্শ্ববর্তী এলাকাজুড়ে তারা ফ্যান জোন, খাবারের স্টল তৈরির কাজ সম্পন্ন করবেন তারা। 

    সকলের আবাসন নিশ্চিত করাটাও বিশ্বকাপ আয়োজকদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। যদিও কাতারে বছরজুড়েই চলে ইমারত নির্মানের প্রক্রিয়া। বিশ্বকাপের পর্দা উঠতে উঠতে কিছু হোটেল-অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হয়ে গেলেও বেশিরভাগই অসম্পন্ন থেকে যাবে। লুসাইল স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় চলছে এক মেগা প্রজেক্টের কাজ; থাকবে হোটেল, রেস্তোরা, অ্যাপার্টমেন্ট। যদিও পুরোপুরি আলোর মুখ দেখতে সময় লাগবে পাঁচ বছর। 

    কোথায় থাকবেন দর্শকরা? 

    বিশ্বকাপ দেখতে দুনিয়ার নানান প্রান্ত থেকে কাতারের মাটিতে সমাগম হবে প্রায় ১.৩ মিলিয়ন দর্শকের। যা কাতারের বর্তমান জনসংখ্যার অর্ধকের সমান। কাজেই আবাসন নিয়ে বেশ ঝক্কি পোহাতে হবে দর্শক ও আয়োজকদের। 

    দোহা থেকে ২০ মিনিটের নৌ ভ্রমনের মাধ্যমে বানানা আইল্যান্ডের স্লিপিং পডে থাকার জন্য যেতে পারবেন বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়া সমর্থকরা। যেখানে রাতপ্রতি ৮০ ডলারের বিনিময়ে থাকতে পারবেন তারা। কিন্তু দুঃসংবাদ হচ্ছে সেই স্লিপিং পডগুলোর বেশিরভাগই বুকিং দিয়ে রেখেছেন ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড দলের পরিবারের সদস্যরা। দোহার আবাসিক হোটেলগুলোর বেশিরভাগই বরাদ্দই থাকবে আয়োজক কমিটি, ফিফার কর্মকর্তাদের জন্য। যদিও টুর্নামেন্টের আগে ২০ হাজারটি রুমের বন্দোবস্ত করবে কাতার; যা চাহিদার বিপরীতে অপ্রতুলই বলা চলে। অবশ্য আয়োজকরা সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠবেন বলে আশাবাদী। 

    অ্যালকোহলের বিধি-নিষেধ

    কাতারে অ্যালকোহলের লভ্যতা থাকলেও বিশ্বকাপে দর্শকদের অ্যালকোহল গ্রহণে থাকছে বিধি-নিষেধ। ম্যাচ চলাকালীন গ্যালারিতে বিয়ার কিংবা সে জাতীয় কিছু গ্রহণ করতে পারবেন না তারা। তবে ম্যাচের আগে ও পরে সেই সুযোগ থাকছে। 

    অমুসলিম দর্শক-সমর্থকরা অনুমতি সাপেক্ষে কাতার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কাছ থেকে অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় কিনতে পারবেন। অনুমোদিত এলাকার বাইরে গিয়ে কেউ অ্যালকোহল গ্রহণ করলে ছয় মাসের কারাদন্ডের পাশাপাশি ৮০০ ডলার জরিমানা গুনতে হবে।  

    পরিবহন সুবিধা কেমন? 

    মেট্রো রেলে চড়ে খুব সহজেই এক ভেন্যু থেকে অন্য ভেন্যুতে যেতে পারবেন দর্শকরা। বর্তমানে এর জন্য মাত্র ৬ রিয়াল খরচ করতে হলেও, ম্যাচের টিকেটধারী দর্শকরা যাতায়াত করতে পারবেন বিনামূল্যে। এর বাইরে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস ‘উবার’ ব্যবহারের সুযোগও থাকছে। 

     

    এয়ার কন্ডিশনিং স্টেডিয়াম

    স্টেডিয়াম ৯৭৪ ছাড়া বাকি সবগুলো ভেন্যুতেই থাকছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা। কাতারে নভেম্বর-ডিসেম্বরের প্রত্যাশিত তাপমাত্রা হচ্ছে  ৩০ ডিগ্রী। বিশেষ এক ভেন্টের মাধ্যমে হাওয়া ঠান্ডা করে গ্যালারির তাপমাত্রা নামিয়ে আনা হবে ২১-১২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। 

    মাঠের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে ঘাসের নিচে থাকা ৩৫০টি স্বয়ংক্রিয় সেন্সর। ফুটবলারদের গায়ের তাপমাত্রা পরিমাপ করবে সেই অনুযায়ী কাজ করবে সেন্সরগুলো। হিসেব করবে বাতাসের আর্দ্রতাও। ধুলোবালি সরানোর জন্য নিয়মিত বিরতিতে বাতাস ফিল্টারের ব্যবস্থাও থাকছে সেখানে। 

    তথ্যসূত্র: ইএসপিএন