• ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
  • " />

     

    বাবর-রিজওয়ানের আলোয় উদ্ভাসিত সিডনি, ১৩ বছর পর ফাইনালে পাকিস্তান

    বাবর-রিজওয়ানের আলোয় উদ্ভাসিত সিডনি, ১৩ বছর পর ফাইনালে পাকিস্তান    

    ১ম সেমিফাইনাল, সিডনি (টস- নিউজিল্যান্ড/ব্যাটিং)

    নিউজিল্যান্ড- ১৫২/৪, ২০ ওভার (মিচেল ৫৩*, উইলিয়ামসন ৪৬, আফ্রিদি ২/২৪)

    পাকিস্তান- ১৫৩/৩, ১৯.১ ওভার (রিজওয়ান ৫৭, বাবর ৫৩, স্যান্টনার ১/২৬)

    ফলাফল: পাকিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী।

    লক্ষ্য ১৫৩, বাবর আজম-মোহাম্মদ রিজওয়ানের আরেকটি ‘পারফেক্ট’ চেজের সুযোগ? এই পিচেই সবশেষ যে ম্যাচ হয়েছিল, তাতে ১৪১ রানের পুঁজি নিয়েই ইংল্যান্ডকে চেপে ধরেছিল শ্রীলংকা। কিন্ত এদিন চেনা নিউজিল্যান্ডর দেখা পাওয়াই দায়। শুরুতে ধাক্কার পর মিচেলের ফিফটিতে কিউইরা পাকিস্তানকে দিয়েছিল ১৫৩ রানের লক্ষ্য। বাবর-রিজওয়ানে শতরানের জুটিতে আরেকটি পারফেক্ট চেজের গল্প লিখে পাকিস্তান ফাইনালে পা রাখলো ১৩ বছর পর। অথচ এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূলপর্ব পাকিস্তান শুরু করেছিল টানা দুই হারে। 

     

    প্রথম ওভারেই বাবরের ক্যাচ উঠেছিল, কনওয়ের মুঠোয় তা বন্দী হয়নি। এরপর বাবর-রিজওয়ান জুটি উড়তেই থাকে। নিউজিল্যান্ড তাদের থামানোর পথ খুঁজে পেতে হয়রান হচ্ছিল কেবল। পাওয়ারপ্লেতে নিয়মিত বাউন্ডারি বের করেছে পাকিস্তান। তৃতীয় ওভারে তিনটি চার মারেন দুজনে মিলে, পঞ্চম ওভারে আরও তিনটি। পাওয়ারপ্লেতেই পাকিস্তান তুলে ফেলে ৫৫ রান, এই বিশ্বকাপে তাদের সর্বোচ্চ।

    বাবর-রিজওয়ান জুটি চলতি বিশ্বকাপে হতাশ করছিল পাকিস্তানকে, কিন্ত এদিন জ্বলে উঠলেন দুজনেই। ইনিংসের অর্ পাকিস্তান সহজ রান তাড়ার সম্ভাবনা জাগিয়ে দিয়েছিল। ১২তম ওভারেই একশ পূর্ণ করে ফেলে পাকিস্তান। ৩৮ বলে ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন বাবর। কিন্ত ফিফটির পরেই মারতে গিয়ে ৫৩ রানে আউট হয়ে যান বাবর। 

    পাকিস্তানের গায়ে আগ্রাসী হাওয়া লাগানো হারিস এসেই মারমুখী ব্যাট করেন। সিডনির স্লো পিচ তাকে কিছুটা রুখলেও পাকিস্তানের তাতে সমস্যা হয়নি। রিজওয়ান ৫৭ রানে আউট হওয়ার সময়ে পাকিস্তান চলে এসেছিল তিন ওভারে ২১ রানের সমীকরণে। পাঁচ বল বাকি থাকতেই সেই সমীকরণ সমাধান করে নিউজিল্যান্ডকে আরেকটি হৃদয়ভাঙা হার উপহার দেয় পাকিস্তান। 

    এই মাঠেই নিউজিল্যান্ড শুরু করেছিল তাদের বিশ্বকাপ যাত্রা, প্রথম বলেই চার মেরে সেমিতে এসে সেই স্মৃতিই মনে করিয়ে দেন ফিন অ্যালেন। স্টার্ককে সেদিন হতভম্ব করে দিয়েছিলেন, এদিন সামনে শাহিন। শাহিনের পরের দুই বলে দুইবার দেখলেন আম্পায়ারের আঙুল তোলা, দুইবারই রিভিউ নিলেন। প্রথমবার বেঁচে গেলেও দ্বিতীয়বার পারলেন না। চার রানে অ্যালেনের ফেরার পর কনওয়ে-উইলিয়ামসন মিলে দেখেশুনে খেলতে থাকেন। পাওয়ারপ্লেতে বাউন্ডারির অভাব হলেও নিউজিল্যান্ড ইনিংস এগিয়ে যায় তাদের সিঙ্গেল-ডাবলসে। কিন্ত দুর্ভাগ্য, পাওয়ারপ্লের শেষ বলে শাদাবের দুর্দান্ত ডিরেক্ট হিটে কনওয়েকে ফিরে যেতে হয় ২১ রানে। 

    ফর্মে থাকা গ্লেন ফিলিপসও ৬ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরলে বিপদে পড়ে যায় কিউইরা। উইলিয়ামসনের সঙ্গে পুনরুদ্ধারের কাজে যোগ দেন মিচেল। মিচেল কিছুটা আগ্রাসী হলেও উইলিয়ামসন স্ট্রাইক বদলের কাজেই মনযোগ দেন। বলপ্রতি রানে খেলে ইনিংসের অর্ধেক শেষে কিউইরা সংগ্রহ করে ৫৯ রান। এরপরেই আক্রমণ শুরু করেন মিচেল। পরের চার ওভারে নিউজিল্যান্ড এনে ফেলে ৪০ রান। ১৫তম ওভারে একশ পেরিয়ে যায় কিউইরা। তখনও সাবধানে খেলে যাচ্ছিলেন উইলিয়ামসন। আক্রমণে গিয়ে পুষিয়ে দিতে চাইলেন যখনই, বোল্ড হয়ে বিদায় নিতে হল ৪৬ রানে। 

    মিচেলের ব্যাটে এগিয়ে যেতে থাকে নিউজিল্যান্ড। পাকিস্তানি আক্রমণের সামনে যদিও বাউন্ডারি খুঁজে নিতে বেগ পেতে হয়েছিল কিউই ব্যাটারদের, তবে দারুণ রানিং বিট্যুইন দ্যা উইকেটে তারা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। গেলবারের মতো সেমি-ফাইনালে এসেই জ্বলে উঠেন মিচেল। ৩২ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন শেষ ওভারে গিয়ে। অপরপ্রান্তে নিশাম এসে ১২ বলে ১৬ রানের ইনিংস খেলেন। নিউজিল্যান্ড তাই ১৫২ রানের সম্বল নিয়ে নামতে পারে বিশ্বকাপ স্বপ্ন বাঁচাতে। কিন্ত বাবর-রিজওয়ান জুটি যেদিন জ্বলে উঠে, সেদিন এমন লক্ষ্য যথেষ্ট হওয়ার নয়!