হার্ভ রেনার্ড : যার জাদুর ছোঁয়ায় অঘটনের ছবি আঁকল সৌদি আরব
অবিশ্বাস্য! অকল্পনীয়। উপমা খুঁজতে গিয়ে হাঁসফাঁস হবার যোগাড়। গায়ে চিমটি কেটে নিশ্চিত হতে হয়েছে নির্ঘাত কারো কারো। আসলেই এমনটা হয়েছে কিনা! চর্মচক্ষে যা দেখেছেন সেটা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য কিনা! আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছে সৌদি আরব। শক্তি-সামর্থ্য, ইতিহাস আর সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্সের বিচারে আর্জেন্টিনার ধারেকাছেও থাকার কথা নয় যাদের। বিশ্বকাপ শিরোপার অন্যতম দাবিদার সেই আর্জেন্টিনাকেই স্তব্ধ করে দিয়ে বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম এক অঘটন ঘটাল সৌদি আরব। যার নেপথ্যে আছেন কোচ হার্ভ রেনার্ড।
গত ১১ বছরে ১১ বার কোচ বদলেছে সৌদি আরব। তবে সাবেক ফরাসি ফুটবলার রেনার্ড বেশ ভাগ্যবানই বলা চলে। টানা তিন বছর ধরে সামলাচ্ছেন সৌদি আরবের ডাগ আউট। তার সেই ভাগ্যের ছোঁয়া পেলেন যেন সালেম আল দাওসারিরা। ম্যাচের দশ মিনিটেই পেনাল্টিতে লিওনেল মেসির কাছে গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। তবে দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিট থেকে সৌদি আরব যেভাবে প্রেসিং ফুটবল খেলেছে, তাতে প্রথমার্ধের সাথে রাত-দিন তফাৎ।
৪৮ মিনিটে ম্যাজিশিয়ান হয়ে আসেন সালেহ আল শেহরি। ৫ মিনিট পরই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন নাম্বার টেন আল দাওসারি। এরপর আক্রমণে বারবার উঠেছেন লিওনেল মেসিরা। কিন্তু রেনার্ডের রক্ষণভাগের যোদ্ধারা একের পর এক সবই সামলেছেন। গোলরক্ষক আল ওয়াইজ প্রথমার্ধে নড়বড়ে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে হয়ে ওঠেন মজবুত এক প্রাচীর; যাতে কেবল ঠোকাঠুকিই করে গেছে ল্যাটিন আমেরিকার সেরা দলটা। শেষ বাঁশি বাজার পর সৌদি আরবের লেখা হয়ে যায় বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা অঘটনের গল্প। যে গল্পটার অন্যতম কারিগর সোনালী চুলো ফরাসি ট্যাকটিক্যাল জিনিয়াস হার্ভ রেনার্ড।
সৌদি আরবের সাথে যুক্ত হওয়ার আগে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার এক ডজন ক্লাব ও জাতীয় দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন রেনার্ড। দুই দশকেরও বেশি পুরনো কোচিং ক্যারিয়ারে আছে দুইটা আফকন শিরোপা। ২০১২ সালে জাম্বিয়া আফকন জিতেছিল তার অধীনে। ২০১৫ সালের আসরে আফকনের এই শিরোপাটাই জিতেছিল আইভরি কোস্ট। দুটো জয়েরই নেপথ্যের নায়ক রেনার্ড। আর এবার তো আর্জেন্টিনা বড়সড় হোঁচট খেল তারই হাতে আঁকা ট্যাকটিক্যাল নকশায়। আর্জেন্টিনা বারবার যে অফসাইডের ফাঁদে পড়ে একের পর এক গোল বঞ্চিত হচ্ছিল, তার পেছনেও রেনার্ডেরই কারিশমা। দলকে খেলিয়েছেন হাই-লাইন ডিফেন্সে।
ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনেও বলেছিলেন, ‘পিকনিক করতে আসিনি। নিজেদের সেরাটা দিতেই এসেছি।’ সেই কথা তো রেখেছেন রেনার্ড। তার ট্যাকটিক্যাল জাদুর ছোঁয়ায় বিশ্বকাপের মঞ্চে, মরুর বুকে দারুণ একটা ছবিও এঁকে দিল সৌদি আরব। যে ছবিটা সৌদি আরবের ফুটবল ইতিহাস তো বটেই, বিশ্বকাপের বিশাল এক্সিবিশনেও আলাদা জায়গা নিয়ে থাকবে।
ছবিটা দেখেছেন কি? রুপকার্থে ব্যবহার করা যায় আনহেল ডি মারিয়া উবু হয়ে মাথা ঢাকছেন হতাশায়, পাশ দিয়ে শূন্য দৃষ্টি নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন লিওনেল মেসি। আর পাশেই সিজদারত সৌদি আরবের দুই ফুটবলার।