• ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    শান্তর 'শান্ত' ইনিংস, অলরাউন্ড মিরাজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ইতিহাস

    শান্তর 'শান্ত' ইনিংস, অলরাউন্ড মিরাজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ইতিহাস    

    ২য় টি-টোয়েন্টি, মিরপুর (টস-বাংলাদেশ/বোলিং)
    ইংল্যান্ড- ১১৭, ২০ ওভার (ডাকেট ২৮, সল্ট ২৫, মঈন ১৫, মিরাজ ৪/১২, হাসান ১/১০, সাকিব ১/১৩)
    ইংল্যান্ড- ১২০/৬, ১৮.৫ ওভার (শান্ত ৪৬*, মিরাজ ২০, হৃদয় ১৭, আর্চার ৩/১৩, রেহান ১/১১, কারান ১/১৫)
    ফলাফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী

     

    দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। মিরপুরের স্পিন বান্ধব পিচে মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণিতে ইংল্যান্ডকে নাকানিচুবানি খাওয়ানোর পর সেই মিরাজের সময়োপযোগী ইনিংস ও নাজমুল হোসেন শান্তর দায়িত্বশীল ইনিংসে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সেই সাথে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়ে নিশ্চিত করেছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়।

    ১১৮ রানের লক্ষ্যে পাওয়ারপ্লেতে দুই ওপেনারকে বাংলাদেশ হারিয়েছিল পেসারদের কাছে। স্যাম কারানের আঘাতে ৯ রানে লিটন দাস ফেরার পর সেই ৯ রানেই জফরা আর্চারের বাউন্সারে ফিরেছিলেন রনি তালুকদার। তৌহিদ হৃদয়কে নিয়ে এরপর বিপদ সামলাতে ঝুঁকিমুক্ত ইনিংস খেলার জন্য শান্ত ছিলেন বদ্ধপরিকর। দশম ওভারের পর অবশ্য গিয়ার পাল্টানোর চেষ্টা করেন হৃদয়। এর আগে দারুণ এক ছয় মারলেও রেহান আহমেদ আক্রমণে আসলে তার নিরীহ এক লেগ ব্রেকে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে তিনি ফেরেন ১৭ রানে।

    হৃদয় ফেরার পর বাংলাদেশ ও শান্তকে অনেকটাই নির্ভার করেছিলেন মিরাজ। আদিল রশিদের বলে কাভারের ওপর দিয়ে যেই ইনসাইড আউট শটে বল মাঠছাড়া করলেন সেটা তো রীতিমত চোখে লেগে থাকার মত। তবে আর্চারের বাউন্সারে মিরাজকেও বিদায় নিতে হয় ১৬ বলে ২০ রানের ইনিংস শেষে। মিরাজ ফেরার পরের দুই ওভারেই বাংলাদেশ হারায় দুই উইকেট; জাগে শঙ্কা। রানের খাতা খোলার আগেই মঈন আলীকে মাঠছাড়া করতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দিয়ে সাকিব ফেরার পর আর্চারের বলে স্টাম্প খুইয়ে ফেরেন আফিফ হোসেন। চেপে বসার সুযোগ পেয়ে ইংল্যান্ড যখন ম্যাচ ছিনিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছিল তখনও মাথা ঠাণ্ডা রেখেছিলেন শান্ত। তবে নেমেই তুলির শেষ আঁচড়টা সুনিপুণভাবে টানলেন তাসকিন। ১৯তম ওভারে প্রথম আক্রমণে আসা ক্রিস জর্ডানকে টানা দুই বলে কাভারের ওপর দিয়ে চার মেরে বাংলাদশকে তিনি পৌঁছে দেন ঐতিহাসিক এক জয়ের বন্দরে; অন্য প্রান্তে ৪৭ বলে ৪৬* রানে অপরাজিত থেকে শান্ত যেই জয়ের অন্যতম কান্ডারিও বটে।

    এর আগে এদিন ইংল্যান্ডের হয়ে জস বাটলারের বদলে ওপেন করতে নেমেছিলেন ডাভিড মালান। প্রায় সবকিছুতেই ব্যাট চালাতে থাকার পর তাসকিনের শিকার হয়ে তাই তিনি ফিরেছিলেন তৃতীয় ওভারেই। তাতে অবিচল থেকে ফিল সল্ট ও তিনে নামা মঈন ইংল্যান্ডকে এনে দিয়েছিলেন দারুণ শুরু; পাওয়ারপ্লেতেই তারা তুলে ফেলেছিলেন ৫০ রান। তবে পাওয়ারপ্লের পরের ওভারেই সাকিব আল হাসান আক্রমণে এলে সেখান থেকেই ঘোরে ম্যাচের মোড়। তাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ১৯ বলে ২৫ রান শেষে সল্ট ফিরলে সাকিব দেখান তার অধিনায়কত্বের জাদু। ইংল্যান্ডের কোনও ব্যাটারকেই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আগানোর সুযোগ দেননি; বল করিয়েছেন ৮ জনকে দিয়ে। সময়োপযোগী পরিবর্তন আনায় বোলাররা সাকিবকে দিয়েছেন যথার্থ প্রতিদান। পরের ওভারেই আক্রমণে এসে সবচেয়ে বড় উইকেটটাই  বোধহয় নিলেন আগের দিন দুর্দান্ত বল করা হাসান মাহমুদ। বাটলারকে মাত্র ৪ রানে দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়ে বাংলাদেশকেও যেন পথ দেখান হাসান।

    সেই পথ অনুসরণ করেই এরপর ইংল্যান্ডকে স্পিন বিষে নীল করেন মিরাজ। মিরাজকে সুইপ করতে গিয়ে এরপরের ওভারেই ১৫ রানে মঈন ফিরলে বেন ডাকেট ও স্যাম কারান বিপদ সামলানোর চেষ্টা করেন। তবে ১৫তম ওভারে এসে আবারও হন্তারকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হলেন মিরাজ। বেরিয়ে আসা কারানকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলার এক বল পরে প্রায় একই ভঙ্গিতে ক্রিস ওকসকেও ফেরান তিনি। নিজের স্পেলের শেষ ওভারে এরপর জর্ডানকেও ফিরিয়ে নিজের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা স্পেলের রেকর্ড গড়েন তিনি। তার পরিক্রমায় শেষ ওভারে দুটো রান আউটের সাথে ২৮ রানে থাকা ডাকেটের স্টাম্প উপড়ে দারুণ এক ওভারে শেষটা টানেন মোস্তাফিজুর রহমান। ইংল্যান্ডের সেই সংগ্রহ দিন শেষে স্নায়ু ধরে রেখে টপকে ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায়ই রচনা করল সাকিব আল হাসানের দল।