• ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    লিটন-শান্ত জুটি, কিপটে মোস্তাফিজে ইংল্যান্ড 'বাংলাওয়াশ'-এর শিকার

    লিটন-শান্ত জুটি, কিপটে মোস্তাফিজে ইংল্যান্ড 'বাংলাওয়াশ'-এর শিকার    

    ৩য় টি-টোয়েন্টি, মিরপুর (টস-ইংল্যান্ড/বোলিং)
    বাংলাদেশ- ১৫৮/২, ২০ ওভার (লিটন ৭৩, শান্ত ৪৭*, রনি ২৪, জর্ডান ১/২১, রশিদ ১/২৩)
    ইংল্যান্ড- ১৪২/৬, ২০ ওভার (মালান ৫৩, বাটলার ৪০, ওকস ১৩*, তাসকিন ২/২৬, মোস্তাফিজ ১/১৪, তানভীর ১/১৭)
    ফলাফল: বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী

     

    ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজেই বাজিমাত করল বাংলাদেশ। লিটন দাস-নাজমুল হোসেন শান্তর ৫৮ বলে ৮৪ রানের জুটিতে ইংল্যান্ডকে দেড়শো-পেরুনো লক্ষ্য ছুঁড়ে দেওয়ার পর মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ওয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ।

    ১৫৯ রানের লক্ষ্যে ইংল্যান্ডকে শুরুতেই অপ্রস্তুত করে দিয়েছিল বাংলাদেশ। অভিষিক্ত তানভীর ইসলামের হাতে বল তুলে দেওয়া হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তারা যাত্রা শুরু হয় চার খেয়ে। তবে এক বলের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়িয়ে দারুণ এক ঘূর্ণিতে ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পেলে নিজের প্রথম উইকেটটা পেয়ে যান এই বাঁহাতি স্পিনার। ঠিক পরের ওভারেই ৬ রানে থাকার সময় ডাভিড মালানকে এলবিডব্লিউ দেওয়া হলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে গিয়ে সেখান থেকে বাংলাদেশের ওপর ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেন তিনি। জস বাটলারকে সঙ্গী করে পাওয়ারপ্লেতে ইংল্যান্ডকে নিয়ে যান ৪৭ রানে। সাকিব আল হাসানের করা পাওয়ারপ্লের পরের ওভারেই টানা চার-ছয় মেরে গিয়ার পাল্টানোর ইঙ্গিতটাও দেন মালান। তা করতে গিয়ে ৪৩ রানে কাভারে ক্যাচ তুলে দেওয়ার পর তৌহিদ হৃদয় আপ্রাণ চেষ্টা করেও সেটা লুফে নিতে না পারায় বেঁচে যান মালান।

    হাসান মাহমুদের সেই দুর্ভাগা ওভারের পর মোস্তাফিজও এসে দারুণ এক ওভার করে চাপে ফেলে দেন দুই ব্যাটারকে। তবে এরপর তাসকিনকে আক্রমণের জন্য বেঁছে নিয়ে সেই চাপ সামাল দেন এতক্ষণ নিশ্চুপ থাকা বাটলার। দুজনেই আক্রমণে যাওয়ার বার্তা দিলে ৪৩ বলে নিজের ১৬তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফিফটি তুলে নেন মালান। ফিফটি পাওয়ার এক ওভার পরেই মোস্তাফিজের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বাউন্সার টেনে মারতে গিয়ে লিটনের দারুণ ক্যাচে থামেন ৪৭ বলে ৫৩ রানে থাকা মালান। ঠিক পরের বলেই পয়েন্ট থকে মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত সরাসরি থ্রোতে নাকাল হন ৩১ বলে ৪০ রানে থাকা বাটলার।

    ম্যাচের ধারা পাল্টে সেখান থেকেই ইংল্যান্ডকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। নিজের স্পেলের শেষ ওভারে এসে তাসকিন আহমেদ হানেন জোড়া আঘাত, ফেরান মঈন আলী ও বেন ডাকেটকে। শেষ ৩ ওভারে ৩৬ রান প্রয়োজন হলে ১৮তম ওভারে মোস্তাফিজ গুনেন মোটে ৫ রান। সময়ের হিসেবে বাংলাদেশ এক ওভার পিছিয়ে থাকলে ১৯তম ওভার করতে এসে সাকিব ফেরান স্যাম কারানকে, সেই সাথে দেন মাত্র ৪ রান। শেষ ওভারে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন তাই ২৭ রান হয়ে দাঁড়ালে বাংলাদেশের জয়টাই তখন কাম্য। হাসানের প্রথম দুই বলেই ক্রিস ওকস চার মেরে কিছুটা ভয় ধরিয়ে দিলেও পরের চার বলে হাসান দেন মোটে ২ রান। সেই সাথে বাংলাদেশ পেয়ে যায় ঐতিহাসিক এক সিরিজ জয়ের দেখা।

    এর আগে এদিন সিরিজে প্রথমবারের মত টসে হারার পর ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালই করেছিলেন লিটন-রনি জুটি। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে জফরা আর্চারের বলে বোকা বনে আকাশে ক্যাচ ভাসালেও রেহান আহমেদ সেই সুযোগ লুফে নিতে না পারায় বেঁচে যান রনি। পাওয়ারপ্লেতে কোনও উইকেট না হারিয়ে তাই বাংলাদেশ তোলে ৪৬ রান। তবে পাওয়ারপ্লের এক ওভার পরেই আঁটসাঁট লাইনে বল করতে থাকা আদিল রশিদকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ২২ বলে ২৪ রান শেষে ফেরেন রনি।

    রনির ফেরার পরে লিটন উইকেটে কিছুটা সময় নেন; সেই সাথে ফর্মে থাকা শান্তও তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন। মিরপুরের উইকেট বুঝে খেলে ৪১ বলে লিটন পূর্ণ করেন তার ৯ম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফিফটি। ফিফটি পাওয়ার পরের ওভারের প্রথম বলেই অবশ্য আর্চার তাকে ফেরানোর সুযোগ তৈরি করেছিলেন। ৫১ রানে থাকার সময় তার কিছুটা খাটো লেংথের বল লিটন আকাশে ভাসালে অনেকটা দৌড়ে এসে বল হাতের নাগালে পেলেও ফেলে দেন ডাকেট। তবে তাতে নিরাশ না হয়ে ইংল্যান্ড চেপে বসে উইকেটে থিতু দুই ব্যাটারের ওপর। তারই পরিক্রমায় জর্ডানের খাটো লেংথের ডেলিভারি ব্যাটে-বলে করতে না পেরে শেষ হয় লিটনের ৫৭ বলে ৭৩ রানের দারুণ ইনিংস। ইংল্যান্ডের তিন পেসারের দুর্দান্ত ডেথ বোলিংয়ে বড় সংগ্রহের ভিত পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ ৫ ওভারে তারা তুলতে পেরেছিল ২৭ রান। শান্ত ৩৬ বলে ৪৭* রানে অপরাজিত থাকলেও বাংলাদেশ তাই থেমেছিল ১৫৮ রানে। দিন শেষে দারুণ বোলিং পারফর্ম্যান্সে সেটাকেই যথেষ্ট বানিয়ে বাংলাদেশ পরে গড়েছে ইতিহাস।