• ২০২৩ এশিয়া কাপ
  • " />

     

    চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মহারণের মঞ্চে জল ঢেলে বৃষ্টির শেষ হাসি

    চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মহারণের মঞ্চে জল ঢেলে বৃষ্টির শেষ হাসি    

    এশিয়া কাপ ২০২৩, গ্রুপ পর্ব, পাল্লেকেলে (টস-ভারত/ব্যাটিং)
    ভারত - ২৬৬, ৫০ ওভার (হার্দিক ৮৭, কিষান ৮১, বুমরাহ ১৬, আফ্রিদি ৪/৩৫, নাসিম ৩/৩৬, রউফ ৩/৫৮)
    ফলাফল: ম্যাচ পরিত্যক্ত


    জমজমাট এক লড়াইয়ের জন্য মঞ্চ তৈরি ছিল, মঞ্চের কান্ডারিরাও নিজেদের মেলে ধরেছিলেন আপন গণেই। কিন্তু সেই উত্তেজনায় জল ঢেলে শেষ হাসি হাসল বৃষ্টি। ক্যান্ডিতে চার বছর পর ওয়ানডেতে ভারত-পাকিস্তানের প্রথম অধ্যায়টা দর্শকদের দিয়েছিল দুহাত ভরেই। দুর্দান্ত পেস বোলিং, মাঝে ভারতের দক্ষ ব্যাটিং, শেষে আবারও পেসারদের দাপট - দারুণ ক্রিকেটের দিনে শাহীন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ, নাসিম শাহদের আগুন সামলে ঈশান কিষান, হার্দিক পান্ডিয়াদের ফিফটিতে পাকিস্তানকে ২৬৭ রানের লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছিল ভারত। অথচ লক্ষ্য তাড়া করতে এক বলের জন্য নামতেই পারল না পাকিস্তান।

    বৃষ্টির সম্ভাবনা মাথায় নিয়েও ভারতের ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনেককেই বিস্মিত করেছিল। তবে মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ার সুযোগ নিতে যেন মুখিয়ে ছিল পাকিস্তান, হল সেটাই। দুর্দান্ত পেস বোলিংয়ে রোহিত শরমা-শুবমান গিলের ওপেনিং জুটির সামনে একের পর এক প্রশ্ন তুলে চলেছিলেন আফ্রিদি ও নাসিম শাহ। বৃষ্টিতে একবার খেলা বন্ধ হওয়ার আগে একবার করে সুযোগ পেয়েছিলেন দুজনেই। তবে বৃষ্টির পর সেসব আক্ষেপের সুযোগ দেননি আফ্রিদি। ৫ম ওভারে টানা দুটো আউট সুইঙ্গারের পর দুর্দান্ত এক ফুল লেংথের ইন সুইঙ্গারে উপড়ে ফেলেন ১১ রানে থাকা ভারত অধিনায়কের স্টাম্প, মনে করিয়ে দেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেই উইকেটটার কথাই। তার পরের ওভারেই ভিরাট কোহলি স্টাম্পে বল ডেকে মাত্র ৪ রানে ফিরলে গর্জে উঠে পাকিস্তান। মিইয়ে যাওয়া ভারতকে জাগিয়ে তুলতে উইকেটে এসে শ্রেয়াস আইয়ার ভাল শুরু করলেও প্রথম পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে হারিস রউফের বলে সরাসরি মিড উইকেটে ফাখার জামানকে ক্যাচ তুলে দেন, ১৪ রানে। আরও এক পশলা বৃষ্টির পর রীতিমত ধুঁকতে থাকা গিল ১৫-তম ওভারে ফেরেন ৩২ বলে ১০ রান, রউফের দ্বিতীয় শিকার হয়ে।

    ম্যাচের দৃশ্যপটে সেখান থেকেই আসে পরিবর্তন। হার্দিককে সঙ্গী করে স্পিনারদের আক্রমণের সুযোগ নিয়ে উইকেটে থিতু হয়ে যান কিষান; সেই সাথে দুজনে মিলে রান রেট পাঁচের নিচে নামতে দেননি। প্রান্ত বদলের পাশাপাশি নিয়মিত বাউন্ডারি তুলে নিয়ে পাকিস্তানের গড়ে তোলা চাপ নিমেষেই যেন ধুলোয় লুটিয়ে দেন এই দুজন। চাপ সামাল দিয়ে ৫৪ বলে এরপর ফিফটি পেয়ে যান কিষান; যার ফলশ্রুতিতে হার্দিক ফিফটি পেয়ে যান ৬৪ বলে। দুজনে মিলে গিয়ার পালটানোর চিন্তা করতে করতেই ৩৭-তম ওভারে দলীয় ২০০ রানও পূর্ণ করে ফেলেন।

    তবে সেই ওভারেই কিষান কিছুটা খোঁড়ানো শুরু করলে তিনি যে বাউন্ডারির খোঁজ করবেন সেটা বোঝা যাচ্ছিল। সেটা আঁচ করেই পরের ওভারে ফিল্ডিং সাজিয়ে রউফ কিছুটা খাটো লেংথের বল করলেই ফাঁদে পা দেন কিষান। টেনে মারতে গিয়ে মিড অনে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়ে শেষ হয় তার ৮১ বলে ৮২ রানের দারুণ ইনিংস। এর আগে দুই নবাগতকে চেপে না ধরার ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার রবীন্দ্র জাদেজাকে থিতু হওয়ার সুযোগ দেননি বাবর। তারই পরিক্রমায় হাত খুলতে গিয়ে আফ্রিদির দারুণ এক স্লোয়ার পড়তে পারেননি হার্দিক; বাকি কাজটুকু দক্ষতার সাথে আঘা সালমান সারলে ৯০ বলে ৮৭ রানে থামেন হার্দিক। ওই ওভারের শেষ বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে জাদেজা ১৪ রানে ফিরলে ম্যাচে ফিরে আসে পাকিস্তান; ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে জোড়া আঘাত হেনে আফ্রিদি আবারও ত্রাস সঞ্চার করেন। পরের ওভারের প্রথম বলেই শার্দুল ঠাকুরকে ফিরিয়ে নিজের প্রথম উইকেট পান সারাদিন জুড়েই দারুণ বল করলেও ভাগ্য সহায় না হওয়া নাসিম। পরে তিনি কুলদিপ যাদবকে এবং অন্য প্রান্তে ১৪ বলে ১৬ রান করা জাসপ্রিত বুমরাহকে ফেরালে ভারত শেষমেশ তুলতে পারে ২৬৬ রান। দিনশেষে ভারতের সিদ্ধান্তে যে খুব একটা ভুল ছিল না সেটা বোঝাই গেল। ব্যাটিংয়ে নামতে পারলেও পাকিস্তানের কাজটা কঠিন হত ডিএলএসের সমীকরণে। তবে কোনও ফলাফল না আসায় দুই দলই যে হতাশ হবে তা বলাই বাহুল্য।