• ২০২৩ এশিয়া কাপ
  • " />

     

    ওয়েলালাগের অল-রাউন্ড বীরত্ব ম্লান করে কুলদীপ-জাদেজার ঘূর্ণিতে ফাইনালে ভারত

    ওয়েলালাগের অল-রাউন্ড বীরত্ব ম্লান করে কুলদীপ-জাদেজার ঘূর্ণিতে ফাইনালে ভারত    

    এশিয়া কাপ ২০২৩, সুপার ফোর, কলম্বো (টস-ভারত/ব্যাটিং)
    ভারত - ২১৩, ৪৯.১ ওভার (রোহিত ৫৩, রাহুল ৩৯, কিষান ৩৩, ওয়েলালাগে ৫/৪০, আসালাঙ্কা ৪/১৮, থিকশানা ১/৪১)
    শ্রীলঙ্কা - ১৭২, ৪১.৩ ওভার (ওয়েলালাগে ৪২*, ধনঞ্জয়া ৪১, আসালাঙ্কা ২২, কুলদীপ ৪/৪৩, জাদেজা ২/৩৩, বুমরাহ ২/৩০)
    ফলাফল: ভারত ৪১ রানে জয়ী


     


    পাকিস্তানের বিপক্ষে দাপুটে জয়ের পরের দিনেই এবার শ্রীলঙ্কাকেও হারিয়ে ফাইনালে এক পা দিয়ে রাখল ভারত। দুনিথ ওয়েলালাগের অল-রাউন্ড প্রচেষ্টা ভারতের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ালেও কুলদীপ যাদব, রবীন্দ্র জাদেজাদের ঘূর্ণিজালে আটকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে শ্রীলঙ্কাকে।

    ২১৪ রানের লক্ষ্যটাও যে এই পিচে কঠিন হতে যাচ্ছে তা অনুমান করাই যাচ্ছিল। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই পাথুম নিসাঙ্কাকে ফিরিয়ে সেই ধারণাটাই আরও বদ্ধমূল করেন জাসপ্রিত বুমরাহ। সপ্তম ওভারেই ১৬ বলে ১৫ রানে থাকা কুশল মেন্ডিসকেও ফেরান তিনিই। সাথে মোহাম্মদ সিরাজ টানা দুই মেইডেন দিয়ে চাপ সৃষ্টি করলে সেটার ফল তিনি পান ১৮ বলে ২ রানে থাকা দিমুথ করুনারত্নের অস্থির হয়ে ওঠা এক শট থেকে ফেরার রাস্তা তৈরি করে।

    প্রথম পাওয়ারপ্লেতেই ম্যাচ জয়ের আশা ক্ষীণ হয়ে এলেও বল হাতে এদিন দুর্বোধ্য আসালাঙ্কা বিপদ সামলানোর চেষ্টা করেন সাদিরা সামারাবিক্রমাকে নিয়ে। তবে কুলদীপ আক্রমণে এসে দুজনের প্রতিরোধ গুড়িয়ে দেন নিমেষেই। ১৮-তম ওভারে সময়ের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এক শট খেলতে গিয়ে ৩১ বলে ১৭ রানে স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়ে থামেন সাদিরা। কুলদীপের পরের ওভারেই সুইপ করতে গিয়ে উইকেটকিপার রাহুলের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়া ক্যাচে থামেন ৩৫ বলে ২২ রান করা আসালাঙ্কাও। অধিনায়ক দাসুন শানাকাকে নিয়ে এরপর ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করতে থাকলেও ২৬-তম ওভারে রোহিতের দারুণ ক্যাচে শানাকা ৯ রানে ফেরেন জাদেজার শিকার হয়ে।

    ম্যাচটার শেষ অনেকেই ওখানেই দেখে ফেললেও হার মানতে নারাজ ছিলেন তরুণ বোলিং অলরাউন্ডার ওয়েলালাগে। ধনঞ্জয়ার সাথে যোগ দিয়ে স্পিনারদের দারুণভাবে সামলালেন, বাজে বলে বাউন্ডারিও বের করলেন। তবে মনঃসংযোগে বিচ্ছেদ ঘটে তার অভিজ্ঞ সঙ্গী ধনঞ্জয়ার। জাদেজাকে বেরিয়ে এসে তুলে মারতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে ৬৬ বলে ৪১ রানে ধনঞ্জয়া থামলে শ্রীলঙ্কার আশাটাও এক অর্থে শেষ হয়ে যায়। ওয়েলালাগে এক প্রান্ত ধরে রাখলেও কুলদীপকে ফেরানো হলে তিনি একাই দুই উইকেট নিয়ে আর ওয়েলালাগেকে বিশেষ কিছু করার সুযোগ দেননি। পাকিস্তানের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও বিষাক্ত স্পিনে উইকেটের মাঝে থেকে ১৫০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন এই চায়নাম্যান।


    এর আগে ব্যাটিং নিয়ে ভারতের শুরুটা হয়েছিল মনমতই। শ্রীলঙ্কার পেসারদের তোয়াক্কা না করে রোহিত শর্মা-শুবমান গিল জুটি চলছিলেন আপন গতিতে। ৭ম ওভারে কাসুন রাজিথাকে সোজা এক ছয় মেরে ১০,০০০ ওয়ানডে রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন রোহিত। সেখান থেকে দুজনেই গিয়ার পাল্টানোর নিয়ত করলে দাসুন শানাকার দ্বিতীয় ওভারে চার চারে ১৭ রান তোলেন রোহিত। তবে পেসারদের নিষ্ফলা স্পেলের কারণে ১২-তম ওভারে ওয়েলালাগেকে আক্রমণে আনতেি আস্থার প্রতিদান দেন এই বাঁহাতি অফ স্পিনার। অন্য প্রান্তে রয়েসয়ে খেলা গিলের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন একদম প্রথম বলেই। ২৫ বলে ১৯ রান করে গিল ফিরলে ভাঙে ৮০ রানের ওপেনিং জুটি। পরের ওভারে চার দিয়ে ৪৪ বলে ভারত অধিনায়ক ফিফটি পূর্ণ করলেও নিজের পরের ওভারে ১২ বলে ৩ রান করা ভিরাট কোহলির প্রতীক্ষিত উইকেটটাও পেয়ে যান ওয়েলালাগে; প্রেমাদাসায় টানা চার সেঞ্চুরির পর কোহলি অবশ্য এক অর্থে উইকেটটা উপহার দিয়েছেন। ছুটতে থাকা ওয়েলালাগে নিজের পরের ওভারের প্রথম বলে ভারতের টপ অর্ডারে হানেন আরেকটি বড় আঘাত; ৪৮ বলে ৫৩ রানে থাকা রোহিতের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন দারুণ এক আর্ম বলে।

    দ্রুতই তিন উইকেট হারিয়ে বসা ভারতকে উদ্ধার করতে লোকেশ রাহুল-ঈশান কিষান জুটি সময় নেন। ১১ ওভারেই ৮০ রান করা ভারত পরের ১৬ ওভারে করতে পারে মোটে ৫৪ রান। ওই ওভারে ওয়েলালাগেকে টানা দুই চার মেরে হাত খোলার ইঙ্গিত দেন তাই রাহুল। তবে ওয়েলালাগে এদিন যেন খাতায় নাম লিখে উইকেটের সারিতে টিক দেওয়ার ছক কেটে রেখেছিলেন মাথায়। নিজের পরের ওভারে তাই সেই ৪৪ বলে ৩৯ রানে থাকা রাহুলকেই ফেরালেন ফিরতি ক্যাচে।

    স্পিনের কার্যকারিতা বুঝে শানাকা অন্য প্রান্তে আক্রমণে আনেন চারিথ আসালাঙ্কাকে; নিজের তৃতীয় ওভারেই ৬১ বলে ৩৩ রানে থাকা কিষানকে থামান এই অফ স্পিনার। তবে সেটার জন্য তিনি ধন্যবাদ দিতে পারেন শর্ট এক্সট্রা কাভারে দুর্দান্ত ক্যাচ নেওয়া সেই ওয়েলালাগেকেই। দারুণ সেই কাচের পর নিজের স্পেল শেষ করতে এসে ভারতের ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় জল ঢেলে শেষ বলে হার্দিক পান্ডিয়াকেও উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করান, রিভিউয়ের সুবাদে। ওয়েলালাগের পাঁচ উইকেটের পরিক্রমায় এরপর স্পিনের জাল বুনে ৪ রানে ফেরান জাদেজা ও ৫ রানে বুমরাহকে। শেষদিকে মোহাম্মদ সিরাজকে নিয়ে অবশ্য চেষ্টা চালিয়েছিলেন অক্ষর পাটেল। বৃষ্টি বাগড়া দিলে সেই অধ্যায়ের পর শেষ ওভারে গিয়ে মাহিশ থিকশানার শিকার হয়ে তিনি ৩৬ বলে ২৬ রানে থামলে ভারত পায় ২১৩ রানের সংগ্রহ। বৃষ্টি, কঠিন উইকেট সেই সংগ্রহকেও দিনশেষে নিয়ে গিয়েছে শ্রীলঙ্কার নাগালের বাইরেই। ওয়েলালাগে বনাম ভারতের লড়াই শেষে তাই ফাইনালের রাস্তায় হাঁটা দিয়েছে ভারতই। আর বাংলাদেশের বিদায় নিশ্চিত করে পাকিস্তানের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার ম্যাচটাকে বানিয়েছে অঘোষিত এক সেমি-ফাইনাল।