'শাইনিং' শানাকা, সঙ্গে হেলস
টি-টোয়েন্টি! দুজনের নাম শুনলে এতদিন হয়তো মনে হতো ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটের নামই। দাশুন শানাকা ও অ্যালেক্স হেলস, হেডিংলির আজকের দিনটা কি দুজনের জন্যই হয়ে থাকবে ‘টি-টোয়েন্টি’ তকমাটা গা থেকে ঝেড়ে ফেলার শুরুর যাত্রা হিসেবে!
একজন ওপেনার। আরেকজন অল-রাউন্ডার, লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিংয়ের সঙ্গে ‘ মিডিয়াম পেস’। একজন টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ৪৪টি, আরেকজন ১০টি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুজনের শুরুই এ ফরম্যাট দিয়ে। হেলসের টেস্ট দলে যাত্রাটা ক্রমান্বয়েই হয়েছে, টি-টোয়েন্টি-ওয়ানডে-টেস্ট। শানাকা সে তুলনায় একটা ধাপ ‘টপকে’ গেছেন, টি-টোয়েন্টি থেকেই যে সরাসরি টেস্ট!
দুজনকেই একই বিন্দুতে আনলো ‘ইংলিশ গ্রীষ্মের'’ প্রথম দিন। হেডিংলি টেস্টের বৃষ্টিস্নাত প্রথম দিনে নিজ নিজ দলের ‘নায়ক’ তো এ দুজনই। হেলস ব্যাট হাতে অপরাজিত ৭১ রান করে, আর শানাকা ৩০ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
১০টি টি-টোয়েন্টি খেলা শানাকার অভিষেকটা কি একটু বিস্ময়ই জাগিয়েছিল? লেস্টারশায়ারের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচে আট নম্বরে নেমে করেছিলেন সেঞ্চুরি, অন্তত ব্যাটসম্যান হিসেবে ‘নড়বড়ে’ শ্রীলঙ্কা দলে জায়গা পাওয়াটা বিস্ময় জোগায় না তেমন। তবে হেডিংলির মেঘাচ্ছন্ন কন্ডিশনে শানাকা বিস্ময় উপহার দিলেন বল হাতে! টস জিতে ফিল্ডিং নেয়া অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে ঠিক প্রমান করতেই যেন আউট করলেন অ্যালেস্টার কুক, নিক কম্পটন, জো রুটকে। নিরীহ পেস, বলকে পিচড আপ করিয়ে বাকীটা যেন ছেড়ে দিলেন ইংলিশ কন্ডিশনের ওপর। চিরায়ত নিয়ম মেনে বল সুইং করলো, কিছুটা হালকাই। তবে তাই যথেষ্ট হলো, ইংল্যান্ডের শুরুর তিন ব্যাটসম্যানকে বোকা বানাতে।
তিনজনই খেলতে গিয়েছিলেন ফ্রন্ট ফুটে, বলের ‘ডেভিয়েশন’ তাঁদের ড্রাইভগুলোকে বানিয়েছে আত্মঘাতি। চার বলের মধ্যেই কুক ও কম্পটনকে ফেরানোর পর শানাকা পেয়েছেন বোধহয় তাঁর সংক্ষিপ্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ‘সেরা উপহার’- জো রুটের উইকেট!
শানাকার উইকেটগুলোই বাড়িয়ে দিচ্ছে হেলসের ইনিংসের গুরুত্বটা। শ্রীলঙ্কান পেসারের তুলনায় 'অভিজ্ঞ' ইংলিশ ওপেনার নেমেছিলেন পঞ্চম টেস্ট খেলতে, তবে আগের চার টেস্টে বলার মতো কিছু করতে পেরেছিলেন কই! আট ইনিংসে ১৭ গড়, সঙ্গে একটা মাত্র ফিফটি। হেলস কিছু একটা করতে মুখিয়েই ছিলেন নিশ্চয়ই!
অধিনায়ক কুক ইতিহাস গড়া ‘৩৬’ রান করতে পারলেন না, কম্পটন পারলেন না তিন নম্বরে নিজের অবস্থানের স্বপক্ষে জোরালো যুক্তি দিতে, হেডিংলির ঘরের ছেলে রুটের ব্যাটটা এই গ্রীষ্মের শুরুতে হাসলো না! তবে হেলস ঠিকই রইলেন এক প্রান্ত যক্ষের ধনের মতো আগলে। ১২ চারে করলেন ৭১ রান, জনি বেইরস্টোর সঙ্গে তাঁর ৮৮ রানের জুটিটাই ইংল্যান্ডকে যা আশা জোগাচ্ছে!
কাল হেডিংলি অপেক্ষায় থাকবে হেলসের তিন অঙ্কের, শানাকার পাঁচ উইকেটের। সঙ্গে থাকবে অননুমেয় ইংলিশ আবহাওয়া, আর মাস তিনেক পর ফিরে আসা টেস্ট ক্রিকেটের রোমাঞ্চের স্বাদও!
কাল কার হাসিটা হবে জোরালো? শানাকা নাকি হেলসের?