রাবিওর জোড়া হেডার, রোনালদোর বাইসাইকেল: যেমন গেল এই সপ্তাহের নেশনস লিগ
২০০৬ বিশ্বকাপের ফাইনাল বলুন বা ২০০০ ইউরোর ফাইনাল - ইতালি ও ফ্রান্সের মুখোমুখি হওয়া মানেই যেন জমজমাট কোনো এক ম্যাচের যজ্ঞ বসে যায়। দুই দলের শক্তির ফারাকটা বাড়লেও প্রতিদ্বন্দ্বীতার খাতিরে সেই আশা দর্শকদের ছিল বটে। সেদিক থেকে অবশ্য পুরোপুরি হতাশ হতে হয়নি। ফ্রান্স জয় পেলেও ম্যাচ ছিল ঘটনাবহুল।
মাত্র তিন মিনিটের মাথায় ডিনিয়ার ভাসানো কর্নারে মাথা লাগিয়ে বল জালে জড়ান রাবিও। তবে ফ্রান্সকে আরও একবার এগিয়ে দেওয়ায় ডিনিয়ার পায়ের অবদান শুধু নয়, ইতালি গোলকিপার ভিকারিওর অবদানও ছিল। ২৫ গজ দূর থেকে দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিক নেন ডিনিয়া। সামনে বল লাফিয়ে উঠলে বল উলটা জালেই ঠেলে দেন ভিকারিও। এর দুই মিনিটের মাথায় ডি মার্কোর বাড়ানো ক্রস থেকে দারুণ এক ভলিতে এক গোল ফেরত দেন ক্যাম্বিয়াসো। তবে সময় গড়াতে আবারও ইতালির জালে বল জড়ানোর কাজে জুটি বাধে রাবিও-ডিনিয়া, আবারও গোলের ধরন সেই সেটপিস থেকে হেডার। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর এই প্রথম ফ্রান্সের হয়ে কেউ একই ম্যাচে সেটপিস থেকে দুটো হেডারে গোল পেয়েছে।
দলগত লড়াইয়ের দিক থেকে গত রাতের এই ম্যাচ নিয়ে অনেক কথা হলেও এই সপ্তাহের চায়ের টেবিলে ঝড় তোলা বিষয় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জোড়া গোল; আরও বলতে গেলে জোড়া গোলের ধরন - দুর্দান্ত এক বাইসাইকেল কিক, পানেনকা পেনাল্টি। ইতালি ও ফ্রান্সের যেমন ম্যাচের আগেই নক-আউটের জায়গা নিশ্চিত ছিল, পর্তুগালের তেমনটা ছিল না। তবে পোল্যান্ডকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে কাজটা সফলতার সাথেই সেরেছে পর্তুগিজরা।
অথচ প্রথমার্ধে কোনো গোল পায়নি পর্তুগাল। নুনো মেন্ডেসের ক্রস থেকে মাথা লাগিয়ে প্রথম গোলটা এনে দেন রাফায়েল লেয়াও। গোলের উৎসবে রোনালদো এরপর যোগ দেন পানেনকা পেনাল্টি দিয়ে। তবে পর্তুগালের তৃতীয় গোলটাও ছিল দেখার মতো; বক্সের কোনা থেকে দুর্দান্ত এক শটে বল জালে জড়ান ব্রুনো ফার্নান্দেস। চেলসির হয়ে দারুণ ফর্মে থাকা নেতো বুদ্ধিদীপ্ত ফিনিশে পর্তুগালের চার নম্বর গোল এনে দেওয়ার পর ম্যাচের শেষের দিকে রোনালদো দেখান ঝলক। ডান প্রান্ত থেকে কনসেসাও বল হালকা ভাসালে বাঁ প্রান্তে ওঁত পেতে থেকে রোনালদোর পেছনে চলে যায় ক্রসটা ৩৯ বছর বয়সী রোনালদো সেটা দেখেই, গোলকিপারের পরিবর্তিত অবস্থান বুঝে নিজেই ভাসলেন বাতাসে; এয়ার সিআরসেভেন দারুণ এক বাইসাইকেল কিকে পরাস্ত করলেন গোলকিপারকে।
পর্তুগালের গোলবন্যার আগে গোলের বহর বসিয়েছিল জার্মানি। বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনাকে গুণে গুণে সাত গোল দিয়েছে জার্মানরা। ফর্মে থাকা মুসিয়ালা মাত্র দুই মিনিটেই দলকে এগিয়ে দেওয়ার পর তার সতীর্থ সানেও পেয়েছেন গোল। দুটো করে গোল পেয়েছেন ক্লাইনডিয়েন্সট ও ভিয়ারৎজ; সেই সাথে গোল পেয়েছেন আর্সেনাল তারকা হ্যাভারৎজ।
অন্যদিকে নকআউট নিশ্চিত করা ডাচরাও হাঙ্গেরির বিপক্ষে পেয়েছে বড় জয়। ডাগআউটে সাবেক স্ট্রাইকার ও কোচ অ্যাডাম শালাই হুট করেই লুটিয়ে পড়ায় ম্যাচটা অবশ্য ছিল শঙ্কায় ঘেরা। হাসপাতালে নেওয়ার পর অবশ্য শালাই এখন স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন। এর আগে ভিগহরস্ট, গাকপো, ডামফ্রিস ও কুপমেইনার্সের কাছে গোল হজম করে দিনটা একেবারেই বিষণ্ণ হয়ে কেটেছে হাঙ্গেরিয়ানদের।
বড় দলগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে দুটো ম্যাচেই যেন উড়েছে লি কার্সলির ইংল্যান্ড। দায়িত্ব ছাড়ার আগে সবাইকেই যেন সুযোগ দিয়েছেন কোচ। সেই সুযোগ নিয়ে গতকাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে গোল বন্যায় তো ওয়েম্বলির দর্শকদের ভাসিয়েছে ইংলিশরা বটেই, সেই সাথে ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে প্রথম গোল পেয়েছেন চার জন অ্যান্থনি গর্ডন, কনর গ্যালাঘার, জ্যারড বাওয়েন, হারউড-বেলিস। এর আগে যেই গ্রিসের বিপক্ষে ঘরের মাঠে গোলশূন্য ড্র করেছিল, তাদের জালেও তাদের মাঠে গিয়ে তিন গোল দিয়ে এসেছে ইংলিশরা।
গ্রিস ০-৩ ইংল্যান্ড
ইংল্যান্ড ৫-০ আয়ারল্যান্ড
ইতালি ১-০ বেলজিয়াম
ইতালি ১-৩ ফ্রান্স
ফ্রান্স ০-০ ইসরায়েল
পর্তুগাল ৫-১ পোল্যান্ড
স্পেন ২-১ ডেনমার্ক
জার্মানি ৭-০ বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা
নেদারল্যান্ডস ৪-০ হাঙ্গেরি