• " />

     

    ইয়র্কশায়ারে ইয়র্কশায়ারের সকাল, ল্যাঙ্কাশায়ারের বিকেল

    ইয়র্কশায়ারে ইয়র্কশায়ারের সকাল, ল্যাঙ্কাশায়ারের বিকেল    

    হতাশায় নুয়ে পড়া জিমি অ্যান্ডারসন। একপাশে উল্লাসে উন্মত্ত শ্রীলঙ্কান দল। আরেকপাশ থেকে অ্যান্ডারসনকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে আসছেন মঈন আলী। শামিন্দা এরাংগার শেষ ওভারের শেষের আগের বলটাতে হেরাথের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন অ্যান্ডারসন, ম্যাচটা বাঁচিয়ে তুলেও যেন আবার হিমঘরে পাঠালো ইংল্যান্ড, অ্যান্ডারসনের ওই ক্যাচের কারণে। হেডিংলি, ২০১৪।

     

    সেই এরাংগায় ব্যাটিংয়ে। লেগ স্ট্যাম্প দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলটা খেলতে গিয়েও সুবিধা করতে পারলেন না, গেল উইকেটকিপার বেইরস্টোর হাতে। রড টাকার আউট দিলেন না, রিভিউয়ে এরাংগার উইকেটটা পেল ইংল্যান্ড, পেলেন তো অ্যান্ডারসনই। ইনিংসে পাঁচটি, এরাংগার উইকেটের আগেই কপিল দেবকে(৪৩৪) ছাড়িয়ে হয়েছেন ইতিহাসের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী(৪৩৮)। শ্রীলঙ্কাকে ৯১ রানেই গুটিয়ে দিয়ে ফলো-অন করানোর সিংহভাগ ‘দায়’ অ্যান্ডারসনেরই। হেডিংলি, ২০১৬।

     

    ব্যাটসম্যান অ্যান্ডারসনের ২০১৪ সালের সেই দুঃখটা ভুলিয়ে দিলেন বোলার অ্যান্ডারসন, ২০১৬ সালে এসে। বোলার অ্যান্ডারসন যে হেডিংলিতে খুব একটা সুখী ছিলেন, তাও কিন্তু নয়! এর আগে সাত টেস্টে এ মাঠে ৪১.৩৬ গড়ে ১৯ উইকেট ছিল জিমির, ক্যারিয়ার গড়টা যেখানে ২৯.১৮। সে মাঠেই জিমির বোলিং ফিগার ১১.৪-৬-১৬-৫! নতুন বলের সঙ্গী স্টুয়ার্ট ব্রডও কম যাননি, নিয়েছেন ২১ রানে ৪ উইকেট। হেডিংলির উইকেট এবার একটু বেশীই বোলিং সহায়ক, তবে দুজনের সাফল্যের পেছনে বড় হাত মানছেন দুজনের এন্ড পরিবর্তন করাকেও! নয় বছর ধরে এই মাঠটাকে ‘ঘৃণা’ করে গেছেন দুজন, এবার বোলিং করার আগে তাই ভেবেছেন, যা হওয়ার হবে, দুজনের চিরায়ত এন্ড পরিবর্তন করে বোলিং করবেন!

     

    সাঙ্গা-জয়া বিহীন শ্রীলঙ্কা ধ্বসে গেল তাতেই! অধিনায়ক ম্যাথুসই(৩৭) থিরিমান্নেকে(২২) নিয়ে যা একটু প্রতিরোধ গড়তে চেয়েছিলেন, পারলেন কই! ‘পারফেক্ট’ জায়গাতে বল ফেলে পিচের সুবিধাটা ‘পারফেক্টলি’ নিয়েছেন অ্যান্ডারসন-ব্রডরা। ওভার দ্যা উইকেট থেকে ভেতরে ঢোকা বল, রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে অ্যাংগেল তৈরী করে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বল, লঙ্কানরা শুধু হিমশিমই খেয়েছেন! আলোকস্বল্পতাই খেলা শেষ হয়েছে আগেই।

     

    ইংল্যান্ডও যে তিনশ ছুঁই ছুঁই স্কোর করে ইনিংসটা শেষ করতে পারলো, তাতে বড় অবদান ঘরের ছেলে জনি বেইরস্টোর। আগের দিন অপরাজিত ছিলেন ৫৪ রানে, হেলসের রান তখন ৭১। হেলস ৭১ থেকে ৭২-এ গেলেন, বেইরস্টো গেলেন ৫৪ থেকে ৭০-এ। হেলস ৮৬ রানে যখন ফিরে গেলেন, বেইরস্টোর রান তখন ৯০! হতাশ হেলসকে করতালিতে বিদায় জানালো হেডিংলি, তবে সেই হেডিংলিই উচ্ছ্বাসে ভেসে গেল তো বেইরস্টোর সেঞ্চুরিতেই!

     

    দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, উচ্ছ্বসিত বেইরস্টো

     

    ইংল্যান্ডের হয়ে চারটি টেস্ট খেলা বাবা যেটা করতে পারেননি, ছেলে করলেন তাই! ‘ইয়র্কশায়ারম্যান’ হয়ে ইয়র্কশায়ারের ঘরের মাঠে তিন অঙ্কের দেখা পেলেন! থামলেন ১৪০ করে। ইংল্যান্ডের স্কোরকার্ডটাও পেল কিরকম অদ্ভূত এক রুপ, ১৪০, ৮৬ এর পর সর্বোচ্চ ইনিংস ১৭ রানের!

     

    তবে ইংলিশ গ্রীষ্মের শুরুতে বৃষ্টি বাগড়া বাঁধাবে, আলো ফুরিয়ে আসবে বড্ড তাড়াতাড়ি, এ আর অদ্ভূত কী! দুইদিন মিলিয়ে খেলা হলো তাই ১২৭ ওভারের মতোন।

    যেখানে দ্বিতীয় দিনের সব আলো কেড়ে নিলেন দুজন। শুরুতে ইয়র্কশায়ারের বেইরস্টো, শেষে ল্যাঙ্কাশায়ারের অ্যান্ডারসন!

    তৃতীয় দিনে কি কোনো আশার আলো দেখবে শ্রীলঙ্কা?