• আইপিএল ২০১৬
  • " />

     

    দোভাষীর মুখে মুস্তাফিজের গল্প

    দোভাষীর মুখে মুস্তাফিজের গল্প    

    আইপিএলে তাঁর দলের যে ম্যাচটায় সেরা খেলোয়াড় হলেন, মাইক্রোফোনের সামনে কথাগুলো বললেন বাংলাতেই। এর আগে তাঁকে বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁর অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের বলা বাক্যটা তো রীতিমতো ‘ভাইরাল’ হয়ে গেছে, “ব্যাটিং প্রোবলেম, স্পিকিং প্রোবলেম, বোলিং নো প্রোবলেম...”। বোলিংটা যে ‘প্রোবলেম’ নয়, সে তো পরিসংখ্যানও বলছেঃ ১৪ ম্যাচ থেকে ৬.৭১ ইকোনোমি রেটে ১৬ উইকেট, সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকদের তালিকায় আছেন চার নম্বরে। আর ব্যাটটা তাঁকে এখনও পর্যন্ত হাতে নিতে হয় নি আইপিএলে। গত ম্যাচে কলকাতার বিপক্ষে হায়দ্রাবাদের আটটি পর্যন্ত উইকেট পড়ে গিয়েছিল, ন’ নম্বরটা পড়লেই তো তিনি ‘বাধ্য’ হতেন...। অবশ্য ঢাকার এক বেসরকারি বেতারে সে ম্যাচের ধারাভাষ্যকার মজা করে বলছিলেন, তেমন হলে হয়তো নয় উইকেটেই খেলা শেষ করে দেবেন ওয়ার্নার! সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ দলে মুস্তাফিজুর রহমান কতোটা ‘যত্নআত্তি’তে আছেন সে তো ওয়ার্নার-মুডি-লক্ষণদের বাংলা শেখার প্রচেষ্টাতেই স্পষ্ট। সবমিলিয়ে ‘ঘরকুনো’ মুস্তাফিজের জন্য বিদেশ-বিভূঁইয়ের ‘একঘেয়ে’ আর ‘কঠিন’ সময়টা ‘আনন্দদায়ক’ ও ‘সহজ’ করতে সম্ভব সব চেষ্টাই করছে তাঁর দল।

     

     

    সে প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই মুস্তাফিজের ভাষা সমস্যার সমাধানে কর্তৃপক্ষ দলে তাঁর সতীর্থ বাঙালি ক্রিকেটার রিকি ভুইকে নিয়োগ দিয়েছে দোভাষী হিসেবে। এই তরুণ ক্রিকেটার ২০১৪ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলেছেন মুস্তাফিজের বিপক্ষে। বাড়তি দায়িত্বটা যে তিনি বেশ আনন্দের সাথেই পালন করছেন সেটা বোঝা গেল ক্রিকইনফোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে, “মুস্তাফিজের সাথে আমার বেশ জমে গেছে। যেহেতু সে ইংরেজি জানে না, দলের অন্য সদস্যদের সাথে খুব বেশী কথা বলতে পারে না। কথা যা বলার আমাকেই বলে, আমাদের মধ্যে বন্ধনটা তাই বেশ ভালো হয়ে গেছে।”

     

    ভুই ব্যাখ্যা করছিলেন কিভাবে মুস্তাফিজকে তাঁর কাজ বুঝিয়ে দেয়া হয়, “প্রথম দশ ওভারে সে কিভাবে বল করবে, শেষ দশ ওভার কিভাবে করবে, কোন ব্যাটসম্যানকে কী বল দেবে, কিভাবে ফিল্ডিং সাজাবে- এসব ব্যাপারে সাধারণত ‘টাইম আউট’-এর বিরতিতেই বুঝিয়ে দেয়া হয়। ওই সময় আমি মাঠে গিয়ে ওয়ার্নারের দিকনির্দেশনা তাঁকে বুঝিয়ে বলি।”

     


    আরও পড়ুনঃ আইপিএলে ভাষা খুঁজছেন মুস্তাফিজ


     

    মুস্তাফিজের ‘সাংকেতিক ভাষা’র ব্যাপারটাও খানিক খোলাসা করলেন ভুই, “স্লোয়ার দেয়ার আগে সে হাত ঘোরায়, বাউন্সার দেয়ার আগে মাথার দিকে ইশারা করে...।”

     

    বাদবাকি কাজে মুস্তাফিজের ব্যবহার্য ইংরেজী কেবল দুটো, পড়ুন রিকির বয়ানেই, “ও কেবল দুটো শব্দই বলে, প্রোবলেম আর নো প্রোবলেম। এটা কেবল মাঠেই না, সবখানে, হোক সেটা সংবাদ সম্মেলন কিংবা কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান। তাঁর প্রোবলেম মানে হচ্ছে, ব্যাপারটা সে কিছুই বুঝতে পারছে না, আর নো প্রোবলেম মানে হল সে জানে কী করতে হবে।”

     

    মুস্তাফিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হায়দ্রাবাদের কোচ টম মুডিও, “মানুষ হিসেবে সে দারুণ। বেশ মজার ছেলে, ব্যক্তিত্বটাও সপ্রতিভ। সত্যি বলতে দলে সে আলাদা একটা মাত্রা যোগ করেছে, সেটা কেবল মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও।”

     

    তবে মাঠের বাইরের জগতটা মুস্তাফিজের নিজের জন্য খুব আরামদায়ক হচ্ছে না। ভুই যেমন বলছিলেন, “সারাক্ষণ সে রুমেই থাকে। (ইংরেজিতে) কথা বলার ভয়ে সে সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছে।”

     

    মুস্তাফিজের সমস্যা যে কেবল দুটোই, সেটাই আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন ভুই, “সবসময় ও শুধু একটা কথাই বলে, আমাকে যেন কখনও ব্যাটিং করতে আর ইংরেজি বলতে না হয়।”

     

    তবে ইংরেজিটা যে মুস্তাফিজ একটু-আধটু হলেও শিখছেন সেটা ভুইয়ের মতো জানাচ্ছেন কোচ টম মুডিও, একটু মজা করেই, “ওর সাথে আমাদের ভাষাগত দূরত্বটা ক্রমেই কমে আসছে। ব্যাপারটা এমন না যে আমাদের বাংলা জ্ঞানের উন্নতি হয়েছে, বরং ওর ইংরেজিটাই বোধহয় একটু হলেও ভালো হয়েছে।”

     

    কাল দিল্লীতে সাকিব আল হাসানের কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ‘প্লে অফ’ লড়াইয়ে নামবে মুস্তাফিজের সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। যে দল হারবে, ছিটকে যেতে হবে শিরোপা দৌড় থেকে। জয়ী দলের সুযোগ থাকবে আজকের ‘কোয়ালিফায়ার’ ম্যাচের পরাজিত দলের সাথে আরেকটি ‘প্লে অফ’ খেলার।