• ক্রিকেট, অন্যান্য
  • " />

     

    নাগপুর-পার্থ-কেপ টাউন: সবচেয়ে মারাত্মক ও বাজে উইকেট কোথায়?

    নাগপুর-পার্থ-কেপ টাউন: সবচেয়ে মারাত্মক ও বাজে উইকেট কোথায়?    

    কেপ টাউনে দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারতের দ্বিতীয় টেস্ট শেষ হয়ে গেছে মাত্র দেড়দিনে। দিনের তৃতীয় সেশনের পুরোটাও খেলা হয়নি। চার ইনিংস মিলিয়ে ম্যাচের ব্যপ্তি ছিল মাত্র ১০৭ ওভার। অর্থাৎ দুই দল মিলিয়ে চার ইনিংসে খেলেছে ৬৪২ বল; যা বলের হিসেবে ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম টেস্ট। তাই কথা উঠেছে কেপ টাউনের উইকেটের মান নিয়ে। যদিও এখনো এই টেস্টের উইকেট নিয়ে রিপোর্ট দেননি ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড। ক্রিকেটের ইতিহাসে এর চেয়ে বাজে উইকেটও দেখা গেছে অনেকবার। পেয়েছে ম্যাচ রেফারির ‘পুর’ রেটিং। আজ চলুন দেখে নেয়া যাক ক্রিকেটের সমালোচিত উইকেটগুলো কেমন ছিল। 

    দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারত, কেপ টাউন টেস্ট, ২০২৪

    কেপ টাউন টেস্টের উইকেটে ছিল অনিয়মিত বাউন্স। কোনো ডেলিভারি লাফিয়ে উঠছিল, কোনোটা থাকছিল লো। টেস্টের প্রথমদিনের উইকেটে সিম মুভমেন্ট থাকে সাধারণত যেকোনো ভেন্যুতেই। তবে টানা দ্বিতীয়দিনও সিম মুভমেন্টের সাথে অসমান বাউন্স ছিল নিউল্যান্ডসে। এমন মুভমেন্ট আর বাউন্স দেখে অবাক হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাও। প্রথমদিনেই পড়েছিল ২৩ উইকেট। 

    প্রথম ইনিংসে মোহাম্মদ সিরাজের তোপে মাত্র ৫৫ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল প্রোটিয়ারা। দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে ১৫৩-তে আটকে যায় ভারত। মজার ব্যাপার হচ্ছে কোনো রান না তুলেই শেষ ছয় উইকেট হারিয়েছিল ভারত। তৃতীয় ইনিংসে বুমরাহর দুর্দান্ত স্পেলে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং অর্ডার ধ্বসে পড়লেও দারুণ এক সেঞ্চুরিতে এইডেন মার্করাম লিড এনে দেন। ৭৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেও ভারত হারায় তিন উইকেট। 

    প্রশ্ন উঠেছে তাই উইকেট কি আসলেই বাজে ছিল? নাকি ব্যাটাররাই বাজে পারফর্ম করেছেন। অবশ্য মার্করামের ইনিংসটা বলছে অন্য কথা। এমন পেস সহায়ক উইকেটে ওয়ানডে স্টাইলে ১০৩ বলে করেছেন ১০৬ রান। তবে মার্করামের ইনিংসকে আদর্শ ধরা সমীচিন হবে না। কারণ একমাত্র ব্যাটার হিসেবে সেঞ্চুরি তো বটেই, ফিফটি করেছেন কেবল তিনিই। 

    ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা, কানপুর টেস্ট, ২০০৮

    ২০০৮ সালে কানপুর টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছিল। সেই টেস্টে দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র তিনদিন। ম্যাচের উইকেট ছিল শুষ্ক। র‍্যাংক টার্নার সেই উইকেটে ব্যাটারদের জীবন আরো দুর্বিষহ করে তুলেছিল অসমান বাউন্স। প্রথম ইনিংসে ২৬৫ রান তোলা প্রোটিয়ারা দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় মাত্র ১২১ রানে। ম্যাচ রেফারি রোশান মহানামা কানপুরের উইকেটকে ‘পুর’ রেটিং দিয়েছিলেন। চার ইনিংসে মিলিয়ে স্পিনাররা ১৮ উইকেট নিলেও উইকেটের নাম নিয়ে শেষমেষ প্রশ্ন উঠেছিলই। সেবার অল্পের ওপর দিয়েই অবশ্য পার পেয়েছিল কানপুরের ভেন্যু। উইকেট নিয়ে এর আগে এমন কোনো রেটিং না পাওয়ায় আনুষ্ঠানিক সাবধানতাতেই সীমাবদ্ধ ছিল শাস্তি। 


    ভারত-শ্রীলংকা, পঞ্চম ওয়ানডে, দিল্লি, ২০০৯

    ২০০৯ সালে দিল্লীর তৎকালীন ফিরোজ শাহ কোটলাতে ভারত-শ্রীলংকার ওয়ানডে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিল উইকেটের কারণে। প্রথমে ব্যাট করতে নাম শ্রীলংকার ইনিংস ছিল ২৩.৩ ওভারের। উইকেটের আচরণ ক্রমাগত বদলাতে থাকায় আম্পায়ররা খেলা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ উইকেটের একই জায়গায় বল পিচ করার পর লাফিয়ে উঠছিল ব্যাটারের শরীরের একেক জায়গা বরাবর।
    .

    ম্যাচ রেফারি অ্যালান হার্স্ট দিল্লীর উইকেটকে দিয়েছিলেন আনফিট রেটিং। কারণ হিসেবে দেখিয়েছিলেন উইকেটের মারাত্মক বিপদজনক অসমান বাউন্সকে। ফলস্বরুপ এক বছরের জন্য আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন থেকে নিষিদ্ধ হয় ফিরোজ শাহ কোটলা। যদিও দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল সেই ভেন্যুকে, কিন্তু বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে শাস্তি কমিয়ে আনা হয় এক বছরে। ম্যাচ রেফারির রিপোর্টের পর দিল্লীর সে সময়ের গ্রাউন্ডস ও পিচ কমিটিকে বরখাস্ত করেছিল বিসিসিআই। 

    ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা, নাগপুর টেস্ট, ২০১৫

    ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে হারার পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে স্পিন সহায়ক উইকেট বানিয়েছিল ভারত। তৎকালীন টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রীর কথায় সিরিজের তিন টেস্টেই খেলা হয়েছিল র‍্যাংক টার্নারে। মোহালির প্রথম আর নাগপুরের তৃতীয় টেস্ট শেষ হয়েছিল তিনদিনে। তবে দুই টেস্টের উইকেটের আচরণে ছিল আকাশ-পাতাল তফাত। নাগপুরে, টার্নের পরিমাণ, বাউন্স কিংবা গতি সবই ছিল মোহালির চেয়ে বেশি। নিজেদের প্রথম ইনিংসে প্রোটিয়ারা আটকে গিয়েছিল মাত্র ৭৯ রানে। চার ইনিংস মিলিয়ে ভারতের ২১৫ ছিল সর্বোচ্চ সংগ্রহ। 

    ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রোর কাছ থেকে নাগপুরের উইকেট পেয়েছিল পুর রেটিং। কারণ হিসেবে দেখিয়েছিলেন ম্যাচজুড়ে অতিরিক্ত টার্ন আর বাউন্সকে। আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্ক করা হয়েছিল সেবার নাগপুরকে। যদিও বিসিসিআই ম্যাচ রেফারির রেটিং নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। একই কারণে সেই ভেন্যুতে এরপরের বছরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে মাত্র ৭৯ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল ভারত। যদিও স্পিন সহায়ক উইকেটের জন্যই আলাদা নাম আছে নাগপুরের। 


    ইংল্যান্ড-ভারত, নটিংহাম টেস্ট, ২০১৪

    বেশি টার্ন কিংবা পেসারদের সহায়ক বাউন্সি আচরণের জন্য উইকেটের সমালোচনা হয়। কিন্তু ফ্ল্যাট হওয়াতেও পুর রেটিং পেয়েছিল নটিংহামের উইকেট। ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ড প্রথম টেস্ট খেলেছিল নটিংহামে। পুরো পাঁচদিন খেলার পর ম্যাচ হয়েছিল ড্র। মোট খেলা হওয়া তিন ইনিংসের মধ্যে ভারত ব্যাট করেছে দুইবার। 

    রান বন্যা হয়েছিল রীতিমতো, বোলারদের জন্য কিছুই ছিল না উইকেটে। ঠিক কতটা ফ্ল্যাট ছিল নটিংহামের উইকেট? প্রথম ইনিংসে ফিফটি পেয়েছিল ভারতের দুই টেইলএন্ডার ভুবনেশ্বর কুমার ও ইশান্ত শর্মা। তৃতীয় ইনিংসে জেমস অ্যান্ডারসন খেলেছিলেন তার ক্যারিয়ারসেরা ৮১ রানের ইনিংস। বোলাররাও ভুগেছেন বেশ। ব্যাটে এজ লাগার পর যতটা ক্যারি করার কথা ছিল বলের, সেটা হয়নি প্রত্যাশামাফিক। 

    ম্যাচ রেফারি ডেভিড বুন সেই ফ্ল্যাট উইকেটকে দেন পুর রেটিং। ডিমেরিট পয়েন্ট না পেলেও সতর্ক করা হয় গ্রাউন্ডস কমিটি। 


    অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড, বক্সিং ডে টেস্ট, মেলবোর্ন ২০১৭

    ২০১৭ অ্যাশেজের বক্সিং ডে টেস্টের আগে এমসিজির কিউরেটর পদত্যাগ করে বসেছিলেন। তার বদলে নতুন কেউ তখনো দায়িত্ব নেয়নি। উইকেট বানানোর দায়িত্ব পড়ে তখন এমসিজির অ্যারেনা অপারেশন্স ম্যানেজারের ওপর। উইকেট ছোট ঘাস রেখে সেটার ওপর রোল করে বানিয়েছিলেন ফ্ল্যাট উইকেট। কিন্তু সেই উইকেট ব্যাটার-বোলারদের কেউই সাহায্য পাননি। পাঁচ দিন শেষে তিন ইনিংসে গড়িয়েছিল ম্যাচ, ফলাফল ড্র।

    সব মিলিয়ে উইকেট পড়েছিল মাত্র ২৪টি, ওভারপ্রতি রান উঠেছিল তিন করে। উইকেটের একেক পিচিং এরিয়া ছিল একেকরকম। হার্ড সারফেসে পিচ করার পর রিভার্স সুইং হলেও ম্যাচের দৈর্ঘ্য বাড়ার সাথেসাথে উইকেট নরম হওয়া শুরু করেছিল। যে কারণে এজের পর বল সেভাবে ক্যারিও করছিল না।  

    অস্ট্রেলিয়া-উইন্ডিজ, পার্থ টেস্ট, ১৯৯৭

    পেস সহায়ক উইকেটের জন্য পার্থের উইকেটে সুখ্যাতি আছে। তবে ১৯৯৭ সালে উইন্ডিজের অস্ট্রেলিয়া সফরে শেষ টেস্টে উইকেটে যে বর ফাটল দেখা গিয়েছিল, সেটা ওয়াকার উইকেটের সাথে বেমানানই বটে। তিনদিনে শেষ হওয়া টেস্টের তৃতীয়দিনই ক্র্যাক ধরেছিল উইকেটে। ব্যাটারদের জন্য অগ্নিপরীক্ষার সেই ম্যাচটা উইন্ডিজ জিতেছিল ১০ উইকেটে।