• শ্রীলংকার বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    ট্যাকটিকসের পরিবর্তনে যেভাবে ব্যবধান গড়ে দিলেন তাসকিন-শরিফুল-মোস্তাফিজরা

    ট্যাকটিকসের পরিবর্তনে যেভাবে ব্যবধান গড়ে দিলেন তাসকিন-শরিফুল-মোস্তাফিজরা    

    প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ডেথ ওভারে বাংলাদেশের পেসাররা ওভারপ্রতি দিয়েছিলেন ১৬ রান। সিলেটে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে শেষ পাঁচ ওভারে তাদের ইকোনমি নেমে এসেছিল প্রায় অর্ধেকেই (৮.৬)। শিশিরভেজা মাঠে শ্রীলংকাকে ১৬৫ রানে আটকে ম্যাচের ফলটাও গড়া হয়ে গেছে এখানেই। পেসারদের এই ফিরে আসাকে শুধু ‘ভালো বোলিং’য়ের ছাতায় ঢুকিয়ে দিলেই সব গল্প বলা হচ্ছে না। এই সফলতার পেছনে আদতে রয়েছে ট্যাকটিকসে আমূল পরিবর্তন।

    প্রথম টি-টোয়েন্টিতে তাসকিন আহমেদ ১৭তম ওভারে দুই ছক্কার মারে মোট খরচ করে ফেলেন ১৫ রান। পরের তিন ওভারে দুই বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম, একটি পরিকল্পনায়ই মনোযোগ দিয়েছিলেন। অফসাইড হেভি ফিল্ড সাজিয়ে মোটাদাগে ওয়াইড ইয়র্কারের প্রচেষ্টা ছিল দুজনের মাঝেই। শেষের ওই ১৮ বলের মধ্যে ওয়াইড লাইন বরাবর (ওয়াইড লাইনের আশপাশের বৈধ বল) বাংলাদেশের দুই পেসার বোলিং করেছেন ১৪টি।

    অর্থাৎ, শেষ তিন ওভারের শতকরা ৭৭.৭৮ ভাগ বলই তারা করেছিলেন ওয়াইড লাইনে। ১৯তম ওভারে শরিফুল তো সব বলই ওই লাইনে ছুড়েছিলেন। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট ও ডিপ কাভার পয়েন্ট রেখে বোলিং করে যাচ্ছিলেন মূলত মোস্তাফিজ ও শরিফুল। এই ফিল্ডসেটে দুই বোলারের ওয়াইড ইয়র্কার করার চেষ্টা ছিল ১১ বার।

    সেই চেষ্টায় সফল হচ্ছিলেন, পাঁচটা ইয়র্কার করতেও পেরেছিলেন। তবে এমনিতেই ওয়াইড ইয়র্কার করা ভীষণ কঠিন কাজ, টানা সেই চেষ্টায় গিয়ে ব্যর্থও হয়েছেন তারা বারেবার। লেংথে এদিক-সেদিক হয়েই ফুল কিংবা ফুল টস হয়ে যাচ্ছিল, সেগুলো লঙ্কান দুই ব্যাটার চারিথ আসালাঙ্কা ও সাদিরা সামারাবিক্রমা কাজেও লাগিয়েছিলেন দারুণভাবে। 

    ওই সময় ৪টি ছক্কা ও ৩টি চার মারে শ্রীলঙ্কা। চার ছক্কার তিনটিই ওয়াইড লাইন বরাবর বোলিংয়ে, চারটিতেই বল পড়েছিল হয় স্লটে কিংবা ফুলটস। তিনটি চারের দুটিও আবার সেই একই লাইনের বলেই। শেষ তিন ওভারে আসা ৪৯ রানের প্রায় ৭৩ শতাংশই এসেছে বাউন্ডারি থেকে। আর মোট ৭টি বাউন্ডারির প্রায় ৭১ শতাংশই শ্রীলঙ্কা পেয়েছে ওই ওয়াইড লাইনের বলগুলোতেই। ওয়াইড ইয়র্কারের সে পরিকল্পনার প্রয়োগ মাঠে যেমন ঠিকঠাক করতে পারেননি বাংলাদেশের দুই বাঁহাতি পেসার, দীর্ঘ সময় সে ট্যাকটিকস চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা কী সঠিক হলো? সে প্রশ্নটাও উঠে যায়।

    সিলেটে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির আগে সে প্রশ্ন মাথায় নিয়েই হয়তো ট্যাকটিকসে পরিবর্তন এনে ফেলে বাংলাদেশ। বুধবার  সেই ম্যাচে শেষ পাঁচ ওভারের সবকটিই করেন পেসাররা। এদিন ওয়াইড ইয়র্কারের চিন্তা একেবারেই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেন তারা। স্টাম্প বরাবর বোলিংয়েই সব মনোযোগ ছিল তাদের। ত্রিশ বলের মধ্যে ১৮টিই তিন পেসার মিলে স্টাম্প লাইনে ছুড়েছিলেন। ফোর্থ স্টাম্প ও তার সামান্য বাইরে বাকি সব বলই করেছেন। শুধু একবার শরিফুল একটা বল করেছিলেন একেবারে ওয়াইড লাইন ঘেঁষে, যেটি শেষমেশ হয়েছিল ওয়াইড। লেগ সাইডে বাউন্ডারিতে তিনজন ফিল্ডার রেখে প্রায় সবসময়ই বোলিং করে গেছেন তাসকিন, শরিফুল ও মোস্তাফিজ।

    গুড ও ফুল লেংথে স্লোয়ারের পাশাপাশি জোরের উপর বোলিং করার চেষ্টা চালিয়েছেন তারা। স্টাম্পের আশপাশের লাইনের বোলিংয়ে সারপ্রাইজ বাউন্সারও ছুড়ে দিয়েছেন। দারুণভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিলেন বাংলাদেশের তিন পেসার। শেষ পাঁচ ওভারের অর্ধেকই ছিল গুড লেংথ ও তার সামান্য পেছনে। ফুল টস এদিন তিন পেসারের থেকে ছুটে মাত্র একটি। ১৯তম ওভারে একবার শুধু তাসকিন ওয়াইড ইয়র্কারের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বাউন্ডারিতে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট ও ডিপ কাভার পয়েন্ট রেখে। ওভারের প্রথম দুই বল শেষে সেই ফিল্ড সাজিয়ে এরপর উল্টো বোকাই বানিয়ে ফেলেন দাসুন শানাকাকে। গুড লেংথের দারুণ স্লোয়ারে তাকে পরাস্ত করার পর পরের বলে ফোর্থ স্টাম্পের ইয়র্কারে একটি রানের বেশি দেননি। ওই দুটি বল বাদেই আবার তাসকিন ফিরেছিলেন সাধারণ ফিল্ডসেটে।

    তাসকিনের আগের যে ওভার, ১৬তম ওভারে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ চার মেরেছিলেন একটি। সেটি তিনি পেয়েছিলেন মিড উইকেটে থাকা মোস্তাফিজের মিস ফিল্ডিংয়ে। পরের বলে মোস্তাফিজের মিস ফিল্ডিংয়ে আরেকটি রান পেয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। দুটি ডটের জায়গায় তাই তাসকিনের খাতায় যোগ হয় আরও ৫টি রান। ওই ৫ রানের জায়গায় ০ হলে, শেষ পাঁচ ওভারের হিসেব দেখুন তো, ৪৩ এর জায়গায় ৩৮। ৩০ বলে মাত্র ৩৮। 

    এমনিতেই অবশ্য শানাকা ও ম্যাথিউজের পার্টনারশিপই খেলেছে সেই পাঁচ ওভারের পুরোটি। তাতে কোন উইকেট না নিয়েও, দুই সেট ব্যাটার সামনে থাকা সত্ত্বেও, ৪৩ রানের বেশি না দেওয়াটাকে তাই অসাধারণই বলতে হয়। তিন পেসার মিলে ডেথ ওভারে দেন মাত্র ৫ বাউন্ডারি। একটির বেশি ছক্কার মার পড়েনি তাদের উপর, এসেছে মাত্র ৪টি চার। ব্যাটিং সহায়ক কন্ডিশনে ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ওই পাঁচ ওভারই। আগের ম্যাচে যেখানে শেষ চার ওভারে পেসাররাই ৬৪ রান দিয়ে ম্যাচে পিছিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ডেথ ওভারে পরিকল্পনায়, ফলাফলে- প্রথম টি-টোয়েন্টির তুলনায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন বাংলাদেশকেই।

    ম্যাচশেষে আসালাঙ্কার কণ্ঠে যেভাবে ঝরেছে রানের আক্ষেপ, সেটাই বোলারদের অবদানের কথা অনেকটুকু বলে দেয়, ‘আমরা ২০-২৫ রান কম করেছি। আর কামিন্দুর রানআউটও ম্যাচে বড় প্রভাব ফেলেছে। আমাদের ব্যাটারদের বড় রান করতে হবে, বিশেষত এরকম কন্ডিশনে, কারণ এই কন্ডিশনে বোলারদের জন্য বোলিং করাটা খুব কঠিন।’

    ১১ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের জয় পাওয়ার পর প্রেজেন্টেশনে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্তও করেছেন তার বোলারদের প্রশংসা। ফিফটি হাঁকিয়ে ম্যাচসেরা হওয়া শান্ত বলেন, ‘কৃতিত্বটা সবার, বিশেষ করে বোলারদের। যেভাবে আমরা বল করেছি এই উইকেটে, আমি খুব খুশি।’