• টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
  • " />

     

    যেভাবে ভারতকে টি-টোয়েন্টি শেখালেন রোহিত

    যেভাবে ভারতকে টি-টোয়েন্টি শেখালেন রোহিত    

    কোনো আইসিসি ইভেন্ট জেতা যাচ্ছে না ১১ বছর ধরে। শুধু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ধরলে তো প্রথম বিশ্বকাপেই শেষ। ফের বিশ্বকাপ জিততে ভারতকে কিছু না কিছু বদলাতে হতোই।


    তবে প্রতিবারই একদম স্পষ্ট কিছু ভুল দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। ২০১৪ সালে ভিলেন হয়েছিলেন যুবরাজ সিং, ২০১৬ সালে নো-বল, ২০২১ সালে কালেক্টিভ ব্যাটিং ফেইলিওর… এই ভুলগুলোতে আড়ালেই পড়ে যাচ্ছিল, ভারত ব্যাট হাতে সাহসী হতে পারছিল না ব্যাট হাতে।


    সেই ২০১৪ সালের ফাইনাল থেকে শুরু করি চলুন। যুবরাজ নামলেন ১১ নম্বর ওভারে, ততক্ষণে ভারতের রান কেবল ৬৪।
    ২০১৬ সালের সেমিফাইনাল। রাহানে আর রোহিত ওপেন করতে নেমেছিলেন। দুজন মিলে সেদিন ৬৬ বল খেলে করেছিলেন ৮৩ রান।
    ২০২২ সেমিফাইনাল... ওয়েল, যত কম বলা যায়, ততই ভালো। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে ভারত রান তুলল ৩৮। রোহিত আর বিরাট কোহলি মিলে ৬৮ বল খেলে করেছিলেন ৭৭ রান। ভারতের ১৬৮ রান ইংল্যান্ড টপকে গেছিল ৪ ওভার আগেই।
    এই ম্যাচগুলোই তো ভারতের বিশ্বকাপ জেতা আর হারার মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিলো, প্রতিটা ম্যাচেই দেখা যাচ্ছে, ভারত আগে ব্যাট করেছে। এবং, বেশ দেখে-শুনে ইনিংসের শুরু করেছে। আর শেষমেশ আন্ডার পার স্কোর গড়ে ম্যাচ হেরেছে।


    এখন পেছনে তাকিয়ে দীনেশ কার্তিককে বলা রোহিত শর্মার কথাটা, 'উই নিড টু চেঞ্জ' শুনলে মনে হচ্ছে, তখন তিনি আসলে বলছিলেন, বদলাতে হবে তাদের মাইন্ডসেট। ইন্টেন্ট। নিজে ওপেন করেন বলে পথটা দেখাতে হতো রোহিতকেই। কাজটা কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না তার জন্য। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই লেগে ছিল 'সেট হয়ে গেলে রোহিত ভয়ংকর' ট্যাগ। শুরুতেই বোলারদের ওপর চড়াও হতে চাননি কখনোই।  ১৫;১৬ বছর ইন্টারন্যাশনাল খেলে, ক্যারিয়ারের শেষ ভাগে এসে নিজের ব্যাটিং ফিলোসফিতে এই ফান্ডামেন্টাল চেঞ্জ আনাটা মোটেই সহজ কোনো কাজ ছিল না। রোহিত এক্সেপশনাল হয়েছেন এখানেই। যার প্রমাণ আমরা পাব পাওয়ারপ্লে স্ট্যাটে তাকালেই।


    একই মন্ত্রে রোহিত এখন খেলছেন ওয়ানডেগুলোও। বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আয়ার কিংবা লোকেশ রাহুল… ভারতের হয়ে অ্যাঙ্করিং করার মতো ক্রিকেটারের অভাব নেই ওয়ানডেতে, কোহলি তাই প্রতিপক্ষকে টেক ডাউন করতে চেয়েছেন পাওয়ারপ্লেতে।
    সাইড এফেক্টে তার ব্যক্তিগত নাম্বারসগুলো মলিন হয়েছে। অ্যাভারেজ কমেছে। কিন্তু রোহিত ভেবেছেন এফেক্টের কথাই। ভারত হয়েছে আরও ডমিনেটিং।


    উপমহাদেশের কালচারটা মাথায় রাখলে রোহিতের এই ‘টিম ফার্স্ট’ অ্যাপ্রোচকে নিঃস্বার্থ, ত্যাগী… এইসব বিশেষণই ইউজ করতে হবে।
    বিশ্বকাপে ফিরি। নিউ ইয়র্কের মাইনফিল্ডে  বিশ্বকাপের গ্রুপ স্টেজ খেলেছিল ভারত, তাদের ইন্টেন্টের বদলটা বুঝতে তাই সুপার এইট স্টেজের দিকে তাকানোই ভালো।


    সুপার এইটের তিন ম্যাচেই ১৮০ রানের বেশি করেছিল তারা। আর কোনো দল করতে পারেনি একবারের বেশি।
    ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্লো পিচে ১৮০ রান পারের চাইতে বেশি অধিকাংশ দিনেই। ভারতের এই পারের চাইতে বেশি স্কোর দাঁড় করানোর মূলে একটা ব্যাপারই। তারা ছয় মারছে বেশি। 


    এই বিশ্বকাপে তারা ছক্কা মেরেছে ৫৪টা। সংখ্যাটা নিজেদের ইতিহাস-সর্বোচ্চ তো বটেই, এই বিশ্বকাপেও একমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজই ছয় মেরেছে এর চাইতে বেশি। টুর্নামেন্টে বেশির ভাগ ম্যাচই যারা খেলেছে ভালো ব্যাটিং ট্র‍্যাকে।
    তবে শুধু সাকসেস দিয়েই নয়, রোহিত লেগাসি রেখে যাচ্ছেন ফেইলিওরগুলো মেনে নিয়েও। শিভম দুবেকে স্পিন হিটার হিসেবে সুযোগ দেওয়া হয়েছে একাদশে। কিন্তু পারফর্ম করতে পারেননি।


    অবশ্য দুবে পর্যন্ত নামতে হচ্ছে কেন, রোহিতের ওপেনিং পার্টনার বিরাট কোহলির দিকে তাকালেই তো হচ্ছে। রীতিমতো দুঃস্বপ্নের মতো একটা বিশ্বকাপ যাচ্ছে তার। কিন্তু, রোহিত কোহলিকে সমর্থন জানাচ্ছেন পুরোদমে। কারণ, তিনি জানেন, অ্যাগ্রেসিভ ওয়েতে খেলতে গেলে সেখানে রিস্কটা থাকছে বেশি। ব্যর্থতা তাই খুবই স্বাভাবিক।


    রোহিতের আগে কোনো ভারতীয় ক্যাপ্টেন পারেননি, টি-টোয়েন্টির এই ব্যর্থতাকে মেনে নিতে। রোহিত যেটা মেনেছেন। এই ব্যর্থতা আসবে জেনেই সাহসী হয়েছেন ব্যাট হাতে। মডার্ন ডে টি-টোয়েন্টি জিততে গেলে আপনাকে যেই সাহসটা দেখাতেই হবে।


    লম্বা ব্যাটিং লাইন-আপ, ইন্টেন্ট, ব্যর্থতাকে মেনে নেওয়া - ফাইনালের ফল যা-ই হোক, ভারত রোহিতের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে বোধ হয় এই কারণেই। ভারত সত্যিকারের টি-টোয়েন্টি খেলতে শিখল তার সময়েই।