• " />

     

    পরিবারের জন্যই বাংলাদেশ ছেড়েছেন হিথ স্ট্রিক

    পরিবারের জন্যই বাংলাদেশ ছেড়েছেন হিথ স্ট্রিক    

    বাংলাদেশ ক্রিকেটের গত এক বছরের উত্থানের সাথে জড়িয়ে গেছে তাঁর নামটাও। মাশরাফির নেতৃত্বে টাইগারদের পেস আক্রমণ যে কোনো প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ংকর করে তোলার পিছনে ভদ্রলোকের অবদান অস্বীকার করবার উপায় নেই। কিন্তু গাঁটছড়াটা খুব লম্বা হল না। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে গুজরাট লায়ন্সের হয়েও সাফল্য পেয়েছেন। কোচ হিসেবে হিথ স্ট্রিকের সামনে সম্ভাবনার দুয়ারগুলো কেবল খুলতে শুরু করেছে। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, ভারতেই থিতু হওয়ার চেষ্টা করছেন। অবশ্য এসব ব্যাপারে গণমাধ্যমের সাথে খুব বিস্তারিত কিছু এখনও বলেন নি। সম্প্রতি দেশে ফিরে ক্রিকেট থ্রি সিক্সটি ডট কমকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক কথা বলেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ও তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে।

     

    টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশকে ভাবা হচ্ছিল টুর্নামেন্টটির ‘ডার্ক হর্স। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাশরাফিরা সুপার টেন পর্ব থেকে ফিরে গেছেন শূন্য হাতে। তবে কি পরিকল্পনায় কোথাও ভুল ছিল? হিথ স্ট্রিক ব্যাপারটা এভাবে দেখছেন না, “ভারতের সাথে ম্যাচটা জিততে পারলে, যেটা আসলে যে কোনো বিবেচনাতেই আমাদের জেতা উচিৎ ছিল, গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো। সেক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ডের সাথে শেষ ম্যাচটায় আমাদের আরও কিছু পাওয়ার থাকতো। সবমিলিয়ে বলবো, ফর্মের তুঙ্গে থেকে এশিয়া কাপে অমন দারুণ পাফরম্যান্সের পর ওই কন্ডিশনে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল না পাওয়াটা হতাশাজনকই।”

     

    তাঁর স্বল্প মেয়াদের সময়টাতেই বাংলাদেশের এমন উত্থান। রহস্যটা আসলে কোথায়? কী এমন মন্ত্রে রাতারাতি দিনবদল? মাশরাফিদের সদ্য সাবেক কোচ কৃতিত্ব দিচ্ছেন খেলোয়াড়দেরই, “কোচিং গ্রুপ হিসেবে আমরা উন্নতির জন্য যা যা বদলানো প্রয়োজন ছিল বদলে দিয়েছিলাম। সৌভাগ্যক্রমে সেটা কাজে লেগে গেছে। কৃতিত্বটা অবশ্যই খেলোয়াড়দের। আমরা কেবল পরিকল্পনাটাই করে দিতে পারি, সেটার বাস্তবায়ন তো তাঁদেরই করতে হয়। তামিম, সাকিব, মাশরাফির মতো অভিজ্ঞদের সাথে পূরক হিসেবে তাসকিন, মুস্তাফিজ, সরকাররা (সৌম্য) বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘এক্স ফ্যাক্টর’টা এনে দিয়েছে, যেটা দলটার আগে কখনও ছিল না। আর পেস বোলারদের মধ্যে রসায়নটা গত এক বছরে দলের শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।”

     

    এই যে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ অনেকটা হুট করেই এক ঝাঁক প্রতিভা পেয়ে গেলো, এর নেপথ্য নায়ক হিসেবে বাংলাদেশেরই অনেকে মানেন তাঁকে। হিথ স্ট্রিক নিজে কী বলেন? “একজন কোচ হিসেবে আমি চেষ্টা করেছি খেলোয়াড়রদেরকে তাঁদের সামর্থ্যের জায়গাটা চিনিয়ে দিতে। আমার মনে হয় বাংলাদেশের পরিবেশ আসলে কখনও তাঁদের (পেসার) উপযোগী ছিল না। সেই পরিবেশটাই আমরা যখন তৈরি করে দিলাম, সুপ্ত সম্ভাবনাগুলো বেরিয়ে আসতে লাগলো। ভাগ্যক্রমে বিশ্বকাপটা ছিল অস্ট্রেলিয়ায়। আমরা জানতাম পেসারদের তৈরি করা ছাড়া গতি নেই, বোর্ডও আমাদের জন্য যথেষ্ট বিকল্পের ব্যবস্থা করে দিলো। এরপর তো বিশ্বকাপের সাফল্যে সবাই বুঝতে পারলো ওই বোলাররা আসলে কী করতে পারে।”

     

    কিন্তু এই যে উত্থানটা বাংলাদেশের, যেটার অন্যতম সাক্ষী তিনি, সেটার তো সবে শুরু। আর কিছুদিন কি দলটার সাথে থাকতে পারতেন না? অন্তত আগামী বছরের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত? ৪২ বছর বয়সী জিম্বাবুইয়ান বলছেন পারিবারিক সমস্যার কথা, “আমি নিজেও ওটার (চ্যাম্পিয়নস ট্রফি) দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশে কাজের পর আবার আইপিএল, আমি বেশ লম্বা সময়ের জন্য বাড়ি থেকে দূরে ছিলাম। এখানে (জিম্বাবুয়ে) আমাদের ব্যবসাটা দাঁড়িয়ে গেছে, বাচ্চারাও এখানে বড় হচ্ছে। এখন হুট করে তাদেরকে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়াটাও কঠিন ব্যাপার। আবার ওদেরকে এখানে রেখে আমিও খুব বেশী দিন বাইরে থাকতে পারছিলাম না। সবমিলিয়ে যে সময়টা আমার পরিবারকে দেয়া উচিৎ, সেটা আমি অন্য কোথাও ব্যয় করতে প্রস্তুত ছিলাম না।”

     

    যে কারণে এখনই ভারতীয় দলের প্রধান কোচের চাকুরির জন্য আবেদন করার কথা ভাবছেন না তিনি। আরও দুয়েক মৌসুম আইপিএলে সময় দিয়ে, অভিজ্ঞতা অর্জন করে ওই পদের জন্য আগে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে চান। তবে ভবিষ্যতে ভারতকেই ঠিকানা বানানোর আভাসটাও দিয়ে রাখছেন হিথ স্ট্রিক।