মেসির জন্য এক কিলো সাঁতার!
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দামোদর নদী সাঁতরে পাড়ি দিয়ে মাকে দেখতে যেতেন- এ গল্প বাঙালি পাঠকের অজানা নয়। কিন্তু খেলার খবরে বিদ্যাসাগর কেন? প্রসঙ্গটা টানতে হল প্রিয় কারও জন্য ভালোবাসার সামর্থ্যে সাদৃশ্য খুঁজে পেতে, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে যার রংটাই কেবল ভিন্ন হতে পারে। বিদ্যাসাগর যে টানে মায়ের জন্য সাঁতরে নদী পাড়ি দিতেন, প্রিয় তারকার দর্শন লাভে সুলির সমুদ্রে সাঁতারও তো সে একই টানে! যাকে এক নজর চাক্ষুষ দেখতে এহেন অসাধ্য সাধন, সেই লিওনেল মেসি হতাশ করেন নি চব্বিশ বছরের স্প্যানিশ তরুণকে। তাঁর সাথে ক্যামেরাবন্দী হওয়ার শখ তো মিটিয়েছেনই, মিনিট বিশেক খোশগল্প করে নিরাপদে গন্তব্যে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন!
স্প্যানিশ দৈনিক মুন্ডো ডেপোর্টিভোর খবরে প্রকাশ, ছুটি কাটাতে ইবিজায় গিয়েছিলেন সুলি নামের ওই তরুণ স্প্যানিয়ার্ড। নতুন মৌসুম শুরুর আগে সেখানে অবকাশ যাপন করছেন মেসি-রোনালদোরাও। সৈকতে অলস সময় কাটাতে কাটাতেই আচমকা সুলির চোখে পড়ে যায় এক কিলোমিটার মতো দূরের আরেক সৈকতে মেসির বিলাসবহুল ইয়াটটি। দেখা মাত্রই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি, সাঁতরে যাবেন মেসিকে দেখতে। যেই ভাবা সেই কাজ, সাথের মোবাইলখানা পলিব্যাগে মুড়িয়ে কোমরে বেঁধে নেমে পড়েন সমুদ্রে।
বোটের কাছাকাছি পৌঁছতেই মেসির নজরে আসেন সুলি। অচেনা আগন্তুককে সাঁতরে আসতে দেখে আড়ালে চলে যাওয়াটাই হয়তো স্বাভাবিক ছিল। মেসি অবশ্য উল্টো বেশ আগ্রহ নিয়েই ডেকের রেলিংয়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। একরকম অভ্যর্থনা দিয়েই ইয়টে তুলে নিলেন তরুণ দর্শনার্থীকে।
এদিকে যে আশায় অতো পথ সাঁতরে আসা সুলির, সে ছবি তোলার শখ মাটি হওয়ার যোগাড়। পানিতে ভিজে গিয়ে তাঁর ফোনটাই যে বিগড়ে গেছে ততোক্ষণে। তাতেই বা কি? মেসি তাঁর বোটের কর্মীদের কাছ থেকে চেয়ে নিলেন একখানা ফোন, ছবি তুলে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করলেন সুলির একাউন্টে।
এটুকুই এক জীবনের পাওয়া হতে পারতো সুলির জন্য। তবে এমন ভক্তকে বোধহয় খালি মুখে বিদেয় দিতে চাইলেন না মেসি। ফলের রসে আপ্যায়ন করলেন, এই ফাঁকে কুড়ি মিনিটের মতো আড্ডাও হয়ে গেলো দু’জনের। এরপর ব্যক্তিগত স্পিডবোটে করে তাঁকে গন্তব্যে ফিরিয়ে নেবার ব্যবস্থাও করে দিলেন।
পুরো ঘটনায় একরকম অভিভূত অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সমর্থক সুলি, “যেভাবে তিনি আমাকে অভ্যর্থনা জানালেন, কথা বললেন...মনেই হচ্ছিল না তিনি একজন বিশ্বসেরা তারকা। এতো বিনয়, এতো আন্তরিকতা!”
ওদিকে সুলির যে বন্ধুটা তাঁর সাথে না গিয়ে সৈকতেই রোদ পোহাচ্ছিলেন, সূর্যের তাপটা তাঁকে এরপর কেমন পোড়াচ্ছিল একবার ভাবুন তো!