দৌড়ে টিকতে পারবে অ্যাটলেটিকো?

২০১১ সালের ডিসেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে নিয়ে বেশ সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন ডিয়েগো সিমিওনে। গেল বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল হারার পরে সিমিওনের ক্যালদেরন ছাড়া নিয়ে জোর গুঞ্জন চললেও প্রেসিডেন্ট এনরিকে সেরেজো । আসন্ন ট্রান্সফার ব্যান সত্ত্বেও সিমিওনেও নতুন উদ্যমে স্পেন এবং ইউরোপে না পাওয়া সফলতা অর্জনের ছক কষে ফেলেছেন বলেই ধারণা করা যায়। ‘একবার না পারিলে দেখ শতবার’ নীতিতে বিশ্বাসী সিমিওনের দল ২০১৫-১৬ মৌসুমে গোল খেয়েছে রেকর্ড মাত্র ১৮টি।
এক নজরে সিমিওনের অধীনে অ্যাটলেটিকোর পাঁচ মৌসুম
মৌসুম |
লিগ পজিশন |
পয়েন্ট |
স্প্যানিশ কাপ |
ইউরোপ |
অর্জন |
অন্যান্য |
---|---|---|---|---|---|---|
২০১১-১২ |
৫ম |
৫৬ |
রাউন্ড অফ ৩২ |
ইউরোপা লিগ* |
বিজয়ী* |
|
২০১২-১৩ |
৩য় |
৭৬ |
বিজয়ী* |
ইউরোপা লিগ |
রাউন্ড অফ ৩২ |
উয়েফা সুপারকাপ বিজয়ী* |
২০১৩-১৪ |
১ম* |
৯০ |
সেমিফাইনাল |
চ্যাম্পিয়নস লিগ |
ফাইনাল |
|
২০১৪-১৫ |
৩য় |
৭৮ |
কোয়ার্টার ফাইনাল |
চ্যাম্পিয়নস লিগ |
কোয়ার্টার ফাইনাল |
সুপারকোপা বিজয়ী* |
২০১৫-১৬ |
৩য় |
৮৮ |
কোয়ার্টার ফাইনাল |
চ্যাম্পিয়নস লিগ |
ফাইনাল |
|
১-০, ২-১ ব্যবধান স্কোরলাইনকে ডালভাত বানিয়ে ফেলা অ্যাটলেটিকো মৌসুমজুড়ে বার্সেলোনা ও রিয়ালের সাথে লিগে সমানে সমান দৌড়িয়েও নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে দুই এবং চ্যাম্পিয়ন বার্সা থেকে তিন পয়েন্টে পিছিয়েই লিগ শেষ করে। ২০১৩-১৪ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল হারের ক্ষত না শুকাতেই ২০১৫-১৬তে তা আরও গভীর হয়। বায়ার্ন মিউনিখ ও বার্সার মত দুর্দান্ত ফর্মে থাকা পরাশক্তিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠলেও রিয়ালের জিদান ম্যাজিকের সামনে হারতে হয় তাদের।
ইএসপিএনএফসিতে আপডেটকৃত স্কোয়াড
বরাবরের মতই রক্ষণকে প্রাধান্য দিয়ে দল গোছাতে ব্যস্ত সিমিওনে। ব্যাকলাইনে অভিজ্ঞ ফুলব্যাকদ্বয় হুয়ানফ্রান ও ফেলিপে লুইজের সাথে সেন্ট্রালে দেখা যাবে স্টেফান সেভিচ, জোসে মারিয়া গিমিনেজ এবং সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া ডিয়েগো গোডিনকে। এ লাইনের পেছনে মৌসুম জুড়ে গোলবার আগলে রাখার দায়িত্ব পেয়েছে স্লোভেনিয়ান গোলরক্ষক জন অব্লাকের বিশ্বস্ত হাত। এ মৌসুমে সিমিওনে আরো পাচ্ছেন সাসৌলো থেকে দলে ফেরা ক্রোয়েট রাইট ব্যাক সিমেকে। এছাড়াও ২০ বছর বয়সী লুকাস হার্নান্দেজের সাথে চুক্তিটা ২০২০ সাল পর্যন্ত বাড়িয়ে এক অভেদ্য রক্ষণেরই বার্তা সবাইকে দিয়েছেন সিমিওনে।
নিজের মনের মত তৈরি করা মাঝমাঠকে নিয়ে এবার খুব বেশি চিন্তা করতে হচ্ছে না সিমিওনেকে। অভিজ্ঞতার সাথে তারুণ্যের এক অভূতপূর্ব মিশেল দেখা যাবে এবার এই মাঝমাঠে। তরুণ অলিভার টরেস, কারাস্কো, সল নিগুয়েজের প্রতিভা পূর্ণতা পাবে টিয়াগো, গাবি, অগুস্তো ফার্নান্দেজদের অভিজ্ঞতার ছায়ায়। সাথে রয়েছে কোকের মত একজন সব্যসাচী মাঝমাঠের নায়ক। সাথে থাকছে বেনফিকা থেকে আগত সিমিওনের নতুন সংযোজন আর্জেন্টাইন উইঙ্গার নিকোলাস গাইতান। ২৩ বছর বয়সীকে আনার পেছনে যে আক্রমণে ধার বাড়ানোর চিন্তাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন সিমিওনে তা সাদাচোখেই বোঝা যায়।
নিকোলাস গাইতান
কেভিন গ্যামেইরো
গত মৌসুম ট্রফিলেস কাটানোর পরে সিমিওনে বুঝেছিলেন শুধু রক্ষণ দিয়ে ট্রফি আনা সম্ভব হয়ে উঠছে না। রক্ষণের পাশাপাশি এবার আক্রমণের ব্যাপারেও আলাদা করে চিন্তা করেছেন সিমিওনে। মাঝমাঠে গাইতানের আগমন সেটা প্রমাণ করে। আক্রমণভাগের লেভেল আপগ্রেড করতে সিমিওনে সেভিয়া থেকে স্ট্রাইকার কেভিন গ্যামেইরোকে এনেছেন। সাথে তো রয়েছেই স্বপ্নের মত ব্যক্তিগত মৌসুম শেষ করা ফরাসি স্ট্রাইকার আন্তোনিও গ্রিজম্যান এবং স্থানীয় নায়ক ফার্নান্দো টরেস। গ্রিজম্যানের এই মৌসুমের ফর্ম আর টরেসের সময় সময় রক্ষাকর্তা হয়ে জেগে উঠার সাথে নতুন গ্যামেইরো! বেশ কঠিন একটা সময়ই কাটাতে হবে বোধ হয় প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের।
সম্ভাব্য ফর্মেশন হিসেবে সিমিওনের পছন্দের ৪-৪-২ সাথে এই লাইন আপকেই বিশ্লেষকরা এগিয়ে রাখছেন:
দায়িত্ব পাবার পরে এই প্রথমবারের মত রক্ষণের পাশাপাশি আক্রমণ নিয়েও চিন্তা করে দল গুছালেন সিমিওনে। সাম্প্রতিক সময়ে অল্পের জন্য পা হড়কে যাওয়া থেকেই হয়তবা নিজের পরিকল্পনার কিছুটা পরিবর্তন এনেছেন। যথেষ্ট গভীরতা সম্পন্ন এক স্কোয়াড নিয়ে এবার মৌসুম শুরু করতে যাচ্ছে গত মৌসুমে নিয়মিত পারফর্ম করেও ট্রফিলেস থাকা অ্যাটলেটিকো। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগোনো সিমিওনে কি দিতে পারবেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে বার্সার থেকে এগিয়ে নিয়ে অজেয় সব কিছু জেতানোর স্বাদ? পারবেন কি মাদ্রিদ শহরের রঙ লাল করতে, নাকি বরাবরের মত তা সাদাই থেকে যাবে?