বিদায়বেলায় অভিমানী দিলশান
ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটা খেলে ফেলেছেন গতকাল। বিদায়টা হাসিমুখে বললেও ভিতরের অভিমানটুকু পুরোপুরি চেপে রাখতে পারলেন না তিলকরত্নে দিলশান। অধিনায়কত্বের সময় সতীর্থদের সাহায্য না পাওয়ার ব্যাপারটা আজও তাঁকে কষ্ট দেয়। একরকম জোর করে অধিনায়কত্ব গছিয়ে দিয়ে ক’ মাস না যেতেই সেটা কেড়ে নেওয়ার ব্যাপারটাও মানতে পারে নি শ্রীলংকার এই ব্যাটসম্যান।
২০১১ বিশ্বকাপের পর নিতে হয়েছিল দলের দায়িত্ব। সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনেরা দায়িত্ব ছেড়ে দিলেন, বাকি সিনিয়ররাও নেতৃত্ব কাঁধে নিতে অপারগ হন। একরকম চাপে পড়েই অধিনায়ক হন দিলশান। তবে সেটার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ১০ মাস, ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে ২০১২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। এই সল্প সময়ে তাঁকে অনেক বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে, “আসলে আমার অধিনায়কত্ব নেয়ার কোন ইচ্ছা ছিল না। বোর্ডের কর্মকর্তারা আমাকে ৬ মাসের জন্য দায়িত্ব নিতে বলে। দলের অবস্থাও খুব একটা ভাল ছিল না। মুরালি অবসর নিয়েছিল, কুলাসেকারা ইনজুরিতে। আমার খুবই সীমিত রসদ নিয়ে মাঠে নামতে হয়েছে।”
অতীতের কথা বলতে গিয়ে দলের বর্তমান অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের প্রসঙ্গটা চলে আসে, “ম্যাথিউস তখন পুরোপুরি ফিট ছিল না। এটা হয়ত আমার দুর্ভাগ্য বলতে পারেন। জয়াবর্ধনে অধিনায়ক হওয়ার পর সে পুরোদমে মাঠে ফিরতে পেরেছে।”
অবশ্য ম্যাথিউস একেবারেই যে বোলিং করেননি তা কিন্তু না। তবে ওই সময়ের কোন ম্যাচেই ৫ ওভারের বেশি বল করতে দেখা যায়নি তাঁকে। তাই হয়ত এই কথাগুলো বলতে গিয়ে দিলশানের কণ্ঠে একটু অভিমানের সুর, “আসলে অতীত নিয়ে আর কথা বলে কি হবে। যা হওয়ার তাতো হয়েই গেছে। সামনের দিকে তাকানোই বুদ্ধিমানের কাজ।”
২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর অধিনায়কত্ব হারালেও নিজের খেলাটাকে আগের মতোই ভালবেসে গেছেন। পরের সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দলের হয়ে সর্বচ্চ ৫১৩ রান করেন। অধিনায়কত্বের ভারমুক্ত হয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়াই ছিল তাঁর লক্ষ্য, “ দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর আমি সবকিছুকে দূরে সরিয়ে রাখি। খেলার উপরে শতভাগ মনোযোগ দেই, সবচেয়ে বেশি রান করে ম্যান অফ দ্যা সিরিজও হই। আসলে দেশের জন্য খেলতে পারাই আমার কাছে সব। খেলাটাকে আমি ভালবাসি। ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলো আমি ভাবিনা কিন্তু তবুও ঘটনাগুলো আমাকে কষ্ট দিয়েছিল।”
আক্ষেপ থাকলেও অধিনায়ক হিসেবে নিজের পালন করা দায়িত্ব নিয়ে সন্তুষ্ট দিলশান, “দেখতে ভালোই লাগে, যেসব তরুণ খেলোয়াড়দের আমি সুযোগ দিয়েছিলাম তারাই আজকে দলকে ম্যাচ জেতাচ্ছে। সবাই তখন বলত কেন এদেরকে দিনের পর দিন খেলিয়ে যাচ্ছি। আশা করি তাঁরা এটার উত্তর এখন পাচ্ছেন। দিনেশ চান্দিমালের মত আরও কিছু তরুণ খেলোয়াড় দরকার আমাদের।”
বিদায়বেলায় সামান্য আক্ষেপ নিয়েই হয়তো ঘরে ফিরলেন দিলশান। তবে পিছন ফিরে তাকালে তাঁর প্রাপ্তির খাতাটাই ভারী হওয়ার কথা। ভক্ত-অনুরাগীদের যে ভালোবাসা শেষ অব্দি পেয়ে গেছেন, সেটার সামনে বাকি সব তো তুচ্ছই।