• সিরি আ
  • " />

     

    ক্রিকেট দিয়ে শুরু মিলান-জুভেন্টাসের

    ক্রিকেট দিয়ে শুরু মিলান-জুভেন্টাসের    

    একটু কল্পনা করুন তো, মালদিনি-পিরলোরা ১২০ গজের মাঠ না মাতিয়ে কাঁপাচ্ছেন ২২ গজের উইকেট! কিংবা বুফন-ক্যানাভারোরা ফুটবল বিশ্বকাপ নয়, ক্যামেরাবন্দী হচ্ছেন ক্রিকেট বিশ্বকাপের শিরোপা হাতে! ঠিক এই মুহুর্তে এমন কল্পনা নেহাতই অলীক মনে হলেও শত বছরের পুরনো ইতিহাস বলে এমনটা একেবারে অসম্ভবও ছিল না। গত শতকের গোড়ার ইতালিতে ফুটবল নয়, উত্থানটা হতে পারতো ক্রিকেটেরই; এসি মিলান কিংবা জুভেন্টাসের মতো যে ক্লাবগুলোকে আজ পৃথিবী চেনে ফুটবলের সমার্থক হিসেবে, ইংরেজদের হাতে গোড়াপত্তন হওয়া সে সংগঠনগুলোই আজ হতে পারতো ক্রিকেটের অন্যতম তীর্থ। অবিশ্বাস্য শোনালেও মূলত ক্রিকেট খেলার উদ্দেশ্যেই  যাত্রা শুরু হয়েছিল ক্লাবগুলোর!

     

    বিশ শতকের শুরুর দিকের কথা। খেলাধুলাটা তখনও এ যুগের মতো অমন পেশাদার রূপ নেয় নি। শখ কিংবা অবসরে বিনোদনের খোরাকগুলো জাতীয়তাবাদের প্রতীক আর বানিজ্যের উপকরণ হয়ে ওঠে নি। তবে রকমারি ব্যবসায়িক কাজে ইতালিতে ততদিনে ইংরেজদের বেশ আনাগোনা। আলফ্রেড এডওয়ার্ড আর হার্বার্ট কিলপিন এমনই দুই ইংরেজ ব্যবসায়ী। জীবিকার তাগিদে দূর দেশে গেলেও অবসরে ক্রিকেট খেলাটা খুব মিস করছিলেন দু’জনই। সে তাড়না থেকেই তাঁরা ভাবলেন ওখানেই ক্রিকেটের প্রচলন করলে কেমন হয়! সে ভাবনা থেকেই উনিশ শতকের শেষ সূর্যটা ডোবার সপ্তাহ দুয়েক আগের কোনো এক বিকেলে মিলানের এক সরাইখানায় স্থানীয় বন্ধুদের আড্ডায় দু’ ইংরেজ ব্যবসায়ীর প্রস্তাবনায় গড়ে ওঠা ‘মিলান ক্রিকেট ও ফুটবল ক্লাব’ই আজকের এসি মিলান।

     

    এরও বছর দুয়েক আগে তুরিনে একদল শিক্ষার্থীর উদ্যোগে জুভেন্টাসের গড়ে ওঠার নেপথ্যেও ছিল ক্রিকেটের প্রেরণা। তবে ১৮৯৯ সালে ক্লাবটি এক বছর বয়সী ঘরোয়া ফুটবল লিগের শিরোপা জিতে গেলে ক্লাব প্রাঙ্গণে ক্রিকেটের সমাধি রচনা হয়ে যায়।

     

    ইতালিতে ক্রিকেটের জন্মটা অবশ্য হয়ে গিয়েছিল আরও ক’ বছর আগেই, ১৮৯৩ সালে জেনোয়ায়। আজকের সিরি আ’র দল জেনোয়া সিএফসি ১৮৯৩ সালে ব্রিটিশ অভিবাসীদের হাতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল মূলত ক্রিকেট ক্লাব হিসেবেই, কাগজে-কলমে এখনও দলটির নাম জেনোয়া ক্রিকেট অ্যান্ড ফুটবল ক্লাব। প্রতিষ্ঠার পর প্রথম বছর দুয়েক ক্লাবটি কেবল ক্রিকেটই খেলে, প্রতিপক্ষ থাকতো বন্দরে ভেড়া মালবাহী জাহাজের ইংরেজ ক্রুরা।

     

    ইতিহাস বলে জেনোয়ার এই ক্লাবটির সামনে সুযোগ ছিল ক্রিকেটকে ইতালিতে ছড়িয়ে দেয়ার। তবে নাক উঁচু ব্রিটিশরা শুরুর দিকে ইতালীয়দেরকে ক্লাবটির সদস্যপদ দিতে নারাজ ছিল। অবশ্য পরবর্তীতে নানামুখী চাপে ক্লাবের দরজা স্থানীয়দের জন্যও উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। কিন্তু ততদিনে ফুটবলে বুঁদ হতে শুরু করেছে ইতালি, ইংরেজদের ক্রিকেট তাই তাঁদের মাঝে আর নতুন আবেদন তৈরি করতে পারে নি। ক্লাবে স্থানীয়দের আধিক্য বাড়তে শুরু করলেও তাঁদের পছন্দই হয়ে ওঠে মুখ্য। ১৮৯৮ সালে এই ক্লাবের উদ্যোগেই মাঠে গড়ায় ইতালীয় ফুটবল লিগ। ক্রিকেটটা এরপর থেকে রয়ে গেছে কেবল নামকরণেই, গোড়াপত্তনের প্রেরণার ‘সম্মানসূচক’ স্মৃতি হয়ে।

     

    দেশজুড়ে ফুটবল-জ্বর ততদিনে হাওয়া দিতে শুরু করেছে মিলান ক্রিকেট অ্যান্ড ফুটবল ক্লাবেও। একসময় সেখানেও গৌণ হয়ে গেলো ফুটবলের কাছে। অগত্যা দুই ইংরেজ প্রতিষ্ঠাতা ইস্তফা নেন ক্লাবের দায়িত্ব থেকে।

     

    বিশ শতকের শুরুর দিকটায় ইতালির সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য এ ক্লাবগুলোয় ক্রিকেটের সম্ভাবনাময় সকালের অপমৃত্যু হতে থাকে এভাবেই। অথচ আর ক’টা বছর টিকে গেলেই কে জানে হয়তো ইতালীয়দের মধ্যে ব্যাট-বলের উত্তাপটা ছড়িয়ে দেয়া গেলেও যেতে পারতো! সেক্ষেত্রে আজকের ইতালি ফুটবলের পরিবর্তে কিংবা পাশাপাশিই হতে পারতো ক্রিকেটের পরাশক্তি। জিয়ান্নি রিভেরা, জিয়ানচিনতো ফাচেত্তি কিংবা জিয়ানলুইজি বুফনদের কেউ কেউ হয়তো আজ কিংবদন্তী হতেন বাইশ গজের সেলুলয়েডেই!

     

    [ক্রিকেট বিশ্লেষক টিম ব্রুকসের ‘ক্রিকেট অন দ্য কন্টিনেন্ট’ অবলম্বনে]