টেইলরকে যোগ্য ভাবতে পারেননি ম্যাককালাম
বন্ধুত্বের মাঝে ফাটল ধরাতে একটি ইস্যুই যথেষ্ট। বিশেষ করে সতীর্থদের সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার অন্যতম প্রধান একটি কারণ হচ্ছে অধিনায়কত্ব। কে বেশি ‘যোগ্য’, এটা নিয়ে তর্ক বিতর্ক কম হয় না দলের ভেতরে বাইরে। পুরনো অধিনায়ক সরে দাঁড়ালে দলের বাকি সিনিয়র সদস্যদের ভিতর একটা ‘অদৃশ্য লড়াই’ শুরু হয়। বেশিরভাগ সময়েই এই লড়াই সম্পর্কে চিড় ধরিয়ে দেয়। ঠিক এরকমই একটা ব্যাপার ঘটেছিল নিউজিল্যান্ডের রস টেইলর এবং ব্রেন্ডন ম্যাককালামের সাথে। অধিনায়ক হিসাবে টেইলর কতটা ‘অনুপ্রেরণাহীন’ ছিলেন, সেই বিষয়টি নিয়েই এবার মুখ খুললেন ম্যাককালাম।
খেলাকে বিদায় বলে দেয়ার পর ক্রিকেটারদের প্রকাশিত ‘আত্মজীবনী’গুলো রীতিমত একেকটা ‘অ্যাটম বোমা’! পুরনো যত তিক্ততা আছে সবই উঠে আসে এসবে। কোচ, সতীর্থ কেউই বাদ যান না। এই বছরের শুরুতে অবসরে যাওয়া ম্যাককালাম নিজের আত্মজীবনী ‘ডিক্লেয়ার্ড’ এও ক্যারিয়ারের নানা সময়ের খণ্ডচিত্র তুলে ধরেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে টেইলর এবং তাঁর মাঝের দ্বন্দ্বের ব্যাপারটা। অধিনায়ক হিসাবে টেইলর কখনোই ‘যোগ্য’ বলে ভাবতে পারেননি, তাঁর বিভিন্ন দুর্বলতার দিকও তুলে ধরেছেন বইয়ের একটি অধ্যায়ে।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১১ বিশ্বকাপের পর। ড্যানিয়েল ভেট্টরি অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়ার পর টেইলর এবং ম্যাককালামই এগিয়ে ছিলেন এই পদের দৌড়ে। ‘জনমতের’ ভিত্তিতে যখন টেইলরকেই অধিনায়কের ভার দেয়া হল, ব্যাপারটা ঠিক মেনে নিতে পারেননি ম্যাককালাম। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে ২০১২ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। সফর থেকে ম্যাককালামকে বিশ্রাম দেয়া হয়। তবে টেইলরের ইনজুরির কারণে জরুরী ভিত্তিতে তাঁর ডাক পড়ে। সেখানে গিয়ে অধিনায়কত্বের দায়িত্বভার সামলাবেন এমনটাই ভেবেছিলেন, কিন্তু হলও উল্টোটা। কেন উইলিয়ামসনকেই অধিনায়ক রাখা হলও পুরো সফরের জন্য। এই ঘটনায় টেইলর এবং কোচ জন রাইটকেই দোষারোপ করেছেন ম্যাককালাম, “হয় টেইলর আমার অধিনায়কত্ব করার ব্যাপারে ভয় পাচ্ছিল, এজন্যই সে জনকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বলেছে। অথবা এটা জনেরই পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত।”
কোচ হিসেবে সেটাই ছিল রাইটের শেষ দায়িত্ব। এরপর নতুন কোচ মাইক হেসন আসার পর টেইলর-ম্যাককালামের মাঝে তৈরি হওয়া ফাটল আরও চওড়াই হয়েছিল। কোচ হিসাবে রাইট খুব একটা বন্ধুবৎসল ছিলেন না ম্যাককালামের সাথে, অন্যদিকে হেসন ছিলেন অনেক বেশি কাছের। আর এটা নিয়েও টেইলরের শুরু থেকেই দ্বিমত ছিল, “আমার মনে হয় হেসনের কোচিং নিয়ে শুরু থেকেই টেইলর সন্দেহ করত। সে ভাবত হেস হয়ত আমাকে অধিনায়কত্ব দিয়ে দেবে!”
দলের অন্যতম সিনিয়র খেলোয়াড় হওয়ার পরেও মাঠে কোনো ব্যাপারে মতামত দিতে পারতেন না ম্যাককালাম। দলের বৈঠকগুলোতেও টেইলর একেবারেই নিশ্চুপ থাকতেন বলেই জানিয়েছেন তিনি, “বৈঠকে হেস অনেক কথা বলত। কিন্তু টেইলর একেবারে চুপ। একটি কথাও বলতনা সে। সে আসলে কী ভাবত? আমার কোন ধারণাই নেই এই ব্যাপারে। আমি এমন একটা পরিস্থিতির ভিতরে পড়ে গিয়েছিলাম যেখানে একজন অধিনায়ক সতীর্থ এবং কোচের সাথে কথাই বলে না। আমি সহ অধিনায়ক হিসাবে নিজের দায়িত্ব পালন করছিলাম ঠিকই, কিন্তু ভিতরে ভিতরে আমি হতাশ ছিলাম। নিজের চোখের সামনে দলের পতন দেখতে হচ্ছিল।”
একের পর এক হারে জর্জরিত দলের অধিনায়ক টেইলরকে অনেক বুঝানোর চেষ্টাও করেছিলেন ম্যাককালাম, “গল টেস্টের পরাজয়ের পর আমি তাঁকে বলেছিলাম , এটা তোমার দল। তোমাকেই এর লাগাম সামাল দিতে হবে। আমি শুধু তোমার পাশে থাকতে পারব। নাহলে সামনের দিনগুলোতে আরও খারাপ সময় আসবে।”
তবে এতকিছুর পরেও কোন পরিবর্তন আসছিল না। একটা সময়ে অবসর নেয়ার কথাও ভেবেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টেইলর সরে দাঁড়ান। অধিনায়কত্বের দায়িত্ব তাঁর কাঁধেই বর্তায়। প্রায় ৪ বছর দায়িত্ব পালন করে এই বছরেই বিদায় বলেন। আজও অধিনায়ক নির্বাচনের সেই জনমতের ব্যাপারটি ভুলতে পারেননি, “আমি বিশ্বাস করি ওই মুহূর্তে আমিই এই পদের জন্য সবচেয়ে বেশি তৈরি ছিলাম। কিন্তু যেভাবে নির্বাচকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটা ঠিক হয়নি। টেইলর আমার ছোট, সে অনেক ভুল করেছে। তবে পরবর্তীতে যা হয়েছে সেটা আমাদের দুজনকেই অনেক শিক্ষা দিয়েছে। কিন্তু ওই সময়ের তিক্ততা হয়ত কখনোই দূর হবে না।”