• " />

     

    পা হারিয়েও হাতছাড়া করলেন না বল!

    পা হারিয়েও হাতছাড়া করলেন না বল!    

    ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার দিয়ে বল চলে যাচ্ছে বাউন্ডারির দিকে। ঝাঁপিয়ে পড়ে বল ঠেকালেন, কিন্তু এরই মাঝে খুলে গিয়েছে তাঁর নকল পা। সেদিকে তোয়াক্কা না করেই এক পায়ে এগিয়ে এসে বল ফেরত পাঠালেন বোলারের দিকে। গত সপ্তাহে আইসিসি একাডেমী দুবাই ইনভাইটেসনাল টি-টোয়েন্টির ফাইনালে অবতারণা হয়েছিল এই অসাধারণ দৃশ্যের। লিয়াম থমাস প্রমাণ করেছেন, খেলার প্রতি ভালোবাসা কোনো বাধাই মানে না।

    কাজ করেন ব্র্যাডফোর্ডের একটি পানি সরবরাহকারী সংস্থায়। জন্মগত পঙ্গু থমাস ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট খেলতেন। কিন্তু পঙ্গুত্বের অভিশাপে বেশিদূর এগোতে পারেননি। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসাটা কমেনি এতটুকু। নকল পা নিয়েই খেলে যেতে থাকেন কাজের পাশাপাশি। এর মাঝেই সুযোগ পেয়ে যান ইংলিশ প্রতিবন্ধী দলে। স্বপ্নটা এভাবে সত্যি হয়ে যাবে কখনোই ভাবেননি থমাস, “আমি তো কল্পনাই করিনি এরকম কিছু হবে! দুবাইতে আসা, ক্রিকেট খেলার ব্যাপারে কখনোই চিন্তা করিনি। একজন পঙ্গু মানুষ এটা করতে পারে, এই ব্যাপারটি সবাই স্বাভাবিকভাবে ভাবতে পারেনা। কিন্তু খেলার সাথে নিজেকে জড়িত রাখলে এগুলো সম্ভব।”

    ‘ভয় পেয়ো না, সেটা যেই খেলাই হোক না কেনো’ এই মূলমন্ত্র হৃদয়ে ধারন করেই নিজের জীবনে এগিয়ে গিয়েছেন থমাস। অন্যদেরও এটাই মেনে চলার পরামর্শ দেন। সতীর্থ সবাই কোনো না কোনোভাবে পঙ্গু, এই যাত্রায় তাই সবাই একে অন্যের পাশেই থাকেন, “পঙ্গুত্বের জন্য আমরা মাঝে সাঝে একে অপরের সাথে মজা করি। নিজেদের কষ্ট ভোলার জন্য এরকম করা হয়। আমার ঘটনাতেও সবাই তাই করেছে।”

     
     
     

    শারীরিকভাবে পঙ্গু ক্রিকেটারদের নিয়ে আয়োজন করা  টুর্নামেন্টের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তান। ম্যাচে ইংলিশরা হেরে গেলেও ২২ বছর বয়সী থমাসের ফিল্ডিং প্রশংসা কুড়িয়েছে সবার। পা নয়, বলের দিকেই মনোযোগ ছিল তাঁর, “আসলে ব্যাপারটা হয়ে গেছে। আমি বলের দিকে ছুটছিলাম, হাত দিয়ে বল ধরার পর বুঝতে পারলাম আমার পা খুলে গেছে। আমি তখন বুঝতে পারছিলাম না, বল ধরব নাকি পা লাগাব! শেষ পর্যন্ত আমি বল ধরারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।”

    ইসিবি এবং ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা এরকম প্রতিবন্ধীদের খেলার সুযোগ করে দিচ্ছে বেশ কয়েক বছর হলো। শারীরিকভাবে অক্ষম, অন্ধ, শ্রবণশক্তিহীন মানুষদের নিয়ে তাঁদের এই কাজের মাধ্যমে আরও বেশি মানুষ তাঁর মতো স্বপ্নপূরণের সুযোগ পাবে, এমনটাই আশা করছেন থমাস।