• " />

     

    সেদিনের এই দিনে : ব্রেন্ডন 'ব্লাডি' ম্যাককালাম!

    সেদিনের এই দিনে : ব্রেন্ডন 'ব্লাডি' ম্যাককালাম!    

    হ্যাগলি ওভাল করতালিতে মুখর।

    নামছেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, নিজের শেষ টেস্টে। পিচের একপাশে দুই সারিতে দাঁড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ান একাদশও যোগ দিয়েছে করতালিতে। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ হাত মেলালেন, পিঠ চাপড়ে দিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। ম্যাককালামের ওপর আবেগ ভর করাটা স্বাভাবিক। আবেগের বশেই কিনা প্রথম বলেই চালিয়ে খেললেন, বল ব্যাটে লাগলোই না। হ্যাজলউডের পরের বলে ব্যাটটাকে চড়কির মতো ঘুরিয়ে আনলেন আবার, কানায় লেগে থার্ডম্যান দিয়ে হলো চার। কিসের আবেগ, এ তো সেই চিরায়ত ম্যাককালাম!

    মিচেল মার্শকে জায়গায় দাঁড়িয়েই ধীর, স্থির ম্যাককালাম অসাধারণ টাইমিংয়ে লং অন দিয়ে মারলেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ১০১তম ছয়। অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে ছাড়িয়ে হয়ে গেলেন টেস্টে সবচেয়ে বেশী ছয়ের মালিক।

     

    ম্যাককালাম থামলেন না।

    ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে বলের লাইন থেকে সরিয়ে নিলেন নিজেকে, জায়গা বানালেন। কাভারের ওপর দিয়ে ছয়। সেই সহজাত ছয় মারার ভঙ্গিমা যেন ফিরে এলো আরেকবার! ম্যাককালাম বলকে আছড়িয়ে মারলেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে, ম্যাককালাম স্লগ করে চার মারলেন। ১৫ বল, ৩৬ রান। খোলসে ঢুকলেন এরপর। বেরুতে চাইলেন অফস্ট্যাম্পের বাইরের একটা বলকে কাট করে, গালিতে মিচেল মার্শ নিলেন অসাধারণ এক ক্যাচ! বিদায় তবে, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম!

    নাহ্‌! জেমস প্যাটিনসনের পা যে পপিং ক্রিজের দাগের ওপর! রিচার্ড কেটেলব্রো, ইংলিশ আম্পায়ার ডান হাতটা তুলে ধরলেন। ম্যাককালামের বিদায়ী ঘন্টা বেজেও বন্ধ হয়ে গেল! পরের বলেই আবার বিদায়-ঘন্টা বাজতে পারতো। বলটা ফ্রি হিট ভাবলেন কিনা, কে জানে! হুক করতে গেলেন, লং লেগে হ্যাজলউডের কাছে গেল ক্যাচ। তালুবন্দী করতে পারলেন না, উল্টো বুকে লেগে হলো ছয়! আগের বলের পর কারও যদি হুট করে মনে হয়ে থাকে দিনটা ম্যাককালামের, এরপর সে ‘মনে হওয়াটা’ প্রায় ‘বিশ্বাস’-য়েই পরিণত হবে!

    ম্যাককালাম ফিফটি করলেন ৩৪ বলে। রেকর্ডটা মিসবাহ-উল-হকের, ২১ বলের।  

     

     

    ম্যাককালাম থামলেন না।

    স্ট্যাম্পের ওপরের বলে কাট। ফুললেংথের বলে জোরের ওপর ড্রাইভ। ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে বলের ওপর চড়াও হওয়া। ফিফটির পরের ১৩ বলে ২৮ রান। ম্যাককালাম এরপর যেন লুকোচুরি খেললেন অস্ট্রেলিয়ানদের সাথে। আউটের সাথে।

    হ্যাজলউড শর্ট অব আ লেংথে বল করেন, ম্যাককালাম পুল করতে যান। মিড-অনের একটু ওপর দিয়ে একবার হলো চার, বাকীগুলো গেল পেছন দিকে। কখনও কিপারের মাথার ওপর দিয়ে, কখনও ডিপ ফাইন লেগকে ফাঁকি দিয়ে। কখনও চার, কখনও ছয়।

    ভিভ রিচার্ডস ও মিসবাহ-উল-হকের দ্রুততম সেঞ্চুরিটা তখন নাগালের মধ্যে। ৫৩ বলে ম্যাককালামের রান ৯৬। রিচার্ডস-মিসবাহর রেকর্ড ৫৬ বলের।

    ম্যাককালামের ভাগ্যটা যেন মানতে পারছিলেন না স্টিভেন স্মিথ। ‘ফ্লাই স্লিপ’ আনলেন একটা। উইকেটকিপার ও প্রথম স্লিপের মাঝে, অনেকখানি নীচের দিকে প্রায় বাউন্ডারি ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকলেন একজন ফিল্ডার। সঙ্গে থার্ডম্যান। তবে স্মিথের সঙ্গে সেসব ফিল্ডারও এরপর চেয়ে চেয়ে দেখলেন শুধু।

    হ্যাজলউডের বলে আবার ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এলেন, ব্যাটটা যেন ছুঁড়ে দিলেন ব্যাটের ওপর। কাভার দিয়ে চার, বলের হিসেবে দ্রুততম টেস্ট সেঞ্চুরির মালিক হয়ে গেলেন ব্রেন্ডন ব্যারি ম্যাককালাম! নিজের শেষ টেস্টে!

     

     

    ম্যাককালাম থামলেন না।

    ম্যাককালাম এগুতে থাকলেন দেড়শর দিকে। প্যাটিনসনকে হাঁটু গেঁড়ে মারতে গেলেন, ডিপ স্কয়ার লেগে ন্যাথান লায়ন সামনের দিকে লাফিয়ে নিলেন অসাধারণ ক্যাচ। ঠিকঠাক হয়েছে তো ক্যাচ? ম্যাককালাম অপেক্ষা করলেন, আম্পায়ার পরখ করে দেখলেন। ৭৯ বল, ১৪৫ রান। ২১ চার, ৬ ছয়।

    ব্রেন্ডন ম্যাককালাম থামলেন।

    পুরো হ্যাগলি ওভাল তখন করতালিতে মুখর। এমন শেষকেই তো ‘রুপকথার শেষ’ বলে অভিহিত করা হয়, এমন ইনিংস বর্ণনা করতেই তো বলা হয়, ‘যেন নিজের চিত্রনাট্য নিজেই লিখেছিলেন তিনি!’


    পুনশ্চঃ আরেক ইনিংসেও ব্যাট করেছিলেন ম্যাককালাম। তবে তার আগেই জো বার্নস ও স্টিভেন স্মিথের সেঞ্চুরিতে ম্যাচ জেতার মতো লিডটা পেয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। নিজের শেষ টেস্টে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম হেরেছিলেন।