সেদিনের এই দিনে : দুইশ নম্বর এক
‘পৃথিবীতে দুই রকমের ব্যাটসম্যান আছে। এক- শচীন টেন্ডুলকার। দুই- বাকী সবাই।’ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার বলেছিলেন। বীরেন্দর শেওয়াগও অনেক কিছুই বলেছেন শচীনকে নিয়ে। তবে শচীনকে তিনি প্রায়ই বলতেন, ওয়ানডেতে যদি কেউ ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারেন, সেটা হবেন শচীনই।
আগের বছরের দুইটা ইনিংসও এমন রুপ নিতে পারতো বলে মনে হয় বীরেন্দর শেওয়াগের কাছে। ক্রাইস্টচার্চে ১৩৩ বলে ১৬৩ রান করে উঠে গিয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকার, চোট নিয়ে। ‘ভাগ্যে থাকলে হবে, নাহলে না।’ শেওয়াগ শচীনকে হাতছাড়া হওয়া সুযোগটার কথা মনে করিয়ে দেয়ায় জবাব পেয়েছিলেন। সে বছরই হায়দরাবাদে ১৭৫ রান করে আউট হওয়ার পর শেওয়াগ আরেকবার সুযোগটার কথা বলেছিলেন, উত্তরও পেয়েছিলেন আগের মতোই, ‘ভাগ্যে থাকলে হবে’।
শচীনের এ দুইটি ইনিংসের চেয়েও বড় ইনিংস ছিল ওয়ানডেতে, সুযোগ পেয়েছিলেন বেশ কয়েকজনই। তবে শেওয়াগের সবসময় মনে হতো, ডাবল সেঞ্চুরি যদি কেউ করেন, তিনি হবেন শচীন টেন্ডুলকার। শচীনই হয়েছিলেন, ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রথম দুইশ রানের মালিক। চার্ল ল্যাঙ্গেভেল্টের অফস্ট্যাম্পের বেশ বাইরের ফুললেংথের বলটা পয়েন্টের দিকে খেলে শচীন টেন্ডুলকারই গড়েছিলেন ইতিহাস! ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি গোয়ালিয়রে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ভারতের ক্রিকেট-ঈশ্বর করেছিলেন ১৪৭ বলে অপরাজিত ২০০ রান! এরপর শেওয়াগকে বলেছিলেন, ‘(ভাগ্যে) লেখা ছিল, হয়ে গেছে!’
ছবি কথা কয়!
১৩ বছর ধরে ওয়ানডে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল সাঈদ আনোয়ারের। চেন্নাইয়ে ভারতের সঙ্গে ১৯৪ রানের ইনিংসটি তো তাঁর নামের সাথে সমার্থকই হয়ে গিয়েছিল প্রায়। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচে সে রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছিলেন এক জিম্বাবুইয়ান, চার্লস কভেন্ট্রি। ‘শচীনের চেয়ে আর কারও বেশী প্রাপ্য নয় এ রেকর্ডটা। এ শীর্ষে পৌঁছানোটাও শুধু তাঁরই প্রাপ্য। রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙ্গার জন্য। আমি খুবই খুশী, আমার মুম্বাইয়ের বন্ধু শচীন টেন্ডুলকার আমার রেকর্ডটা ভেঙ্গেছে!’ আনোয়ারের কথাগুলো যেন শুধু তাঁর নয়, ক্রিকেটবিশ্বেরই কথা!
ক্যারিয়ারের ২০ বছর পার করার পর, ৩৬ বছর বয়সে যেন নতুন করে তারুণ্যপ্রাপ্তি ঘটেছিল সেদিন শচীনের। বীরেন্দর শেওয়াগের কথা সেদিন সত্য হয়েছিল। সেই শেওয়াগ, দু'বছর বাদে যিনি শচীনের ২০০ টপকে করেছিলেন ২১৯। শুধু শেওয়াগ কেন, রোহিত শর্মা তো করেছিলেন ২৬৪! ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি আছে ক্রিস গেইলের(বিশ্বকাপে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি, তারিখটাও শচীনের ঐ ইনিংসের দিনেই, ২৪ ফেব্রুয়ারি!), আছে মার্টিন গাপটিলের। ডাবল সেঞ্চুরি করবেন আরও অনেক জন। তবে আলাদা হয়ে থাকবে শচীনের সেই ইনিংস, আলাদা হয়ে থাকবেন তাই শচীন টেন্ডুলকার।
ওয়ানডেতেও ডাবল সেঞ্চুরি হয়। ডাবল সেঞ্চুরির মাইলফলক ছোঁয়া ব্যাটসম্যানরা দুইরকম।
এক- শচীন রমেশ টেন্ডুলকার।
দুই- বাকী সবাই।