তাঁদের তো ম্যাচ ফিও নেই!
ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালটা হলো না মাঠ খেলার অনুপযুক্ত থাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মাঠে ভারতের সঙ্গে ফাইনালটা হওয়ার কথা ছিল ২০ এপ্রিল। গ্রুপ পর্বেই ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ, ফাইনাল না হওয়াতে আফসোসে বেশী পুড়তে হয়েছে বাংলাদেশকেই। আরেকটা ‘ছোট’ আক্ষেপ আছে বাংলাদেশ ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট দলের সদস্যদের। চ্যাম্পিয়ন হলে প্রাইজমানির পুরো পঞ্চাশ হাজার টাকাই পেতেন তাঁরা, যৌথ চ্যাম্পিয়ন হওয়াতে ভাগ করতে হয়েছে সেটা। অতিথি দলকে ট্রফি দিয়ে দেয়ার রীতি বলে ভারত নিয়ে গেছে ট্রফিটাও!
পরের খেলা কবে, সেটা জানেন না ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড দলের কেউ। হয়তো কোনো ক্যাম্প হবে, হয়তো ডাক পড়বে। বাংলাদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ফর ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড (বিসিএপিসি), যে সংস্থার অধীনে এবারের টুর্নামেন্ট, আইসিআরসি(ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দ্য রেড ক্রস) এর মতো সংগঠনই আসলে এসব দলের সাথে থাকলে থাকা-অনুশীলনের ব্যবস্থাটা একটু ভাল হবে। আর নাহলে হবে না ক্রিকেটই!
এই টুর্নামেন্টের সময় একাডেমিতে একদিনই শুধু অনুশীলনের সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল। এফ রহমান হলের প্রভোস্ট বাংলো ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছিল তাঁদের! বাকী দুইটি দল আসার পর অবশ্য তাঁদের সবাইকে নেয়া হয়েছিল মিরপুরের ক্রীড়া-পল্লীতে। সেখান থেকেই জগন্নাথ হলের মাঠ।
মাঠে নাহয় আসা গেল। দলে সুযোগ পেয়ে খেলাও হলো। কিন্তু খেলার বিনিময়ে অর্থকড়ি মিলেছে সামান্য! সম্প্রতি শেষ হওয়া টুর্নামেন্টে যে ‘ম্যাচ ফি’ বলে কোনও কিছু পাননি বাংলাদেশ ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড দলের সদস্যরা! টুর্নামেন্ট শেষে যাতায়াত বাবদ পেয়েছেন ১৫০০ টাকা। আর প্রাইজমানির ২৫০০০ টাকা ভাগ হয়ে একেকজন পেয়েছেন ১১০০ টাকা করে। মোট ২৬০০ টাকা নিয়ে একটা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলে বাড়ি ফিরেছেন অনেক প্রতিকূলতা জয় করে আসা ক্রিকেটাররা। তবে যে সংস্থার অধীনে ক্রিকেটাররা এ টুর্নামেন্ট খেলেছেন, তাঁরা প্রত্যেক ক্রিকেটারকে ১০০০০ টাকা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে প্যাভিলিয়নকে জানিয়েছেন এই দলের অধিনায়ক সুমিত খান। 'ম্যাচ ফি'র ব্যাপারটা ভাবা অবশ্য বাড়াবাড়িই, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আলাদা একটা 'উইং'-ও হতে পারেনি ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট।
তবে সেই টাকাটাও কি পর্যাপ্ত? বিসিবি এখনও এই দলের দায়িত্ব নেয়নি। ভারতে টুর্নামেন্ট জেতার পর প্রধানমন্ত্রী নিজে এই দলকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। এককালীন অর্থ সহায়তাও দিয়েছিলেন। সেটা কোথায়, কিভাবে আছে, তাও জানেন না ক্রিকেটাররা।
এমনিতেই শারীরিক দিক দিয়ে তাঁদেরটা চ্যালেঞ্জটা অনেক বেশী, তার ওপর আছে এসব চ্যালেঞ্জ। তাহলে খেলেন কেন তাঁরা আসলে? ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটার সুজাউল ইসলাম বলছেন ‘আমি না খেললে অন্য কেউ হয়তো এসে খেলবে। দেশের হয়ে খেলার সুযোগটা কি ছাড়া যায়! অন্তত দেশকে একটা জায়গায় তো প্রতিনিধিত্ব করতে পারছি!’
তবে বাস্তবতা এই ‘সুযোগ’টা নিতে দেবে না সবসময়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার টানে ছুটে এসে যদি ফিরতে হয় প্রায় শুন্য হাতে, বাস্তবতা তাহলে তো ক্রিকেটকে নিয়ে দুইবার ভাবতেই বলবে এসব ক্রিকেটারদের। বিসিবির স্বীকৃতি না মিললে চ্যালেঞ্জগুলোর তালিকা লম্বাই হতে থাকবে ক্রিকেটারদের।
ক্রিকেটে বাংলাদেশের গ্রাফটা উর্ধ্বমুখী হচ্ছে, মিলছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকাও। এর মাঝেই খবর আসে মেয়েদের ৬০০ টাকার ম্যাচ ফির। মেয়েদের ক্রিকেটের অবস্থাই যখন তথৈবচ, ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেটের কথা কি আদৌ মাথায় আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের?