• " />

     

    ঘরের ছেলে, পরের ছেলে

    ঘরের ছেলে, পরের ছেলে    

    অ্যান্ডারসন কামিন্স বিখ্যাত ছিলেন একবার টেস্টের দলে না থেকে। এই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পরে খেলেছেন আরেকটি দেশের হয়ে বিশ্বকাপ। ১৯৬৬ সালের ৭ মে, বার্বাডোজে জন্মেছিলেন এই ফাস্ট বোলার।


    শিবনারাইন চন্দরপলের প্রথম টেস্ট। জর্জটাউন, গায়ানা। বিপক্ষ ইংল্যান্ড।

    প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করলেন ব্রায়ান লারা, জিমি অ্যাডামস। তবে গায়ানার দর্শকদের সবচেয়ে বড় হর্ষধ্বনিটা পেলেন শিবনারাইন চন্দরপল। প্রথম ইনিংসে তাঁর ফিফটির পর অভিনন্দন জানাতে তো মাঠেই ছুটে এলেন বেশ কিছু দর্শক! চন্দরপল যে ঘরের ছেলে!

    এই ঘরের ছেলে ব্যাপারটা ক্রিকেটে বেশ একটা আলাদা স্থান নিয়ে আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে যা একটু বেশিই প্রকট। ভিন্ন ভিন্ন দেশের ক্রিকেটাররা এক ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেন, সেই খেলাটা যদি হয় ওই ক্রিকেটারেরই দেশে, ব্যাপারটা তো আলাদা একটু হবেই। লারা, অ্যাডামসের সেঞ্চুরি ছাপিয়ে তাই গায়ানার দর্শকদের জন্য বড় হয়ে যায় চন্দরপলের ফিফটি।

     

    এমনই এক ঘরের ছেলে ও তার ঘরের গল্প এটি।

    ****
     

    দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সেবার প্রথম টেস্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ব্রিজটাউন, বার্বাডোজ। ঘরের ছেলে অ্যান্ডারসন কামিন্সের অভিষেক হয়ে যাওয়ার কথা। কিসের কী, ওয়েস্ট ইন্ডিজের নির্বাচকরা দলে নিয়ে নিলেন কেনি বেনজামিনকে। অ্যান্টিগার এই পেসারও ছিলেন কামিন্সের মতোই ডানহাতি ফাস্ট বোলার। কামিন্সকে বাদ দেয়ার ব্যাপারটা মানতে পারলেন না বার্বাডিয়ানরা। তাঁরা বয়কট করলেন সেই টেস্ট। একটা ব্যানারই তাঁদের ক্ষোভটা বুঝাতে পারে ভালভাবে, ‘নো কামিন্স, নো গোয়িং’।

     

    ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেই টেস্টটা জিতলো। বেনজামিন দুই ইনিংস মিলিয়ে নিলেন দুই উইকেট। পরের বছর পার্থে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে অভিষেক হলো কামিন্সের। তবে টেস্টে ঠিক সুবিধা করতে পারলেন না, খেললেন মোটে পাঁচটি টেস্ট। কামিন্স বরং নিজের মেধার প্রতি সুবিচার করলেন ওয়ানডেতে। ৬৩ ম্যাচে ৭৮ উইকেট, কামিন্সের চল্লিশের স্ট্রাইক রেটটা ছিল কার্টলি অ্যামব্রোস বা ম্যালকম মার্শালের চেয়েও ভাল।

     

     

    ১৯৯৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে নিজের ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে নিজের শেষ ওয়ানডেটা খেললেন কামিন্স। এর আগেই ডারহামের হয়ে কাউন্টিও খেলেছেন। খেলেছেন ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপও।

     

    কামিন্স এরপর জীবিকার সন্ধানে ছুটলেন কানাডায়। থিতু হলেন সেখানেই। সেই কানাডাতেই শুরু হলো কামিন্সের নতুন এক অধ্যায়।

     

    ****


    ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্কটা তখন প্রায় ছিন্নই হয়ে গেছে তাঁর। কানাডার এক জেলা দল থেকে ডাক পড়লো সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অলরাউন্ডারের। ডাক পেয়ে গেলেন জাতীয় দলেও! কেনিয়ার মমবাসায় স্কটল্যান্ডের সঙ্গে হয়ে গেল অভিষেকও, ২০০৭ সালের ১৮ জানুয়ারি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার প্রায় ১১ বছর আবার ফিরলেন কামিন্স, ভিন্ন দেশের হয়ে!

     

    সে বছরের বিশ্বকাপ দলেও থাকলেন। তবে থাকলেন নিজের ছায়া হয়েই। কানাডার হয়ে ১৩ ম্যাচে নিলেন ৪৮ গড়ে ১৩ উইকেট, ইকোনমিও ছাড়িয়ে গেল ছয়। ১৯৯২ বিশ্বকাপে নিয়েছিলেন ১২ উইকেট, ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে নিলেন পাঁচটি। তবে একটা রেকর্ড হয়ে গেল তাঁর। দুইটি ভিন্ন দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলেছিলেন তাঁর আগে শুধু কেপলার ওয়েসেলস। ১৯৮৩ সালে ওয়েসেলস ছিলেন অস্ট্রেলিয়া দলে, দক্ষিণ আফ্রিকার নিষেধাজ্ঞা কেটে যাওয়ার পর খেলেছেন মাতৃভূমির হয়ে। গ্রায়েম হিক ১৯৮৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিশ্বকাপ দলের স্কোয়াডে ছিলেন, তবে খেলেননি একটি ম্যাচও। যেটি তিনি পরে খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে।

     


    কামিন্স ক্যারিবীয় বিশ্বকাপে থাকলেন নিজের ছায়া হলে, তাঁর ক্রিকেটে তখন বয়সের ছাপ স্পষ্ট। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে পা দিয়ে কামিন্স বলেছিলেন, ‘যেন ঘরে ফিরলাম’।  

     

    যিনি বিখ্যাত ঘরের মাটিতে একটা টেস্টে দলে ছিলেন না বলে, সেই কামিন্সের কাছে ‘ঘর’ শব্দটা তো গুরুত্বপূর্ণ হবেই!