অপ্রতিরোধ্য রিয়াল মাদ্রিদ, অসহায় বার্সেলোনা
প্রথম সুযোগের জন্য ম্যাচের ৬৬ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো লুইস সুয়ারেজকে। সেই হেডেও মাথা ছোঁয়াতে পারলেন না ঠিকঠাক। ডাগ আউটে বার্সেলোনা কোচ এর্নেস্তো ভালভার্দে হতাশায় মুখ লুকাতে চাইছেন। ভালভার্দের মতো তার দলও তখন মাঠে অসহায়! ‘অপ্রতিরোধ্য’ রিয়াল মাদ্রিদকে আটকানোর কোনো উপায়ই যেন জানা নেই বার্সার! ওদিকে প্রথম লেগের মতো দ্বিতীয় লেগেও দাপট দেখিয়ে ম্যাচটা অনেক আগেই নিজেদের করে নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। বাকি সময়টা যেন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র! স্প্যানিশ সুপার কাপের রিয়াল-মাদ্রিদ বার্সেলোনার খেলার এই খন্ডচিত্রটাই যেন প্রতীকি হয়ে রইল পুরো ম্যাচের।
গত সপ্তাহে ইউয়েফা সুপার কাপ জয়ের পর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের উপর আধিপত্য দেখিয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপের শিরোপাটাও ঘরে নিল রিয়াল মাদ্রিদ। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে বার্সেলোনার বিপক্ষে তাদের জয়টা ২-০ ব্যবধানে। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১।
প্রথম লেগেই আসেনসিওর গোলে সুপার কাপ জয়ের কাজটা অনেকদূর এগিয়ে রেখেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ২১ বছর বয়সী তরুণ আজ ছিলেন শুরুর একাদশেই। যেখান থেকে শেষ করেছিলেন ন্যু ক্যাম্পে, ঠিক সেখান থেকেই শুরু করলেন আজ বার্নাব্যুতে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বার্সার জালে বল জড়িয়ে, মাত্র ৪ মিনিটেই ম্যাচের ভাগ্য ঠিক করে দেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। সেই গোলটাও ডিবক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের চোখ ধাঁধানো শটে বার্সার জালে বল জড়িয়ে দিয়ে। প্রথম লেগে অ্যাসেনিসিওর গোল ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন টার স্টেগান। এবার সেটাও পারলেন না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না জার্মান গোলকিপারের। এমনিতেই দুই গোলে পিছিয়ে থাকা বার্সার জন্য কাজটা ‘অসম্ভব’ করে দিয়েছিলেন তিনিই। সাথে পরের দিনের সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে নিজের নামটাও পাকা করলেন অ্যাসেনসিও!
শুরুতেই পিছিয়ে পড়া বার্সা আর ম্যাচে ফিরে আসতে পারেনি। দলের মাঝে সমন্বয়হীনতা আর রক্ষণের ভুলও ছিল চোখের পড়ার মতো। আসলে রিয়াল মাদ্রিদের আধিপত্যের কাছে আত্মসমর্পন করা ছাড়া আর কোন উপায়ও ছিল না বার্সার। রোনালদো নিষেধাজ্ঞার জন্য ছিলেন না। শুরুর একাদশে ছিলেন না ইস্কো, কাসেমিরোও! তাতে অবশ্য নিজেদের স্বভাবসুলভ খেলায় মোটেও প্রভাব পড়েনি জিদানের দলের। কোভাচিচ, মদ্রিচ, ক্রুসদের গতশীল ফুটবলের কাছে মাঝমাঠে বলের দখলে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল বার্সা। আর রিয়ালের আক্রমণ সামলাতেই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে বার্সার রক্ষণকে।
৩৩ মিনিটে লুকাস ভাসকেজের নেয়া শট বারপোস্টে বাধা পেয়ে ফেরত না আসলে ব্যবধানটা বড় হতে পারত আরও। ৩৯ মিনিটে অবশ্য ব্যবধান দ্বিগুণ করতে ভুল করেননি করিম বেঞ্জেমা। মার্সেলোর ক্রস থেকে বার্সা ডিফেন্ডার উমতিতিকে বোকা বানিয়ে বক্সের ভেতর প্রথম টাচে বল রিসিভ করেন ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার। দ্বিতীয় শটে বল পাঠান সোজা বার্সার জালে। এর আগে অবশ্য বার্সার হয়ে সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি। ডান প্রান্ত দিয়ে ডিবক্সের ভেতরে ঢুকে পড়লেও এগিয়ে আসা নাভাসের বারপোস্ট বরাবর শটই করতে পারেননি এই আর্জেন্টাইন।
বার্সার মতো মেসিও পুরো ম্যাচে সুবিধা করতে পারেননি। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য ব্যবধান কমিয়ে আনতে পারতেন তিনিই। ৫৩ মিনিটে গোলকিপার নাভাসকে বোকা বানালেও, মেসির শট আটকে যায় বারপোস্টে। এর এক মিনিট পরই বেঞ্জেমাও পেতে পারতেন নিজের দ্বিতীয় গোলের দেখা। তবে টার স্টেগানের দৃঢ়তায় আর ব্যবধান বাড়ানো হয়নি রিয়ালের। প্রথমার্ধের তুলনায় বিরতির পর কিছুটা গুছিয়ে খেলার চেষ্টা চালায় বার্সা। জর্দি আলবার ক্রসে থেকে ঠিকমতো পা ছোঁয়াতে পারলে এক গোল শোধ দিতে পারতেন সার্জি রবার্তোও।
সুয়ারেজও ম্যাচজুড়ে ছিলেন অনুজ্জ্বল। বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক শট করেছিলেন মেসি। তবে নাভাসকে হারাতে পারেননি। ফিরতি বলে সুয়ারেজের কাছেও ছিল গোলের সুযোগ। তার নেয়া শট বারপোস্টেই আঘাত হানতে পেরেছিল কেবল। বার্সার হাতে গোণা কয়েকটি আক্রমণের সময়ও ম্যাচের আধিপত্য ছিল রিয়ালের হাতেই। একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে শেষ পর্যন্ত মাত্র দুই গোলের জয়ে আফসোস করতে পারেন অনেক রিয়াল সমর্থকই! বেঞ্জেমা, অ্যাসেনসিওরাও বাড়িয়ে নিতে পারতেন নিজেদের গোলের সংখ্যা! কিন্তু তাতে মৌসুম শুরুর এই ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে পাওয়া অনুপ্রেরণায় ঘাটতি পড়ার কথা নয়!