মুস্তাফিজ-মিরাজে বাংলাদেশের দিন
তৃতীয় দিন, চা বিরতি
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস ১১৮ ওভারে ৩৭৭ (ওয়ার্নার ১২৩, হ্যান্ডসকম্ব ৮২; মুস্তাফিজ ৩/৮৪, মিরাজ ৩/৯৩)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৩০৫
চারটি ক্যাচ মিস করেছে বাংলাদেশ, মিস হয়েছে একটা স্টাম্পিং। তারপরও চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে মুশফিকদের মুখেই এখন চওড়া হাসি। তৃতীয় দিনে যে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ, আট উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে আটকে রেখেছে ৩৭৭ রানে। অস্ট্রেলিয়ার ৭৮ রানের মধ্যেই পড়েছে শেষ ছয় উইকেট। তৃতীয় দিন শেষে স্মিথদের লিড হয়েছে ৭২ রানের, বাংলাদেশ চাইবে চতুর্থ দিন সকালে যত দ্রুত সম্ভব অলআউট করতে।
কাল ৫২ ও ৭৩ রানে দুইবার জীবন পেয়েছিলেন ওয়ার্নার। শেষ পর্যন্ত থেমেছেন ১২৩ রানে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও ১০ রানে একবার জীবন দিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত আউট হয়েছেন ৩৮ রানে। সবচেয়ে কম মূল্য দিতে হয়েছে অ্যাশটন অ্যাগারের জন্য। সাকিব আল হাসানের বলে সৌম্য সরকার যে ক্যাচ ছেড়েছেন, তার চেয়ে সহজ সুযোগ বোধ হয় স্লিপ ফিল্ডারদের জন্য পাওয়া কঠিন। সৌম্য সেটি ছেড়ে দেওয়ার চার বল পরেই সাকিবের আঘাত। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে বেশ খানিকটা টার্ন করে বলটা ভেঙে দিল অ্যাগারের লেগ স্টাম্প, ২১ রানের সঙ্গে এক রান যোগ করেই আউট হলেন অ্যাগার। তৃতীয় দিনে সেটিই হয়ে থাকল বাংলাদেশের শেষ সাফল্য।
তার আগেই অবশ্য শেষ সেশনে আরও চার উইকেট পেয়েছে বাংলাদেশ। চা বিরতির পর দশ ওভার নির্বিবাদেই কাটিয়ে দিয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল-ওয়েড। কিন্তু দুজনের জুটিতে ২১ রান যোগ করার পরেই মুস্তাফিজের বলে এলবিডব্লু হয়ে গেলেন অয়েড, আগের টেস্টের মতো পরিষ্কার একটা আউটকে চ্যালেঞ্জ করে একটা রিভিউ নষ্টও করলেন। ব্যাটে দুঃসময়টা একদমই কাটছে না অস্ট্রেলিয়া উইকেটকিপারের, এই টেস্টের পর সেই চাপ আরও বাড়ল।
তবে বাংলাদেশকে শেষ সেশনের সবচেয়ে বড় উপহারটি এরপর এনে দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। জীবন পেয়ে আরও ২৬ রান যোগ করে ফেলেছিলেন ম্যাক্সওয়েল। স্বভাবসুলভ আগ্রাসন ঝেড়ে ফেলে একটু বেশিই সতর্ক ছিলেন, ওই ৩৮ রানের জন্য খেলতে হয়েছে ৯৮ বল। মিরাজের বল প্যাডে লেগে ওপরে ওঠার পর লাফিয়ে সেটা গ্লাভসে জমালেন মুশফিক। আম্পায়ার নিশ্চিত হতে চাইলেন, বলটা মাটিতে লেগেছে কি না। ম্যাক্সওয়েল রিভিউর ইঙ্গিত করেছিলেন, কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখে গেল বল ব্যাট-প্যাড হয়েই ক্যাচ হয়েছে। বাংলাদেশ পেল চা বিরতির পর দ্বিতীয় সাফল্য।
প্যাট কামিন্স হতে পারতেন বড় হুমকি। প্রথম টেস্টে মিরাজের বলে দুই ছয়েই আশা জাগিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার জন্য। এবার সেই মিরাজের বলটা ছেড়ে দিতে গিয়েই বাঁধল বিপত্তি। আম্পায়ার নাইজেল লং প্রথমে আউট দেননি, কিন্তু রিভিউতে পরিবর্তন করতে হয়েছে তাঁর সিদ্ধান্তের।
অথচ দ্বিতীয় দিনের বিকেলটা হাপিত্যেশ করেই কাটাতে হয়েছিল বোলারদের। বৃষ্টিতে সকালের সেশনটা ধুয়ে যাওয়ার পর দুপুরের সেশনটা বাংলাদেশের জন্য উষর মরুতে জল খুঁজে পাওয়ার মতোই হয়ে এলো। ৯৬ রান দিয়ে এই সেশনে অস্ট্রেলিয়ার তিন উইকেট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ, ম্যাক্সওয়েলের সহজ ক্যাচটা মিরাজ ফেলে না দিলে সেশনটা স্বপ্নের মতোই হতে পারত।
ক্যাচ অবশ্য মিস হয়েছে আরও। হিলটন কার্টরাইটের সজোরে ড্রাইভ করা বলটা অবশ্য ক্যাচ কি না, সেটা নিয়ে তর্ক হতে পারে। নিজের বলে ধরতে গিয়ে যে নিজেই পাঁজরে চোট পেয়েছেন মিরাজ, সেজন্য খেলাও বন্ধ রাখতে হয়েছে মিনিট পাঁচেকের বেশি। তবে সেজন্য আফসোস করতে হয়নি, জীবন পাওয়ার পর মাত্র আট রান যোগ করতে পেরেছেন কার্টরাইট, আউট হয়েছেন সেই মিরাজের বলেই স্লিপে সহজ ক্যাচ দিয়ে। সেশনের শেষটাও হয়েছে সেই বলের সঙ্গে সঙ্গে।
তবে তার আগে হয়ে গেছে অনেক কিছুই। ডেভিড ওয়ার্নার ও পিটার হ্যান্ডসকম্ব আগের দিন সারা বিকেল হতাশ করে গেছেন সাকিবদের। আজ সকালেও দুজন এগিয়ে যাচ্ছিলেন তরতর করে। কিন্তু ওয়ার্নার ৯৯ রানে পৌঁছানোর পরেই হলো অঘটন। ৯৯ রানে প্রায় ১২ বল আটকে থাকলেন ওয়ার্নার। সেই অস্থিরতা থেকেই হয়তো গেরো কাটানোর জন্য নাসিরের বলে সিঙ্গেল নিতে বেরিয়ে এলেন হ্যান্ডসকম্ব। কিন্তু ওয়ার্নার যখন তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছেন, একটু দেরিই হয়ে গেছে। ঝাঁপ দিয়েও হ্যান্ডসকম্ব যখন ক্রিজে ঢুকলেন, সাকিবের থ্রো ভেঙে দিয়েছে স্টাম্প। ৮২ রানেই ফিরতে হলো হ্যান্ডসকম্বকে।
ওয়ার্নার অবশ্য সেঞ্চুরি পেয়ে গেছেন একটু পরেই। এশিয়ায় টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পেয়েছেন ওয়ার্নার, ক্যারিয়ারেই যা তাঁর মন্থরতম। এর মধ্যেই অবশ্য ম্যাক্সওয়েল ১২ রানে থার্ড স্লিপে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন মুস্তাফিজের বলে, কিন্তু মিরাজ তা রাখতে পারেননি।
তবে একটু পরেই মুস্তাফিজ জন্মদিনে আনন্দের প্রথম উপলক্ষ পেয়েছেন। শরীর বরাবর শর্ট বলটা লেগে হুক করার চেষ্টা করেছিলেন ওয়ার্নার। কিন্তু লেগ স্লিপে তিন বারের চেষ্টায় সেটা হাতে জমিয়েছেন ইমরুল। ১২৩ রানেই ফিরে গেছেন ওয়ার্নার, সম্ভবত খেলেছেন ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসও।
সেটা অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ বাঁচানোর জন্য যথেষ্ট কি না, জানা যাবে কাল-পরশুই।