• বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ ২০১৫
  • " />

     

    ২২ গজের সেলুলয়েড : জুবাইরকে নিয়ে হাহাকার ও অন্যান্য

    ২২ গজের সেলুলয়েড : জুবাইরকে নিয়ে হাহাকার ও অন্যান্য    

    ছবির পরে ছবি চলে নাকি তৈরী হয় সিনেমা। ক্রিকেট ম্যাচও তো তাই। টুকরো টুকরো অসংখ্য ছবি জন্ম নেয় যেখানে। ২২ গজ আর সবুজ ওই উদ্যানের ছবিগুলোকে যদি ধরা যেত সেলুলয়েডে!

    ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে শতভাগ সাফল্যের পর বাংলাদেশ নেমেছে নতুন ইতিহাস তৈরির লক্ষ্যে। খুলনা টেস্টের প্রথম দিনের কিছু ছবি-

     

     

    জুবাইর....,কই!

    বাংলাদেশের শেষ টেস্টেও ইনিংসে পাঁচ উইকেট আছে তাঁর। ম্যাচে সাত উইকেট! অথচ জুবাইর হোসেনকেই এই ম্যাচে বসে থাকতে হচ্ছে! যুক্তি? কে দেবে!
    শেষ টেস্টে ইমরুলের সেঞ্চুরি তাঁকে দলের বাইরে রাখতে দেয় না। অথচ জুবাইরের পাঁচ উইকেটের মূল্য নেই! শুভাগত হোম কোন ‘রোল’ এ খেলছেন? সৌম্য সরকার খেললে শুভাগত এর জায়গায় খেলার কথা, মাঝে দিয়ে ‘বলির পাঁঠা’ হয়ে গেলেন জুবাইর!

    জুবাইর নিজেকে দুর্ভাগা ছাড়া আর কিই বা ভাববেন! প্রথম দিনেই বাবর ও ইয়াসির শাহের বোলিং আক্ষেপই শুধ বাড়াতে পারে!

    পারেনও বটে, বাংলাদেশের নির্বাচক কমিটি!

     

     

    পোশাকের রং আর বল

    টেস্ট মানেই তো সাদা পোশাক! তবে সাদারও রকমফের আছে। যেমন ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার জার্সির মধ্যে পার্থক্য আছে। অস্ট্রেলিয়ার পোশাক ঘিয়াটে, ইংল্যান্ডের শুভ্র সাদা। বাংলাদেশ এতদিন বেশীরভাগ সময়ে ব্যবহার করেছে ওই ঘিয়াটে পোশাকই। তবে এই সিরিজে তা হয়ে গেছে শুভ্র-সাদা!

    জিম্বাবুয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ খেলেছিল এসজি বল দিয়ে, এই সিরিজ দিয়ে আবার ফিরেছে কুকাবুরায়!

     

     

    শম্বুকগতির আক্রমণ!

    টসে জিতে ব্যাটিং নিতে ভুল করেননি করেননি মুশফিকুর রহিম। তবে দুই ওপেনার খেলেছেন একটু বেশিই দেখে-শুনে। রানরেট প্রথম দুইয়ের কোটা পেরিয়েছে ৩০তম ওভারে এসে! ৫৩৯টি বলের মধ্যে ৪৮৯টিই ডট। মানে প্রায় ৬৯.১০ শতাংশ বলই ডট দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। শেষ দশ ওভারে সাকিব-মুমিনুল জুটিতে অবশ্য উঠেছে ৩.৯ হারে ৩৯ রান।

     

     

    এ শুধু মিসের দিন

    তৃতীয় ওভারেই ইমরুল কায়েসের বিপক্ষে রিভিউ। বিফলে গেল। ১৮তম ওভারের প্রথম বলে জুলফিকার বাবরের বলে ইয়াসির শাহ ক্যাচ নিতে পারলেন না। আবার বাঁচলেন ইমরুল। ২০তম ওভারের তৃতীয় বলে তামিম বাঁচলেন, ব্যাকওয়ার্ড শর্ট লেগে ক্যাচ ফেললেন মোহাম্মদ হাফিজ। ওই বাবরের বলেই। ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে এবার নিজেই নিজের বলে ক্যাচ ফেললেন বাবর। জীবন পেলেন মুমিনুল। ৪৮ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মাহমুদুল্লাহর এজ চলে গেল প্রথম ও দ্বিতীয় স্লিপের মাঝখান দিয়ে, দাঁড়িয়ে রইলেন হাফিজ ও ইউনুস খান দুজনই! ৭৫তম ওভারের প্রথম বলে মুমিনুলের ক্যাচের আবেদন নাকচ করলেন আম্পায়ার রবার্ট মার্টিনেজ। ফিল্ডার আজহার আলী তো উদযাপনও শুরু করে দিলেন। তবে রিপ্লে দেখাল পরিস্কার ‘ডে লাইট’, ব্যাট ও বলের মাঝখানে। আসলে মুমিনুলের ব্যাট লেগেছিল ক্রিজে, সেই শব্দেই বিভ্রান্ত হয়েছিলেন আজহার!

    সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের ব্যাটিং কার্ডটা বিবর্ণ হতো! পাকিস্তানী বোলাররাও তাঁদের ভাল বোলিংয়ের পুরস্কারটা পেতেন বেশী করে!

     

     

    ওরে কত ব্যাটসম্যান!

    পাঁচজন ব্যাটসম্যান, একজন উইকেটকিপার, একজন অলরাউন্ডার, চারজন বোলার। টেস্টের চিরায়ত ‘কম্বিনেশন’। এখন উইকেটকিপাররাও যথেষ্ট ভাল ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের তো সেরা ব্যাটসম্যানদেরই একজন মুশফিক। আবার আছেন সাকিবের মত অলরাউন্ডার। যিনি ওপরের দিকে ব্যাট করতে পারেন। অথচ সেই বাংলাদেশই কিনা খেলছে আটজন ব্যাটসম্যান নিয়ে! রুবেল হোসেন, মোহাম্মদ শহীদ, তাইজুল ইসলাম শুধু স্পেশালিস্ট বোলার! শুভাগত হোম ও সৌম্য সরকার, দুজনের আসল ‘রোল’টা তাহলে কী! কে ব্যাটসম্যান, কে অলরাউন্ডার? নাকি কেউ আবার বোলার!

    এই টেস্টের ফলাফল অনুকূলে থাকুক বা প্রতিকূলে, ভবিষ্যতেও কিন্তু এমন প্রশ্ন থেকেই যাবে।

     

     

    পকেট ডায়নামোর হতাশা

     

    টান দশ টেস্টে কমপক্ষে ফিফটি করলেন মুমিনুল হক। ১৩ টেস্টের ক্যারিয়ারে শুধু একবারই পারেননি ফিফটি করতে। তবে শেষ পর্যন্ত হতাশাতেই ডুবলেন মুমিনুল। দিনের এক বল বাকি থাকতে জুলফিকার বাবরের বলে পরাস্ত হলেন, ফ্লাইট ও টার্নে। রিভিউ নিয়েছিলেন, বিফলে গিয়েছে তা। পকেট ডায়নামোও থেমেছেন নিজের পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরি থেকে ২০ রান দূরত্বেই!

     

     

    অভিষেক

    বাংলাদেশের শেষ টেস্ট থেকে বাদ পড়েছেন শফিউল ইসলাম। তাঁর জায়গায় অভিষেক হয়েছে পেসার মোহাম্মদ শহীদের। শেষ পেসার হিসেবে অভিষেক হয়েছিল আল-আমিন হোসেনের। ২০১৩ সালের অক্টোবরে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। অভিষেক হয়েছে সৌম্য সরকারেরও। তাঁরা বাংলাদেশের ৭৫ ও ৭৬ তম টেস্ট ক্রিকেটার।

    ২০১৫ সালে বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট অভিষেকের সূচনা করলেন তাঁরাই। ২০০০ সালে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট বাদ দিলে সবচেয়ে বেশী অভিষেক হয়েছিল ২০০২ সালে, দশজনের। আর ২০০৬ সালে টেস্ট ক্যাপ পরেছিলেন শুধুমাত্র আব্দুর রাজ্জাক।

    ২০১৫-তে কি আরও অভিষেক দেখবে বাংলাদেশ?

    এই টেস্ট দিয়ে পাকিস্তানের ২২০ নম্বর টেস্ট খেলায়াড় হয়েছেন সামি আসলাম।

     

     

    ইতি... আজমল?

    বোলিং অ্যাকশনের কারণে নিষিদ্ধ হওয়ার আগের আজমলের ছিটেফোটাও দেখেনি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি। আজমল কি অপেক্ষা করেছিলেন টেস্টের জন্য! করলেসে আশায় গুড়ে বালি। পাকিস্তান যে নেমেছে তাঁকে ছাড়াই!

    সাঈদ আজমল তাঁর ক্যারিয়ারের শেষও কি দেখে ফেলবেন সহসাই!