• বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ ২০১৫
  • " />

     

    টসের সিদ্ধান্ত ঠিকই আছে!

    টসের সিদ্ধান্ত ঠিকই আছে!    

     

    ডব্লু জি গ্রেসের সেই বহুল চর্চিত কথাটি আবার মনে করিয়ে দেই। "টস জিতলে ব্যাটিং নাও । তোমার মনে যদি কোন সন্দেহ থাকে তাহলে আরেকবার ভাবো। তারপর ব্যাটিং নাও। যদি তারপরেও কোন সন্দেহ থাকে তাহলে সতীর্থদের সাথে আলোচনা করো। তারপরও ব্যাটিংই নাও।“
     

     

     

    আজ মাত্রই টেস্টের প্রথম দিন ছিল। প্রথম দিনেই বেশি কথা বলাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। টেস্ট ম্যাচ সেশনের খেলা। এক সেশনেই খেলার রঙ বদল হতে পারে। গ্রেসের শিক্ষা না মানবার কোন ভুতূড়ে প্রভাবও থাকতে পারে। দিনটাই যে ছিল আমাদের জন্য দুর্ভাগা। আমরা আজ মুশফিকের টস জিতে বোলিং নেয়া নিয়ে তাকে মুণ্ডুপাত করছি। কিন্তু টস শেষে মিসবাহ কিন্তু বলেছিলেন, টস জিতলে তারাও বোলিং নিতেন। আজহার আলী দিন শেষে ১২৭ রানে অপরাজিত। অথচ আজহার যখন ১৮ রানে অপরাজিত তখন শহীদের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েও নোবলের কারণে বেঁচে গেলেন তিনি। লাঞ্চের আগের ঠিক দুই ওভারে সিলি মিড অফ, অন এ টানা দুইটি ক্যাচ ফেললেন মমিনুল।

     

     

     

    একবার চিন্তা করে দেখেন, এই তিনটা সুযোগের দুইটা কাজে লাগাতে পারলেও প্রথম সেশন শেষে পাকিস্তানের ৪ উইকেট পড়ে যায়। তখন কি আমরাই মুশফিকের সিদ্ধান্তের সমর্থন করে ওকে বাহবা দিতাম না? আমার ধারণা, এই সুযোগগুলো সহ পরবর্তীতে সৌম্যের নোবলে ইউনুসের ক্যাচ আউটের সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলে আজকের দিনের মধ্যেই পাকিস্তানকে অল আউট ক্করা যেতো। যদি তা নাও হতো অন্তত তাদের টেল এন্ডারদের নিয়ে আগামীকাল শুরু করা যেতোই।

     

     

     

    সারাদিনের খেলা নিয়ে কথা বলি। প্রথম সেশনে বাংলাদেশের বোলিং খুবই ভালো ছিল। ২টা উইকেট তো ফেলে দেয়া গেছেই, সাথে সুযোগগুলোর কথা তো আগেই বলা হলো। প্রথম সেশনে যখন শহীদ-সৌম্য বোলিং করছিলো তখনও বাংলাদেশ ৪টা স্লিপ একটা গালি নিয়ে বোলিং করছিলো। এবং ব্যাটসম্যানেরা নিয়মিতই সমস্যায় পড়ছিলো। এই বোলিংকে আপনি কিভাবে দোষ দেবেন? শাহাদাত কয়েকটা ওভার বল করতে পারলে হয়তো কিছু ব্রেক থ্রু আসতেও পারতো। ২০১০ সালের যে টেস্টের আগে শেহওয়াগ বলেছিলেন, “বাংলাদেশের ২০ উইকেট নেবার সামর্থ্য নেই”; সেই টেস্টেই বাংলাদেশ টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নিয়েছিলো। ভারতের তৎকালীন বিশ্বসেরা ব্যাটিং প্রথমে ব্যাট করে গুটিয়ে গিয়েছিলো ২৪৩ রানে। শাহাদাত আর সাকিবের ছিল ৫টি করে উইকেট! পিচটা এমনই ছিল। শহীদ যেরকম ভালো বোলিং করেছিলো তার সাথে আজ শাহাদাত খেললে সেটার পুনরাবৃত্তি ঘটতো না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? দ্বিতীয় সেশনেও ইউনিসের উইকেটটি পাইনি নো বলের জন্যে। অবশ্য এই সেশনে দুইজন সেট ব্যাটসম্যান খুব ভালো ব্যাটিংও করেছে। দুই সেট ব্যাটসম্যানকে রেখে নতুন বল নেবার পরে ইউনিস কিন্তু গালিতে ক্যাচ দিয়েই আউট হয়েছে। অর্থাৎ ১৫০ এর কাছাকাছি থাকা ব্যাটসম্যানের জন্য মুশফিক স্লিপ-গালির ছাতা সাজাতে ভয় পায়নি। প্রথম দিনে ফিল্ড প্লেসিংয়ে রক্ষণাত্মক মুশফিকের এই আশ্চর্যরকম বদলই আমার কাছে বড় বিজ্ঞাপন।

     

    এবারে আসি আরেক দুর্ভাগ্য প্রসঙ্গে। আমার ধারণা, টিম ম্যানেজম্যান্টের উপর মুশফিকের তেমন কোন হাত নেই। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ২-৩বারের উপর সে বলেছে অতিরিক্ত একজন বোলার নেবার কথা। অথচ ম্যাচ খেলতে নেমে যেই লাউ সেই কদু। আট ব্যাটসম্যান নিয়ে টেস্ট খেলতে নামা। হ্যা ঠিক এই পয়েন্টে টস জিতে বোলিং নেবার সমালোচনা করা যায়। সর্বশেষ জিম্বাবুয়ে সিরিজেও শাহাদাত টেস্টে দলের পেস আক্রমণের নেতা ছিল। রুবেল ওয়ানডেতে মারাত্মক ভালো বোলিং করছে সত্যি। কিন্তু টেস্টে ওর বোলিং এভারেজ কিন্তু ইতিহাসেরই নিকৃষ্টতমদের মধ্যে একটি। বোলিং গড় ৭৫.৯০!  আবুল হাসানের গড় ১২৫ এর কাছাকাছি। ব্যাটিং না, বোলিং! ও ১৪ জনের দলে সুযোগ পাবার পরে সবার মুখেই হাসান সেঞ্চুরি কোটায় দলে সুযোগ পেয়েছে এমন বক্তব্য শুনেছি। সেই তারাই আবার কাল শাহাদাত কেন দলে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। ভালো কথা তাহলে কে খেলবে? তাসকিন, মাশরাফিরা কেউই টেস্টের জন্য উপযুক্ত না। অনেকে বলছেন শাহাদাতের মতো ২ বল করবার জন্য হলে তো মাশরাফি বেটার ছিল। মাশরাফি শেষ টেস্ট খেলেছে ২০০৯ সালে। টানা পাঁচদিন মাঠে দৌড়ানোর মতো ফিটনেস মাশরাফির আছে? এখনই যেই অবস্থা তাতেই মধ্য চল্লিশে মাশরাফির পঙ্গু হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে (আল্লাহ না করুক)। নতুন কাউকে নামাবেন? শহীদ নিজেই নতুন। টেস্টে দুইজন অনভিজ্ঞ পেসার কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?

     

     

    অপশন একটাই দেখি আল আমিন। এই আল আমিন একটা বড় রহস্যের নাম। সবগুলো মিডিয়া, টিম ম্যানেজম্যান্ট একে নিয়ে একদম চুপ! কোন অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিক আছেন যিনি এই আল আমিন রহস্য নিয়ে কয়েকটা লাইন ব্যয় করতে পারেন? আমি সবগুলো অপশন বিবেচনা করে শেষ টেস্টের রেকর্ড আর অভিজ্ঞতা বিচারে শাহাদাত-শহীদকেই শ্রেষ্ঠ অপশন হিসেবে দেখি। এখন শাহাদাতের ইনজুরির ব্যাপারটা তো টিম ম্যানেজমেন্ট আগে জানতো না। সেটা নিছকই দূর্ভাগ্য। কথা একটাই হতে পারে সৌম্যের বদলে লিখনকে নেয়া যেতো। হ্যা, সৌম্যের বদলেই। কারণ শুভাগতের ফার্স্ট ক্লাস রেকর্ড এই দলে অন্য সবার চেয়ে ভালো। তখন দলে একজন অফ স্পিনার, একজন লেগ স্পিনার, বাঁহাতি স্পিনার, পেসার! অনেকগুলো ভ্যারিয়েশন পাওয়া যেতো। টেস্ট ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের জন্য বড় পরীক্ষা। এখানে যতটা অননুমিতভাবে ব্যাটসম্যানদের জন্য ভ্যারিয়েশনের পরীক্ষা নেয়া যায় ততই মঙ্গল। কিন্তু যা হবার তা হয়েই গেছে। এখন এটা নিয়ে আফসোস না করি।

     

    আমি বলব টিম ম্যানেজমেন্টের টস জিতে বোলিং নেবার সিদ্ধান্ত ততটা খারাপ হতো না যদি না নো বল, ক্যাচের সিদ্ধান্তগুলো আর শাহাদাতের ইনজুরি আমাদের বিপক্ষে যেতো। টস জেতার পর থেকেই টেস্টটা শুরু হয়েছে আমাদের জন্য চরমতম দুর্ভাগ্য দিয়ে। দল নির্বাচনও প্রায় ঠিক ছিলো। লিখনকে খেলালেই হয়তো এতোটা সমালোচনা হতো না। টস জিতে বোলিং এবার ভয় আমি একটাই দেখি সেটা হলো, চতুর্থ ইনিংসে আমাদের ব্যাটিং করতে হবে, যদি ফলো অনে না পড়ি! এই পিচে চতুর্থ-পঞ্চম দিনে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং অনেকটাই ভয়ংকর হয়ে দাঁড়াবে। উইকেটগুলো ফেলতে পারলে হয়তো এতোটা আফসোস করতে হতো না!

     

    প্রথম টেস্ট সম্পর্কে কিছু তেতো কথা বলি। এখন পর্যন্ত পাকিস্তানী ব্যাটিংয়ের যা অবস্থা তার সাথে প্রথম টেস্টের খুব একটা পার্থক্য নেই। তামিম-ইমরুলের রূপকথার জুটি আমাদের সব ভুলিয়ে দিয়েছে। তবে সত্যিটা হচ্ছে, প্রথম টেস্টেও আমাদের বোলিং এরকমই ছিল। আমরা প্রথম ইনিংস শেষে প্রায় ৩০০ রানে পিছিয়ে ছিলাম। দুইদিনের ব্যাটিং দেখে আমরা সব ভুলে গিয়েছিলাম। তখন ব্যাটিং নিয়ে স্তুতিবাক্যর সাথে বোলিংটা যে ঠিক করা দরকার এমন কথাবার্তারও প্রয়োজন ছিল। সেটা তখনও হয়নি! তবে আমি আশা ছাড়তে রাজি না। আগেই বলেছি টেস্ট ম্যাচ সেশনের খেলা। হঠাৎ করেই এক সেশনে তাইজুল-সাকিবের ম্যাজিকে পাকিস্তান কাল প্রথম সেশনের মধ্যেও অল আউট হয়ে যেতে পারে। এই মুহূর্তে ইন-শা-আল্লাহ বলে সেটাই একমাত্র চাওয়া।

     

    শেষমেষ সাকিবের নাম চলেই এলো। ব্যক্তিগত একটা পর্যবেক্ষণের কথা বলি। আমার মতে সাকিব ক্রিকেটার হিসেবে চরম উন্নতি করেছিলো ২০০৯-১০ সালের দিকে কাউন্টিতে এক সিজন খেলে। পৃথিবীর যত বড় খেলোয়ারের নাম শুনবেন সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন যে, তারা খেলার চাপ, দক্ষতা এগুলো শিখেছেন ইংলিশ কাউন্টি আর অস্ট্রেলিয়ান শেফিল্ড শিল্ডে খেলে। সাকিবের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিলো। সমস্যা হচ্ছে, ওই এক-দুই সিজনের পরে সাকিবকে সেভাবে ঘরোয়া ফার্স্ট ক্লাস খেলতে দেখা যায়নি। বিশ্বজুড়ে টি-টুয়েন্টির ঝমঝমানির মধ্যে সাকিবও সুযোগ পেয়েছে। এটা সাকিবের দোষ না। সাকিবের যোগ্যতা আছে বলেই সুযোগ পেয়েছে। লংগার ভার্শনের ম্যাচ খেলার জন্য সাকিবকে বোধহয় একটা সিজন কাউন্টিতে আবার খেলানো উচিত। তবে আমি সাকিবের বোলিংয়ে পুরোপুরি হতাশ না। আজ বেশ কয়েকবার মনে হয়েছে সাকিবের টেস্ট বোলিংয়ের ধার ফিরে আসছে! সে চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। বহু পরীক্ষিত। সে খুব ভালোভাবেই চেনা রূপে ফিরে এসে সকাল-দুপুরের মধ্যেই পাক ব্যাটিং ধসিয়ে দিবে, এখন এটাই প্রার্থনা।