• বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ ২০১৫
  • " />

     

    বাংলাদেশের 'অলরাউন্ড' ব্যর্থতার এক দিন

    বাংলাদেশের 'অলরাউন্ড' ব্যর্থতার এক দিন    

    খুলনা টেস্ট, দ্বিতীয় দিন

     

    সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৩৩২/১০ (মমিনুল ৮০, ইমরুল ৫১; ওয়াহাব ৩/৫৫, ইয়াসির ৩/৮৬); পাকিস্তান ১ম ইনিংস ২২৭/১ (মোহাম্মদ হাফিজ ১৩৭*, আজহার আলী ৬৫*; তাইজুল ১/৪৩)


     

     

    আট ব্যাটসম্যানের ‘রক্ষণাত্মক’ টেস্ট একাদশ নিয়ে সমালোচনা উঠেছে প্রথমদিনই। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে এসে ‘রক্ষণাত্মক’ পুঁজিটুকুও গড়তে ব্যর্থ বাংলাদেশ দল! সমালোচকরা চাইলে তাই গতকালের প্রশ্নটির সামনে আরও একটি নতুন প্রশ্নবোধক এঁকে দিতে পারেন! আগের দিনের ৪ উইকেটে ২৩৬ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনে আরও ৯৬ রান যোগ করতেই খরচের খাতায় বাকি ৬ উইকেট। অতঃপর বোলিংয়ে নেমে একাধিক ক্যাচ মিস আর ঘনঘন বোলার পরিবর্তন, একাদশের আট বোলারের সবাইকেই ব্যবহার করেও প্রত্যাশিত সাফল্য না পাওয়া...আরও একবার দল সাজানোকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবেন নাকি দলে যারা আছেন তাঁদের ব্যর্থতাঁকে দায়ী করবেন সেটা তর্কসাপেক্ষ। তবে খুলনায় দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশ দল যে অনেক প্রশ্নের দুয়ার খুলে দিল এ বিষয়ে তর্কে যাওয়ার বোধহয় কোন সুযোগ নেই। আরো একটি বিষয়েও সম্ভবত একমত হতে দ্বিধা নেই, চলতি বাংলাদেশ সফরে প্রথমবারের মতো মাঠে একটি ভালো দিন কাটালো পাকিস্তান!

     

     

    দিনের শুরুতেই জুলফিকার বাবরের বলে লেগ স্লিপে আনাড়ি ক্যাচ তুলে ফিরে যান সাকিব আল হাসান (২৫)। মুশফিক-সৌম্য জুটিতে বড় সংগ্রহের সম্ভাবনা যখন সবে দেখা দিতে শুরু করলো তখনই পূর্বসূরিদের পথে হাঁটলেন সৌম্য। ৩৩ রান করে তখন তিনি উইকেটে থিতু হচ্ছেন কেবল। তবে যেভাবে ডাউন দ্য উইকেটে হাফিজকে মারতে গিয়ে ‘মিস’ শটে কাভারে ক্যাচ তুললেন তাতে মোটেও মনে হয় নি লম্বা সময় উইকেটে থাকার প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছিলেন। অভিষিক্ত সৌম্যর না হয় অমন ভুল মানায়। কিন্তু মুশফিক? দলীয় অধিনায়ক সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানটি পরের ওভারেই সৌম্যর পিছু নিলেন! ইয়াসির শাহর বলে কাভারে ক্যাচ তোলার আগে পর্যন্ত তিনিও ৩২ রান নিয়ে ‘সেট’ ব্যাটসম্যান।

     

    নিজের নির্বুদ্ধিতায় নিজেই হতাশ মুশফিক

     

     

    মধ্যাহ্ন ভোজনের বিরতির আগে-পরে বাকি উইকেটগুলো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা একপ্রকার বিলিয়েই দিয়ে এলেন। বাংলাদেশ গুটিয়ে গেলো ৩৩২ রানে। শেষপর্যন্ত ১২ রান নিয়ে অপরাজিত শুভাগত হোম ব্যাট হাতে অবদান রাখার সুযোগটাই পেলেন না। পাকিস্তানের পক্ষে ওয়াহাব রিয়াজ ও ইয়াসির শাহ ৩টি করে উইকেট নেন। হাফিজ ও বাবর নেন ২টি করে।

     

    প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের অন্যতম সফল বোলার ইয়াসির শাহ

     

    জবাবে প্রথম ইনিংসের ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা। রানের গতিরোধ করতে চতুর্থ ওভারে পেসার মোহাম্মদ শহীদকে সরিয়ে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলকে আক্রমণে আনা হয়। ব্যক্তিগত পঞ্চম ওভারে দলকে সাফল্যও এনে দেন তাইজুল। উদ্বোধনী জুটিতে পঞ্চাশ রান যোগ করে ফিরে যান ডেব্যুন্যান্ট সামি আসলাম। লেগ দিয়ে বের হয়ে যাওয়া বল সামির গ্লাভস ছুঁয়ে মুশফিকের গ্লাভসে জমা হয়। আজকের দিনে বাংলাদেশের একমাত্র সাফল্য ওটাই।

     

    দিনের একমাত্র সাফল্য উদযাপন করছে বাংলাদেশ

     

    তবে আরও দু’বার সুযোগ এসেছিল সাফল্যের। দু’বারই শিকারের নাম আজহার আলী, হাতছাড়া করেন মুশফিক। দ্বিতীয়বারে অবশ্য ঝাঁপিয়ে পড়েও বল ধরে রাখতে পারেন নি তিনি, উল্টো আঙ্গুলে চোট নিয়ে মাঠ ছেড়েই চলে যান।

     

     

    দিনের বাকি সময়টা উইকেট আর মাঠে রাজত্ব কায়েম করে গেলেন মোহাম্মদ হাফিজ ও আজহার আলী। বাংলাদেশের পেস-স্পিন কোন আক্রমণেই পরাস্ত হন নি দু'জন। পরাস্ত করার মতো বল বাংলাদেশের বোলাররা করতে পেরেছেন কিনা সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ।

     

     

     

    বোলারদের মধ্যে মোটামুটি সফল তাইজুল ইসলাম। ১৬ ওভারে ২.৬৮ গড়ে ৪৩ রানের বিনিময়ে পেয়েছেন ১টি উইকেট।  তাইজুলের ২ মেডেন ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে আর কেউ মেডেনও পান নি আজ। একাধিক ওভার বল করেছেন এমন প্রত্যেকেই (তাইজুল ছাড়া) ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন গড়ে চারের ওপর।

     

     

    বাংলাদেশী বোলারদের এমন ব্যর্থতার দিনে হাফিজ তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট শতক আর আজহার উনিশতম অর্ধশতক। দিনশেষে দু’জনই অপরাজিত থেকে যান, হাফিজ ১৩৭ আর আজহার ৬৫ রানে।

     

    ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট শতকের পর হাফিজ

     

    তৃতীয় দিনে পাকিস্তান প্রথম ইনিংসের খেলা পুনরায় শুরু করবে ১ উইকেটে ২২৭ রান নিয়ে।