• " />

     

    'কেউ থাকতে না চাইলে জোর করার প্রশ্নই আসে না'

    'কেউ থাকতে না চাইলে জোর করার প্রশ্নই আসে না'    

    মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নিজের পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। শ্রীলঙ্কার নতুন কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছে, শোনা যাচ্ছে এমনও। এ ব্যাপারেই বিস্তারিত কথা বলেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন...


    হাথুরুসিংহের পাওয়া চিঠি...

    আমার যতদূর মনে পড়ে, ও একটা চিঠি দিয়েছে আমার কাছে। ওটা ছিল অক্টোবরের প্রথম দিকে। সম্ভবত দ্বিতীয় টেস্টের পরে (দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে) বা ওই সময়টায়। একদম নিশ্চিত নই। তবে নিশ্চিত ভাবেই অক্টোবরের ১৫ তারিখের আগে। ওখানটায় সে সুনির্দিষ্ট কারণ দেখায়নি। কাজেই ওর সঙ্গে কথা বলার আগ পর্যন্ত বলা মুশকিল কারণটা কি। সে করতে চায় না, সেটিই বলেছে। ও বলেছে ও আর আগ্রহী না।

    শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে আসা প্রস্তাবের প্রভাব....

    এক বছর আগেই শ্রীলঙ্কা থেকে তার প্রস্তাব ছিল। শ্রীলঙ্কার মহামান্য রাষ্ট্রপত ডেকে নিয়ে তাকে প্রস্তাব দিয়েছিল। অন্য জায়গা থেকেও তার প্রস্তাব ছিল, আমাকে দেখিয়েছে। এখন ওর সঙ্গে কথা বলার আগে বলা মুশকিল যে কেন চলে যাচ্ছে, আরও ভালো প্রস্তাব নাকি পারিবারিক কারণ বা অন্য কিছু তাকে ‘বদার’ করছে।
    খেলা চলাকালিন তার সঙ্গে এটা নিয়ে কথা বলিনি। শেষের পর যোগাযোগ করা হচ্ছে। প্রধান নির্বাহী চেষ্টা করছে। কিন্তু যোগাযোগ হচ্ছে না। কোনো সাড়া পাচ্ছে না ওখান থেকে।

    বিসিবি যেভাবে নিচ্ছে ব্যাপারটা…

    পেশাদারীত্বের ব্যাপার, আমরাও পেশাদার ভাবে নেব। কেউ থাকতে না চাইলে জোর করার প্রশ্নই আসে না। যেটা করা উচিত, সেভাবেই করব। কেন যেতে চাচ্ছে, সেটা জানতে চাইব।

    এরকম কিছু বুঝতে পেরেছিলেন কিনা….

    যখন গেল, তখন তো এরকম কোনো লক্ষণই ছিল না। সবকিছু খুব ভালো ছিল। হঠাৎ করে কেন তার মন বদলে গেল! ওখানে যাওয়ার পর প্রস্তাব পাওয়াটা তো অস্বাভাবিক। কিছু একটা হয়ত হয়েছে, যেটা তাকে ‘বদার’ করছে, আমি নিশ্চিত নই।

    কারণ দর্শাতে বলা হবে কিনা….

    নোটিশ পিরিয়ড আছে। তবে থেকে লাভ কি? যদি না-ই থাকে কেউ, তার নোটিশ পিরিয়ড দিয়ে কি করব? যতদূর দেখেছি, সে পেশাদার মানুষ। হঠাৎ করে কি হলো, সে একটি চিঠি দিয়ে অস্ট্রেলিয়া গিয়ে চুপচাপ বসে আছে। এরকম কিছু অস্বাভাবিক। সাধারণত কিছু হলে আমাদেরকে জানায়, কথা বলে। এবার কিন্তু এই সিরিজে সে যোগাযোগই করেনি, যেটা অস্বাভাবিক। হতে পারে, আবেগী হতে পারে। আবার পারিবারিক কারণও হতে পারে, জানি না।


    এর আগেও এমন চিঠি পেয়েছিলেন…
     
    একটি চিঠি দিয়েছে সে। এর আগেও একবার চিঠি দিয়েছিল সে, ভালো প্রস্তাব পেয়েছিল। আমরা যেতে দেইনি। এবারেরটি ভিন্ন, কোনো কারণ ছাড়া। কারণ ছাড়া হলে সাড়া দেওয়া কঠিন। আমাদের ভাবনা ছিল যে সিরিজটি শেষ হোক। সিরিজের মাঝে কথা বলা ঠিক নয়। আমাদের নির্বাচনসহ অনেক কিছু ছিল। সিরিজের পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে, একবার মাত্র পাওয়া গিয়েছিল ফোনে, তাকে আসতে বলা হয়েছিল। সে বলেছিল যে ১৫ তারিখের পরে আসবে। এখন যোগাযোগ করা হচ্ছে,কোনো সাড়া নেই।
     
    তার পক্ষ থেকে অপেশাদারিত্ব?….

    ওকে আমি যতটুকু চিনি, এরকম হওয়ার কথা নয়। ওর সঙ্গে বোর্ডে সবচেয়ে বেশি যোগাযোগ আমার সঙ্গেই ছিল। আমার এবং খালেদ মাহমুদ সুজনের সঙ্গে। কেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা না জেনে বলা কঠিন। আমি যেটা ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আমি ওর জায়গায় থাকলে এভাবেই চিন্তা করতাম। কোচিং ক্যারিয়ারটাকে তো পেশা হিসেবে নিয়েছে। বাংলাদেশে যত কথাবার্তা হয় প্রতিদিন ওকে নিয়ে, ও সেই বিতর্কে যেতে চাইবে কেন? অন্য কোনো দেশের কোচ নিয়ে তো হয় না! ও কেন নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করবে!
     

    সাম্প্রতিক ব্যাপারগুলোর প্রভাব….

    এখানে ব্যাপারটি আলাদা। অনেক ঘটনা আছে,যেখানে সবাই একরকম করে সাড়া দেবে না। যেমন কয়েকটি ঘটনায় আমি নিজে হস্তক্ষেপ করেছি। সম্পূর্ণ বানোয়াট লেখা হয়েছে, যেটা আমি পরিস্কার করেছি। সবসময় তো সম্ভব নয়। ক্রিকেটারদের মধ্যে থেকে আছে। সবাই নয়, দুয়েকজন এরকম কথা বলছে যেটা তাকে কষ্ট দিয়েছে। আমি জানি না কি হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিলাম না। এখন ও যদি মনে করে আমার কথা শুনছে না, তাহলে এই দল আমি চালাব কেন? একটি উদাহরণ দিলাম। তো ওর থেকে লাভ কি? এটা একটা কারণ হতে পারে। ব্যক্তিগত কারণও থাকতে পারে।
     
    বোর্ড প্রেসিডেন্টের হতাশা….

    হতাশ নই, একটু অবাক হচ্ছি। এটাতে মনে হচ্ছে, ‘ইমোশনাল ইস্যু’ আছে এখানে। এতদিন ওকে দেখেছি আবেগ ছাড়া। কিন্তু যেহেতু আমার সঙ্গেও কথা বলল না বা জানালো না, এবার হয়ত এমন কিছু একটা হয়েছে, যেটা নিয়ে আর কথাই বলতে চাচ্ছে না। বা হয়ত আমার মুখোমুখি হতে চাচ্ছে না।


    বোর্ডের জন্য ধাক্কা…

    জানি না। আপনারা ভালো বলতে পারবেন। অনেকে খুশি হবে। মিডিয়া তো প্রচুর খুশি হওয়ার কথা, ও চলে যাচ্ছে। ধাক্কা কিনা জানি না। ক্রিকেটারদেরও অনেকে খুশি হবে, অনেকে বলবে ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। তবে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি, আমাদের একটা পরিকল্পনা ছিল। সেটি বাধাগ্রস্থ হবে তো বটেই।
     

    মিডিয়ার ব্যাপারে হাথুরুসিংহে…

    না বলেনি তেমন কিছু। এমনিতে সবসময় বলত, খেলোয়াড়রা যেসব কথা বলে, সেগুলো কেন বলে? এই প্রশ্ন তো আমাকে সবসময় করত। আমি ওকে নিয়ে কয়েকবার খেলোয়াড়দের সামনেও বসেছি। এরকম কথা কেন বলে যেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা? মিডিয়াতে বলে, এসব বলে কেন? এসব তো মিথ্যা!
     
    বিসিবির পরবর্তী প্রক্রিয়া.. 

    ওর সঙ্গে কথা না বলে শুরু করিনি। আমার ধারণা, এই মাসেই যোগাযোগ হবে। কথা বলেই ঠিক করি। অনেক সময় ইমোশনাল হয়ে মানুষ চিঠি পাঠিয়ে দেয়। গ্রহণ করা না করার কিছু নেই। না করারও কিছু নেই। কেউ না চাইলে জোর করতে পারি না। ও উপভাগ করত। সবসয় খেলা নিয়েই ছিল। আমরাও খুশি হয়েছি। এখন তার যদি সেটি ভালো না লাগে, তাহলে থাকবে কেন? আর থাকতে চাইলে অবশ্যই থাকবে। ও থাকলে আরও কিছুদিন, ভালো হতো। দর কষাকষির জন্য এমন করছে না, আমি নিশ্চিত। টাকা পয়সার কোনো ইস্যু নয়।

     

    বিসিবির কাছেও বিনা মেঘে বজ্রপাত!….

    আমার মনে হয়, এই সিরিজে গিয়ে সে মনে কষ্ট পেয়েছে। কিসের জন্য আমি ঠিক জানি না। এটা কথা না বলা পর্যন্ত বলা মুশকিল।


    নতুন কোচের ব্যাপারে ভাবনা
     
    ও না থাকলে আরেকটা কোচ নিতে হবে। আর শুধু দুম করে নিলে তো হবে না। আরেকজনকে পেতে হবে। ভালো মানের পাওয়া যায় কিনা দেখতে হবে। বিদেশী কোনো যতক্ষণ না থাকে, ততক্ষণ তো স্থানীয় কোচ থাকতেই পারে। কিন্তু স্থানীয় কোনো কোচকে স্থায়ীভাবে রাখার সুযোগ নেই।