'বাংলাদেশকে আর কিছু দেওয়ার ছিল না হাথুরুর'
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, পরিচালক জালাল ইউনুস ও প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজনের সঙ্গে যখন হোটেল র্যাডিসনের লবিতে বেরিয়ে এলেন, সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে তার অনেক আগেই। নেমেই অবশ্য সৌজন্য হাসি হেসে এগিয়ে গেলেন লিফটের দিকে। অনুরোধ-উপরোধের পরও রাজি হলেন না কিছু বলতে। তবে হাথুরুসিংহে যা বলেননি, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তাঁর হয়েই অনেক কিছু বলেছেন। কোনো কথা না বলেই তাই এক অর্থে অনেক কথা বলে গেছেন হাথুরু।
শ্রীলঙ্কার কোচ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিয়েছেন কালই। তবে সংবাদমাধ্যমে যেমন এসেছে, ভারতের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়েই শুরু হাথুরুর নতুন অধ্যায়, তিনি সেটি ভুল বলেই জানিয়েছেন। অন্তত বিসিবি সভাপতির দাবি এমনটাই। তার মানে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিপক্ষ হিসেবেই শুরু হওয়ার কথা হাথুরুর শ্রীলঙ্কা-মিশন।
বিদায়ের কিছু আনুষ্ঠানিকতা সারতে আজ ঢাকায় আসছেন হাথুরু, সেটা কালই জানা গিয়েছিল। কিন্তু সকাল থেকে সংবাদমাধ্যমের অন্তহীন অপেক্ষার পরও তাঁর দেখা পাওয়া গেল না। বেলাশেষে সেটা পাওয়ার পরেও তাঁর মুখে কুলুপ। পরে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনই কিছুটা রেখেঢেকে হাথুরুর বিদায় নেওয়ার কারণ টা জানালেন।
অক্টোবরের শেষ দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ শেষে হাথুরুর বিদায়টা বিসিবির জন্য বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই হয়ে এসেছিল। নাজমুল হাসান বলেছিলেন, কী কারণে এই সিদ্ধান্ত তা তিনি জানেন না। আজ অবশ্য সেটি ব্যাখ্যা করেছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের পুরো পারফরম্যান্স, খেলা, মানসিকতা, সব নিয়েই অত্যন্ত হতাশ। সে নাকি চিন্তাই করতে পারে না। বাংলাদেশ এ ধরনের খেলা খেলতে পারে, তার ভাবনাতেই ছিল না।
এরপর নাজমুল হাসান যা বললেন, তাতে বোঝা গেল সিনিয়রদের কিছু সিদ্ধান্ত হাথুরু মেনে নিতে পারেননি, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে প্রথম থেকেই তার অসন্তুষ্টি অবশ্যই ছিল। ক্রিকেটারদের মানসিকতা নিয়েও তার সমস্যা ছিল। উদাহরণস্বরূপ, এই যে সাকিব খেলবে না, সাকিব যে যাবে না, এটা সে মেনে নিতে পারেনি। সে একটু আলাদা, আমাদের মত নয়। তার কথা হলো, “কেন খেলবে না! এত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দেশের জন্য কেন খেলবে না!”
এ রকম আরও কিছু ব্যাপার ছিল যেগুলো নিয়ে আমাদের কথা হতে পারত, সে সময় হয়নি। একটা দূরত্ব হয়ে গিয়েছিল। আরও কিছু ঘটনা ঘটেছিল। সব মিলিয়ে তার মনে হয়েছে, এই দলকে আমার আর কিছু দেওয়ার নেই। যা দেওয়ার ছিল, দিয়ে ফেলেছি। আমার এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত। সে ভেবেছে, আমার আর এখানে থাকার দরকার নেই। সে মনে করেছে, যেভাবে চলছে, এভাবে চললে বাংলাদেশ আর সামনে এগোবে না।’
তার মানে কি দলের ওপর হতাশা থেকেই এই সিদ্ধান্ত? নাজমুল হাসান অবশ্য সরাসরি তা মানতে চাইলেন না, ‘দলের ওপর হতাশা নেই। বরং অনেক প্রশংসা করেছে। কিন্তু এই দলকে সামনে নিতে গেলে কি কি বাধার সম্মুখীন সে হয়েছে এবং সামনে আমরা হব, সেগুলো সে জানিয়ে গেছে। বলেছে এগুলো আমরা সরাতে পারলে দলের জন্য ভালো। তবে সে এটাও বলেছে, এই সমস্যা সব জায়গায়ই থাকে। আহামরি এমন কিছু নয়।
খেলোয়াড়ের সঙ্গে একটা কোচের দ্বিমত থাকতে পারে, রাগ করতে পারে। এটা বড় কিছু নয়। তবে মানসিকতার ওপর জোর দিয়ে গেছে। একটা কথা বলেছে, যত বড় ক্রিকেটারই হোক না কেন, তার চেয়ে দেশ বড়। ব্যক্তিগত সমস্যা থাকতে পারে একজনের সঙ্গে, এটার জন্য দেশের ক্ষতি করা যাবে না। এটা যেন প্রতিটি ক্রিকেটারের কাছে আমরা পৌঁছাতে পারি, সেটা বলেছে।’
হাথুরুর বিদায় নিশ্চিত হওয়ার সময়ই নাজমুল হাসান বলেছিলেন, তাঁর যাওয়ার আগে একটা রিপোর্ট দিয়ে যাওয়ার কথা। সেই প্রতিবেদনে কী আছে, তারও কিছু আভাস দিলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কিছু কথা বলেছে যেগুলো সে মনে করে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের করণীয়। একটা পর্যায়ে আমরা এসেছি। এর পরের ধাপে যদি যেতে চাই, তাহলে কি কি করা উচিত, কি প্রতিবন্ধকতা আছে, এগুলো দূর করা বা দেখা উচিত। এমনও কথা হয়েছে, কোনো ক্রিকেটারকে নিয়ে যদি কথা ওঠে; সে বলেছে, এই ক্রিকেটারকে ১০ বছর ধরে তোমরা সাপোর্ট দিয়েছে, সেও তোমাদেরকে অনেক কিছু দিয়েছে। কাজেই ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তো সুরাহা হচ্ছে না। ওর কাছ থেকে সেরাটা নিতে হবে। উদাহরণ হিসেবে এটা বললাম। কোথায় মানসিকতার কি সমস্যা আছে, সেটা উতরাতে পারলে সে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।’
হাথুরুকে সামনের পথচলার জন্য শুভকামনাও জানিয়েছেন নাজমুল হাসান, তাও জানিয়েছেন, ‘দেশেই ক্রিকেটারদের সমস্যা আছে। সেগুলো থাকবেই। আমাদের সে অবহিত করেছে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নয়। বলেছে, জেনে রাখা ভালো। আমি তাকে শুভকামনা জানিয়েছি। সেও আমাকে বলেছে যে, এখানে যে সমর্থন পেয়েছে, সেটা আগে পায়নি। ভবিষ্যতে পাবে কিনা, সেটিও নিশ্চিত নয়।’
নিয়তির কী পরিহাস, সামনের মাসেই শ্রীলঙ্কা সফরে হাথুরু আসছেন প্রতিপক্ষ হিসেবে। এমন শুভকামনা নিশ্চয় জানাতে চাননি নাজমুল হাসান!