আল জাজিরাকে হারাতেই ঘাম ছুটে গেল রিয়ালের
ম্যাচের বাকি তখন ১০ মিনিট। এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন আল জাজিরার বিপক্ষে ১-১ গোলের সমতায় তখন ইউরপিয়ান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ। গোলের আশায় ততক্ষণে মার্কো আসেন্সিও, লুকাস ভাজকেজদের মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন জিনেদিন জিদান। লাভ হচ্ছিল না তাতেও। শেষমেশ স্ট্রাইকার করিম বেনজেমার বদলি হিসেবে নামলেন তিনি। মিনিটখানেকের মধ্যেই রিয়ালকে এনে দিলেন জয়সূচক গোল! আরও একটি ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেই যেন নিজের সামর্থ্যের জানান দিলেন গ্যারেথ বেল। ওয়েলশ তারকার গোলে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে আল জাজিরাকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠে গেল রিয়াল। রিয়ালের হয়ে অন্য গোলটি করেছেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ, অবিশ্বাস্য গোলকিপিং, বিতর্কিত সিদ্ধান্ত- ক্লাব বিশ্বকাপ ২০১৭-এর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অভাব ছিল না কোনটিরই। ম্যাচের শুরু থেকেই আল জাজিরার রক্ষণভাগকে রীতিমত তটস্থ করে রেখেছেন রোনালদো-বেনজেমারা। কিন্তু লিডটা আর নিতে পারেনি ‘লস ব্লাঙ্কোস’রা। এর মূল কারণ আল জাজিরার গোলরক্ষক আলি কাশিফের বীরত্ব। অসাধারণ গোলকিপিং দিয়ে একাধিকবার হতাশ করে রেখেছেন জিদানের দলকে। ম্যাচের প্রথম ২০ মিনিটেই ফিরিয়ে দিয়েছেন রোনালদো, বেনজেমা, লুকা মদ্রিচ এবং ইস্কোর নিশ্চিত ৪টি গোল। প্রথমার্ধের বাকিটা সময় শত চেষ্টা করেও কাশিফ দুর্গ ভেদ করতে পারেনি ইউরোপের চ্যাম্পিয়নরা।
অবশ্য এক্ষেত্রে ভাগ্য এবং রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তকে দুষতেই পারেন জিদান। ২৩ মিনিটে ইস্কোর ক্রসে হেড করে বল আল আজিরার জালে জড়ান বেনজেমা। কিন্তু ইস্কোর ক্রস ক্লিয়ার করতে লাফিয়ে ওঠা ডিফেন্ডারকে রোনালদো ধাক্কা দেওয়ায় গোল বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন রেফারী। ম্যাচের ২৯ মিনিটে আসে সবচেয়ে বিতর্কিত মূহূর্ত। বাঁ-প্রান্ত থেকে মার্সেলোর ক্রসে কাসেমিরোর হেড জাজিরার জালে জড়ালে অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি। কিন্তু পরক্ষণেই আবার লাইন্সম্যানের সাথে কথা বলে গোলের বাঁশি বাজান তিনি। নাটকের সমাপ্তি হয়নি তখনও! আল জাজিরার খেলোয়াড়দের প্রতিবাদে ভিডিও রেফারির সাহায্য নেন। একাধিক রিপ্লে দেখার পর কাসেমিরোর গোল বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন ভিডিও রেফারি। রিয়ালের সুযোগ হাতছাড়ার মাঝে প্রতি আক্রমণে সবাইকে অবাক করে লিডটাও নিয়ে নেয় আল জাজিরা। ৪১ মিনিটে রিয়ালের রক্ষণভাগের ভুলে নিজ দলকে লিড এনে দেন রোমারিনহো।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আবারও আরেক বিতর্কিত অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি। প্রতি আক্রমণে মাবখুতের পাস থেকে বুসাফা, কেইলর নাভাসকে পরাস্ত করলেও কাসেমিরোর মতই বাতিল হয় গোলটি। ম্যাচের ৫১ মিনিটে ইনজুরিতে পড়ায় উঠে যেতে হয় কাশিফকে। আল জাজিরার দুর্ভেদ্য দেয়ালের প্রস্থানের মাত্র মিনিট দুয়েক পরই সমতায় ফেরে রিয়াল। মদ্রিচের থ্রু পাস থেকে বদলি গোলরক্ষক আল-সেনানীকে পরাস্ত করেন রোনালদো। রিয়ালকে লিড এনে দেওয়ার দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন বেনজেমা। ৬২ মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধে ভাগ্যদেবী একবারও মুখ তুলে তাকাননি এই ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকারের দিকে। দ্বিতীয়ার্ধে কেবল বেনজেমারই তিনটি শট প্রতিহত হয়েছে বারে। গোলের আশায় ৮০ মিনিটে তাকে উঠিয়ে বেলকে নামান জিদান।
মাঠে নামার মিনিটখানেকের মধ্যেই রিয়ালকে এগিয়ে নেন বেল। ৮১ মিনিটে ভাজকেজের ক্রসে বাঁ-পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ওয়েলশ তারকা। গোলের পরই সতীর্থদের উদযাপনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন তিনি। সপ্তাহ তিনেক পর ফিরেই যেন নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়ে রাখলেন সাবেক সবচেয়ে দামি এই ফুটবলার। ম্যাচের বাকিটা সময় তেমন সুযোগ তৈরি করতে না পারায় মহাকাব্যিক স্বপ্নটা আর সত্যি হতে পারেনি আল জাজিরার। আগামী ১৬ ডিসেম্বর ব্রাজিলিয়ান ক্লাব গ্রেমিও-র বিপক্ষে ফাইনাল খেলবে রিয়াল।