• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    ভালবাসা দিবসে লিভারপুলের গোলবৃষ্টিতে সিক্ত পোর্তো

    ভালবাসা দিবসে লিভারপুলের গোলবৃষ্টিতে সিক্ত পোর্তো    

    বাঁধ ভাঙতে নাকি প্রয়োজন শুধু একটা ছিদ্র। এস্তাদিও দো দ্রাগোর বৃষ্টিস্নাত রাতে লিভারপুলের গোলবন্যার পানিকে সে ছিদ্রটা করে দিলেন পোর্তো গোলরক্ষক হোসে সা। তার ভুলে প্রথম গোল পাওয়া লিভারপুল করলো একে একে পাঁচটি গোল, শেষ গোলের পর হয়তো সবাই শুধু দেখলেন গোলবন্যাই, ভুলে গেলেন সেই ছিদ্রের কথা! সাদিও মানের হ্যাটট্রিকের সঙ্গে মোহাম্মদ সালাহ ও রবার্তো ফিরমিনোর গোলে ভালবাসা দিবসে পোর্তোকে তাদের ঘরের মাঠেই গোলবৃষ্টিতে সিক্ত করেছে লিভারপুল। অ্যানফিল্ডে পরের লেগটা তাই অলিখিতভাবে শুধুই নিয়মরক্ষার! 

    ম্যাচের শুরুর দশ মিনিটই ছিল পোর্তের। লিভারপুলকে আটকে রেখেছিলেন তারা, চেপেও ধরেছিলেন প্রায়। ১০ মিনিটে বিপজ্জনক জায়গায় বল পেয়েছিলেন ওটাভিও, অল্প জায়গা পেয়েই করেছিলেন শট। তবে সেটা ডিফেন্ডার লোভরেনের পায়ে লেগে চলে গেছে ক্রসবারের ওপর দিয়ে। সেই সঙ্গে হয়তো ম্যাচের সুযোগটাও বেরিয়ে গিয়েছিল তাদের!  

    ২৫ মিনিটে সেই ভুলটা করলেন সা, যার অজুহাত হিসেবে বৃষ্টিকেও দেখাতে পারবেন না তিনি! বাঁদিকে বল পেয়েছিলেন মানে, লক্ষ্য ছিল ডানদিকের নিচের কর্নার। মারলেন সোজা সার কাছে, শরীরের নীচ দিয়ে সেটা জালে যেতে দিলেন ২৫ বছর বয়সী গোলকিপার। বেঞ্চে বসে ইকার ক্যাসিয়াস দিলেন কাষ্ঠ এক অভিব্যক্তি, তাকে রেখে পোর্তো ম্যানেজার যে নামাচ্ছেন সাকেই। ২৫ মিনিটে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাওয়ে গোল পেয়েই কিনা, লিভারপুল করে বসলো চার মিনিটের মাথায় দুই নম্বর গোলটাও। 

    এবার নিজের স্নায়ু ধরে রাখলেন লিভারপুলের ‘আধুনিক কিংবদন্তি’ মোহাম্মদ সালাহ। বাঁদিক থেকে মিলনারের শক্তিশালি শট ঘুরে এলো পোস্টে লেগে, ঠিক সালাহর কাছে। ফ্লিক করলেন, হেড করে নিজের কাছে নিলেন, বল পাঠালেন গোলে- খুব সহজেই! লিভারপুলের হয়ে এ মৌসুমে তার ৩০টি গোল হয়ে গেল, এর আগে যে কীর্তি আছে মাত্র ১২ জনের। 

    দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই প্রথমার্ধে নিজেদের সেরা খেলোয়াড় ব্রাহিমিকে ছাড়াই নামতে হলো পোর্তোকে। আর ৮ মিনিট যেতে না যেতেই দেখা গেল প্রতি-আক্রমণে দুর্দান্ত লিভারপুলকে। সালাহ বাড়ালেন ফিরমিনোকে, তার শট ঠেকালেন বটে সা, তবে ধরতে পারলেন না। মানে ছিলেন দৌড়েই, তার শটের জবাব দিতে পারলেন না সা। লিভারপুল পেল তৃতীয় গোল, মানে পেলেন দ্বিতীয়।

    ৭০ মিনিটে ফারমিনো করলেন রাতে নিজের প্রথম গোল। মিলনারের পাস বাঁদিকের পোস্টের ভেতরে রাখলেন সহজেই। ম্যাচের আগে বলেছিলেন, পোর্তোকে ভোগাবেন তিনি! পোর্তো কী ভোগান্তিরই না শিকার হলো! 

    বাকি ছিল শুধু মানের হ্যাটট্রিক। ৮৩ মিনিটে একটা সুযোগ মিস করলেন, ৮৫ মিনিটে পুষিয়ে দিলেন সেটা। রবার্টসন ও চ্যাম্পিয়নস লিগে লিভারপুলের হয়ে প্রথম খেলতে নামা ইংস মিলিয়ে বাঁদিক থেকে বল পাঠিয়েছিলেন মাঝে, যেটা পেলেন মানে। ডানদিকে গোমেজ ছিলেন, তবে মানে যেন পেলেন দুনিয়ার সব জায়গা, সব সময়! বক্সের বাইরে থেকেই করলেন শট। সা এবার সুযোগই পেলেন না! পুরো রাতের প্রতীকি চিত্রই এটা। যে সার ভুলের সুযোগে লিভারপুলকে এগিয়ে নিয়েছিলেন মানে, শেষে গিয়ে সেই সাকেই সুযোগ দিলেন না তিনি!১৯৮৪ সালের পর এই প্রথম ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় পর্তুগালে এসে জিতলো লিভারপুল। 

     পোর্তো সমর্থকরা ততক্ষণে ছেড়ে গেছেন স্টেডিয়াম, বাতাশে শুধু বৃষ্টি আর লিভারপুল সমর্থকদের কোরাস- ‘ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন’।

    পর্তুগাল থেকে অ্যানফিল্ডে লিভারপুল একাই যাবে না, সেটা নিশ্চিত। তাদের সঙ্গে যাবে পাঁচ গোল। ভালবাসা দিবসে এর চেয়ে বেশি আর কিইবা চাওয়ার ছিল তাদের!